ঢাকা ১১:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাবেক সেনা সার্জেন্ট-দম্পতির বিরুদ্ধে ৬ বছরের গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ

টঙ্গীর ডিআইটি টাওয়ারে ১৫ বছর বয়সী গৃহকর্মী রানীকে ছয় বছর ধরে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগে সাবেক সেনা সার্জেন্ট সর্দার জহিরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী রেশমা খাতুনকে রোববার (৬ জুলাই) বিকেল তিনটার দিকে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ আটক করলেও, , রাতেই ‘অদৃশ্য শক্তি’তে মুক্তি তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে তীব্র জনরোষ ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, মাদকাসক্ত বাবার কাছ থেকে রানীকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন জহিরুল দম্পতি। রানী জানান, ছোটখাটো ভুল বা তুচ্ছ ঘটনায়ও নিয়মিত মারধরের শিকার হতেন তিনি। গতকাল বিকেলে নির্যাতনের মাত্রা চরমে পৌঁছালে পাশের একটি ফ্ল্যাটে আশ্রয় নিয়ে তিনি বিষয়টি প্রকাশ করেন। পরে তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাস্টের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নেয়ামতুল্লাহ শাকের বিষয়টি গণমাধ্যম ও পুলিশকে জানান। পুলিশ এসে অভিযুক্ত দম্পতিকে আটক করে থানায় নেয় এবং রানীকে শহীদ আহসানউল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়।

তবে ঘটনার পর একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে রাতেই ‘উর্ধ্বতন চাপ’ বা ‘অদৃশ্য শক্তি’র প্রভাবে জহিরুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাঁর স্ত্রী রেশমাকেও সোমবার (৭ জুলাই) সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নেয়ামতুল্লাহ শাকের বলেন, ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অপরাধীকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা হতাশ। দেশের আইনে এমন বৈষম্য কেন? একজন অসহায় গৃহকর্মী নির্যাতনের বিচার পেল না কেন? সংবাদ প্রকাশের পরও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নীরবতা উদ্বেগজনক।’

এলাকার বাসিন্দা আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘এইভাবে যদি ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে দেশে সুশাসন কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে?’

এ বিষয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান জানান, ‘গৃহকর্মীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।’ তবে কেন আটককৃতদের যথাযথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ না করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

গাজীপুর জেলা জজকোর্টের আইনজীবী শাহিন মোল্লা বলেন, ‘যদি থানার আওতায় এমন কোনো ঘটনা ঘটে যেখানে ভিকটিম নাবালিকা এবং নির্যাতনের প্রমাণ থাকে, তাহলে পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা নিতে পারে। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ হওয়ায় অভিযোগ না থাকলেও ব্যবস্থা না নেওয়া দায়িত্বহীনতা।’

এ ঘটনায় এলাকাবাসী নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের জবাবদিহি দাবি করেছে। তাঁরা বলেন, এই ধরনের ঘটনায় দ্রুত বিচার না হলে গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা এবং দেশের আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গোবিপ্রবিতে ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

সাবেক সেনা সার্জেন্ট-দম্পতির বিরুদ্ধে ৬ বছরের গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ

আপডেট সময় ০৭:২৯:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

টঙ্গীর ডিআইটি টাওয়ারে ১৫ বছর বয়সী গৃহকর্মী রানীকে ছয় বছর ধরে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগে সাবেক সেনা সার্জেন্ট সর্দার জহিরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী রেশমা খাতুনকে রোববার (৬ জুলাই) বিকেল তিনটার দিকে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ আটক করলেও, , রাতেই ‘অদৃশ্য শক্তি’তে মুক্তি তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে তীব্র জনরোষ ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, মাদকাসক্ত বাবার কাছ থেকে রানীকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন জহিরুল দম্পতি। রানী জানান, ছোটখাটো ভুল বা তুচ্ছ ঘটনায়ও নিয়মিত মারধরের শিকার হতেন তিনি। গতকাল বিকেলে নির্যাতনের মাত্রা চরমে পৌঁছালে পাশের একটি ফ্ল্যাটে আশ্রয় নিয়ে তিনি বিষয়টি প্রকাশ করেন। পরে তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাস্টের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নেয়ামতুল্লাহ শাকের বিষয়টি গণমাধ্যম ও পুলিশকে জানান। পুলিশ এসে অভিযুক্ত দম্পতিকে আটক করে থানায় নেয় এবং রানীকে শহীদ আহসানউল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়।

তবে ঘটনার পর একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে রাতেই ‘উর্ধ্বতন চাপ’ বা ‘অদৃশ্য শক্তি’র প্রভাবে জহিরুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাঁর স্ত্রী রেশমাকেও সোমবার (৭ জুলাই) সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নেয়ামতুল্লাহ শাকের বলেন, ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অপরাধীকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা হতাশ। দেশের আইনে এমন বৈষম্য কেন? একজন অসহায় গৃহকর্মী নির্যাতনের বিচার পেল না কেন? সংবাদ প্রকাশের পরও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নীরবতা উদ্বেগজনক।’

এলাকার বাসিন্দা আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘এইভাবে যদি ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে দেশে সুশাসন কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে?’

এ বিষয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান জানান, ‘গৃহকর্মীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।’ তবে কেন আটককৃতদের যথাযথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ না করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

গাজীপুর জেলা জজকোর্টের আইনজীবী শাহিন মোল্লা বলেন, ‘যদি থানার আওতায় এমন কোনো ঘটনা ঘটে যেখানে ভিকটিম নাবালিকা এবং নির্যাতনের প্রমাণ থাকে, তাহলে পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা নিতে পারে। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ হওয়ায় অভিযোগ না থাকলেও ব্যবস্থা না নেওয়া দায়িত্বহীনতা।’

এ ঘটনায় এলাকাবাসী নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের জবাবদিহি দাবি করেছে। তাঁরা বলেন, এই ধরনের ঘটনায় দ্রুত বিচার না হলে গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা এবং দেশের আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।