১৩ মে নিয়োগ হওয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনো শিক্ষার্থীদের চোখে ‘মৃত’ হিসেবে বিবেচিত প্রক্টর ড. সোনিয়া খান সনিকে স্বপদে বহাল রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা ও জিডি করে হয়রানির প্রতিবাদে এবং চার দফা দাবি আদায়ে গত ৩০ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা প্রতীকী কফিন মিছিল ও গায়েবানা জানাজা পড়ে প্রক্টরকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেছিল। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির পরও উপাচার্যের কালক্ষেপণ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ বলেন, “উপাচার্য স্যার নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে একাধিকবার তার কাছে ফ্যাসিবাদের পদলেহন ও জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতাকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সকল লাভজনক পদ থেকে অপসারণ করার দাবি জানিয়ে আসছি। বিশেষ করে আমাদের চোখে মৃত প্রক্টর সোনিয়া খান সনিকে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, উপাচার্য তাদের কথায় কর্ণপাত করছেন না এবং বারবার সময় নিচ্ছেন। মোকাব্বেল শেখের মতে, দীর্ঘ দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও উপাচার্যের এই সৎসাহসের অভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বড় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে। তিনি আশা করেন, উপাচার্য শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন।
সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মোস্তাকিম মিয়া বলেন, “বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন বিগত ফ্যাসিস্ট ও অনিয়মতান্ত্রক উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে ন্যায্য আন্দোলনে শামিল হয়েছিল, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নির্লিপ্ত আচরণ শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছিল। বিশেষ করে তৎকালীন প্রক্টরের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ।” তিনি উল্লেখ করেন, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা শতবার ফোন করেও প্রক্টরকে পাননি, অথচ অনেক শিক্ষক নৈতিক অবস্থান নিয়ে পদত্যাগ করলেও তিনি অনিয়মে অভিযুক্ত উপাচার্যকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। মোস্তাকিম মিয়া আরো বলেন, নতুন উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হলেও প্রশ্নবিদ্ধ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রক্টরকে স্বপদে বহাল রাখা অত্যন্ত হতাশাজনক। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন দায়িত্বশীল, নিরপেক্ষ ও ছাত্রবান্ধব ব্যক্তিকে দেখতে চায়।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম বলেন, “আমি নতুন এসেছি বিধায় কাউকে তেমন জানিনা এজন্য প্রক্টর বাছাই করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। আপনারা আমার জায়গায় এসে চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন আমার অবস্থা।” তিনি আরও জানান যে, শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে তারা গ্রহণ করবে এবং তাকেই খুব দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে, ‘তার নিয়োগের পর দেড় মাস কি পর্যাপ্ত সময় নয়’ – এই প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য কোনো স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি।