বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একদল শিক্ষার্থীর হামলায় অন্তত ছয়জন সাধারণ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। সোমবার দুপুরে কলেজ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় একটি লিখিত এজাহার দাখিল করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে। কলেজ ছাত্রদল নেতা আমিনুল ইসলাম ও তার এক সময়ের বন্ধু হুসাইন নামের ছাত্রের মধ্যে রাজনৈতিক মতবিরোধ দেখা দেয়। হুসাইন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে একটি সমালোচনামূলক পোস্ট দিলে, আমিনুল ধারণা করেন এটি ছাত্রশিবিরের প্ররোচনায় করা হয়েছে। এর জের ধরেই একাধিক সাধারণ ছাত্রকে শিবির সন্দেহে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আল ইমরান রিফাতকে কলেজে প্রবেশের পরপরই একদল শিক্ষার্থী ঘিরে ফেলে এবং তাকে শিবির পরিচয়ে ট্যাগ দিয়ে প্রকাশ্যে মারধর শুরু করে। কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের সামনেই এই হামলা ঘটে। রিফাতকে রক্ষা করতে এলে আরও পাঁচজন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হন। আহতরা হলেন: সোলাইমান গাজি, আরিফুল ইসলাম, সাইফুল্লাহ মানসুর, জিহাদ হোসেন এবং জাহাঙ্গীর আলম।
হামলার ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তারা হলেন: আমিনুল ইসলাম (২৬), আবির হোসেন (২৯), শরীফুল ইসলাম (২৮), মারুফ হোসেন (৩২), অঙ্কন দাস (২৫), জহিরুল ইসলাম রিজভী (৩০) এবং মেহেদী হাসান মুন (২৪)। এদের সবাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
আহত রিফাত বলেন, “আমি ক্লাস করার জন্য কলেজে গিয়েছিলাম। ছাত্রদলের নামধারী একটি গ্রুপ আমাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হামলা চালায়। আমার সহপাঠীরা আমাকে বাঁচাতে এলে তাদেরও উপরও হামলা করা হয়।। গতকালও এক শিক্ষার্থীকে তিন তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে টেনে নিচে নামানো হয়। আমরা কলেজে নিরাপদ নই।”
কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “গতকাল ফেসবুক পোস্ট নিয়ে দুজন ছাত্রের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয়। একজন ছাত্রকে টেনে নিচে নামিয়ে আনা হয়—যা আমি শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনেছি। পরে আমরা বিষয়টি মীমাংসা করি, অভিযুক্তরা ক্ষমাও চায়। কিন্তু আজকে আবারও ছাত্রদের একটি গ্রুপ অন্য একটি গ্রুপের উপর আক্রমণ চালিয়েছে—এটিও আমি শুনেছি।”
ওয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, “ঘটনার অভিযোগ পেয়ে আমরা কলেজে যাই, তাদের সঙ্গে বসি। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে হামলাকারীদের ছাত্রদলের সদস্য বলা হলেও আমরা এখনো বিষয়টি যাচাই করছি। তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঘটনার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরে একটি গোষ্ঠী কলেজে দাপট চালাচ্ছে এবং বিরোধিতা করলেই তাদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। তারা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছে।