ঢাকা ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় লক্ষ্মীপুরের ভুলুয়া নদী

লক্ষ্মীপুরের এক সময়ের প্রমত্তা ভুলুয়া নদী এখন প্রায় মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। দখল, দূষণে ভরাট ও পলি জমে নদীটি প্রকৃত রূপ হারিয়েছে। একইসঙ্গে দখলদারদের দৌরাত্ম্যে দিন দিন নদীটির পরিধি কমে আসছে। ফলে জেলার ঐতিহ্যর অন্যতম অধ্যায় ভুলুয়া নদী বর্তমানে প্রকৃত বৈশিষ্ট্যচ্যুত হয়ে অতীত ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে।

এতে একদিকে যেমনি এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা, কৃষ্টি-সভ্যতা, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির মূল ভিত্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। অন্যদিকে নদীকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা নদীটি দখল দূষণের কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার একটি নদী হচ্ছে ভুলুয়া। নদীটির দৈর্ঘ্য ৭১ কিলোমিটার, প্রস্থ ৮৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে এ নদী। এক সময়ে এ নদীতে উত্তাল ঢেউয়ে প্রবাহমান ছিল পানি। নদীর আশে পাশের লাখো মানুষ কৃষি উৎপাদনসহ নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করতো নদীর পানি। বড় বড় সাম্পান নৌকা, জাহাজ চলাচল করতো এ নদীতে। বহু জাতের প্রাকৃতিক মাছের সমাহার ছিল।

বর্তমানে নদীটির বিভিন্ন স্থানে কিছু অসাধু প্রভাবশালী দখল করে মাঝখানে বাঁধ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করে আসছে। কেউ কেউ নদীর তীর ঘেষে ঘরবাড়ি তুলে দখল করে রেখেছে। বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা ফেলে দূষণ করছে নদীর পানি। এতে করে নদীটি ভরাট ও পলি জমে জমে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে শুকিয়ে গেছে নদী। এখন প্রায় মৃত হয়ে পড়েছে এ নদীটি।

কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চর কাদিরা গ্রামে ও রামগতির ছেউয়াখালি এলাকায় ভলুয়া নদীতে গিয়ে দেখা গেছে নদীর এমন চিত্র। এ এলাকায় নদীর উপরে নির্মাণ করা ব্রিজ দেখে মনে হচ্ছে যেন খোলা মাঠের উপরে নির্মাণ করা হয়েছে ব্রিজটি। মাছ ধরার নৌকা দেখে মনে হচ্ছে কোনো এক চরে যেন আটকা পড়ে আছে নৌকাগুলো।

এলাকাবাসী বলছেন, আগে নদীর পানি দিয়ে ইরি বোরো ধান চাষ হতো এসব এলাকায়। অনেকে কৃষিসহ নানা কাজে ব্যবহার করতো নদীর পানি। এখন পানি না থাকায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। আগে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো এ নদীতে। এখন আর সেসব মাছ পাওয়া যায় না বলে জানান তারা। এতে নদীকেন্দ্রিক জীব বৈচিত্র্য চরম হুমকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

এদিকে স্থানীয় ইটভাটা মালিকরা তাদের পরিবহনের স্বার্থে চরকাদিরা এলাকায় নদীর উপর একাধিক কাঁচা সড়ক নির্মাণ করে অবরুদ্ধ রেখেছেন নদীটি।

স্থানীয় সমাজ চিন্তাবিদ ও নদী গবেষক সানা উল্লাহ সানু জানান, ১৯১২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত উম্মত্তা নদী ছিল ভুলুয়া। এর পর থেকে দখল দূষণ ও পলী জমে নদীটি তার স্বরুপ হারিয়ে ফেলেছে। নদীটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন নদীটি খনন করে তার স্বরুপ ফিরিয়ে দিলে এ অঞ্চলের ৩০ হাজার কৃষকসহ লাখো মানুষ এর সুফল ভোগ করবেন।

এদিকে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, নদীটি দখল দূষণের কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী নদী দখলমুক্ত ও খনন করতে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

ট্যাগস :

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় লক্ষ্মীপুরের ভুলুয়া নদী

আপডেট সময় ০৩:২৭:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

লক্ষ্মীপুরের এক সময়ের প্রমত্তা ভুলুয়া নদী এখন প্রায় মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। দখল, দূষণে ভরাট ও পলি জমে নদীটি প্রকৃত রূপ হারিয়েছে। একইসঙ্গে দখলদারদের দৌরাত্ম্যে দিন দিন নদীটির পরিধি কমে আসছে। ফলে জেলার ঐতিহ্যর অন্যতম অধ্যায় ভুলুয়া নদী বর্তমানে প্রকৃত বৈশিষ্ট্যচ্যুত হয়ে অতীত ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে।

এতে একদিকে যেমনি এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা, কৃষ্টি-সভ্যতা, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির মূল ভিত্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। অন্যদিকে নদীকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা নদীটি দখল দূষণের কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার একটি নদী হচ্ছে ভুলুয়া। নদীটির দৈর্ঘ্য ৭১ কিলোমিটার, প্রস্থ ৮৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে এ নদী। এক সময়ে এ নদীতে উত্তাল ঢেউয়ে প্রবাহমান ছিল পানি। নদীর আশে পাশের লাখো মানুষ কৃষি উৎপাদনসহ নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করতো নদীর পানি। বড় বড় সাম্পান নৌকা, জাহাজ চলাচল করতো এ নদীতে। বহু জাতের প্রাকৃতিক মাছের সমাহার ছিল।

বর্তমানে নদীটির বিভিন্ন স্থানে কিছু অসাধু প্রভাবশালী দখল করে মাঝখানে বাঁধ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করে আসছে। কেউ কেউ নদীর তীর ঘেষে ঘরবাড়ি তুলে দখল করে রেখেছে। বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা ফেলে দূষণ করছে নদীর পানি। এতে করে নদীটি ভরাট ও পলি জমে জমে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে শুকিয়ে গেছে নদী। এখন প্রায় মৃত হয়ে পড়েছে এ নদীটি।

কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চর কাদিরা গ্রামে ও রামগতির ছেউয়াখালি এলাকায় ভলুয়া নদীতে গিয়ে দেখা গেছে নদীর এমন চিত্র। এ এলাকায় নদীর উপরে নির্মাণ করা ব্রিজ দেখে মনে হচ্ছে যেন খোলা মাঠের উপরে নির্মাণ করা হয়েছে ব্রিজটি। মাছ ধরার নৌকা দেখে মনে হচ্ছে কোনো এক চরে যেন আটকা পড়ে আছে নৌকাগুলো।

এলাকাবাসী বলছেন, আগে নদীর পানি দিয়ে ইরি বোরো ধান চাষ হতো এসব এলাকায়। অনেকে কৃষিসহ নানা কাজে ব্যবহার করতো নদীর পানি। এখন পানি না থাকায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। আগে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো এ নদীতে। এখন আর সেসব মাছ পাওয়া যায় না বলে জানান তারা। এতে নদীকেন্দ্রিক জীব বৈচিত্র্য চরম হুমকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

এদিকে স্থানীয় ইটভাটা মালিকরা তাদের পরিবহনের স্বার্থে চরকাদিরা এলাকায় নদীর উপর একাধিক কাঁচা সড়ক নির্মাণ করে অবরুদ্ধ রেখেছেন নদীটি।

স্থানীয় সমাজ চিন্তাবিদ ও নদী গবেষক সানা উল্লাহ সানু জানান, ১৯১২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত উম্মত্তা নদী ছিল ভুলুয়া। এর পর থেকে দখল দূষণ ও পলী জমে নদীটি তার স্বরুপ হারিয়ে ফেলেছে। নদীটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন নদীটি খনন করে তার স্বরুপ ফিরিয়ে দিলে এ অঞ্চলের ৩০ হাজার কৃষকসহ লাখো মানুষ এর সুফল ভোগ করবেন।

এদিকে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, নদীটি দখল দূষণের কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী নদী দখলমুক্ত ও খনন করতে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।