দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পঞ্চগড়ে বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল ও ছাত্রদলের মশালমিছিল থেকে শ্রমিক লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে শ্রমিক লীগের আটজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহতরা পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসর জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে সাতটার দিকে পঞ্চগড় জেলা শহরের ইসলামবাগ এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে (রহমানিয়া হোটেলের সামনে) এ ঘটনা ঘটে। তবে যুবদল নেতাদের দাবি, তাঁরা হামলা চালাননি। শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা মিছিলের ওপর ইটপাটকেল ছুড়লে তাঁদেরও কিছু নেতা-কর্মী পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়ে সেখান থেকে চলে যান।
হাসপাতালে ভর্তি আহত ব্যক্তিরা হলেন, পঞ্চগড় জেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান আলী (৩৮), সদর উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন (৩৮), সহসভাপতি আশরাফুজ্জান রতন (৪২), মাগুরা ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. রাজু (৩৪), সাতমেড়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি জুয়েল ইসলাম (৩২), সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আলাল হোসেন (৩২), গরিনাবাড়ি ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি বজলার রহমান (৪২) ও কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সদস্য শাহ আলম (৩৫)। তাঁদের মধ্যে জুয়েল ইসলামকে রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত নেতা-কর্মীরা জানান , গতকাল সন্ধ্যার পর যুবদল-ছাত্রদলের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে মশাল জ্বালিয়ে মিছিল বের করে। একই সময় তফসিল ঘোষণা উপলক্ষে আনন্দমিছিল বের করার জন্য শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে জড়ো হচ্ছিলেন। মশালমিছিল থেকে বিক্ষোভাকারীরা তাঁদের সামনে পড়া কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের চেষ্টা করলে শ্রমিক লীগ নেতা-কর্মীরা এগিয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা তাঁদের ওপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। এরই মধ্যে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত হলে সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ ঘটনার পরপরই জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে একটি মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের টহল বেড়ে যায়। মুহূর্তেই পঞ্চগড় বাজারের অধিকাংশ দোকান পাঠ বন্ধ হয়ে যায়। পরে শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড় ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। রাতেই পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নেতা-কর্মীদের দেখতে যান এবং আর্থিক সহায়তা করেন।
এ ঘটনায় শ্রমিক লীগের পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান ২৪ জনে নাম উল্লেখ করে ৮০ থেকে ৯০ জনের বিরুদ্ধে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে।
পঞ্চগড় জেলা যুবদলের সভাপতি ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল বলেন, শ্রমিক লীগের কিছু নেতা-কর্মী তাঁদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। চলে যাওয়ার সময় তাঁদেরও কিছু নেতা-কর্মী শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর ইটপাটকেল ছোঁড়ে। এতে হয়তো কেউ আহত হতে পারে। এ ছাড়া কারও ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়নি। কারও গাড়ি বা মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়নি। ঘটনার সময় পালাতে গিয়ে হয়তো কারও মোটরসাইকেল পড়ে যেতে পারে।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, রাতে তফসিল ঘোষণার পরপরই একটি মশালমিছিল নিয়ে বের হয়ে একদল বিক্ষোভকারী অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে কিছু মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে এবং অন্যান্য গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করে। হামলায় আহত ব্যক্তিদের লিখিত অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।