নির্বাচন কমিশনের প্রধান এম এম নাসির উদ্দীন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে কী বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছিল তার স্পষ্টীকরণ চেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘যদি উভয় পক্ষ থেকে জাতির সামনে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়, তাহলে আমরা আশ্বস্ত হই।’
গতকাল শুক্রবার (২৭ জুন) রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। তবে তার ধারণা, প্রধান উপদেষ্টা হয়তো ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রমজান শুরু হওয়ার আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তাটি সিইসিকে জানিয়েছেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘লন্ডন বৈঠকের পরে আমরা আহ্বান করেছিলাম, ওই বৈঠকে সম্মতভাবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই বার্তাটি প্রধান উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে সিইসি বা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানাবেন। সে জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ হয়েছে, এটা প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম হয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অথবা সিইসির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে কিছু জানানো হবে যে কী বিষয়ে আলাপ বা বৈঠক হলো। ধারণা করে নিচ্ছি, প্রধান উপদেষ্টা হয়তো ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রমজান শুরু হওয়ার আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তাটি সিইসিকে জানিয়েছেন। আমরা জানি না, সত্যি সত্যি এই পরামর্শ বা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না। যদি উভয় পক্ষ থেকে জাতির সামনে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়, তাহলে আমরা আশ্বস্ত হই। ’
সালাহউদ্দিন বলেন, ইসির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে যে তাদের সব প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হয়ে যাবে। ইতিপূর্বে জুলাইয়ের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব বলেও তারা উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ—এটা হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও তারা প্রক্রিয়া করে ফেলেছেন। বাদবাকি যে প্রক্রিয়া, সেটা শুরু হলে তিন মাসের মধ্যে সমাপ্ত করা যায়। তফসিল ঘোষণার পর পোলিং ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটকেন্দ্র ঠিক করা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি অনেক কার্যক্রম থাকবে। এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। এগুলোর জন্য প্রস্তুতি লাগে না।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার যে দাবি তোলা হচ্ছে, সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সে বিষয়েও কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সম্মত, সে সময়ের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলই একমত। যদি তা-ই হয়, এই সময়ের মধ্যে ইসির পক্ষে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন এক প্রকার অসম্ভব। কারণ, প্রতিটি স্তরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে কমপক্ষে ছয় মাসের বেশি সময় লাগে। এটা একটা বিরাট কর্মযজ্ঞ। সে জন্য ইসির পক্ষ থেকে আগেও বলা হয়েছিল, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করতে গেলে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে করতে হয়তো পারবেন না। সরকার যদি চায়, তাহলে করতে হবে—এমন একটা কথা তারা বলেছিলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, যেখানে বাংলাদেশের প্রায় সব দল প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত বা সম্মত সময়সীমা নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে একমত, তাহলে এখানে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার কোনো সুযোগই নেই, প্রশ্নই নেই।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এবং আরও বহু দলের অবস্থান হচ্ছে আমরা জাতীয় সংসদের নির্বাচনের জন্যই এত দিন সংগ্রাম করেছি, ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্যই সংগ্রাম করেছি। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করেছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আমরা গণ-অভ্যুত্থান করিনি।’
এমএ