শ্রদ্ধা, স্মরণ ও প্রেরণার এক অনন্য দিন,আজ ২৮ জুন, মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক ও সমাজসংস্কারক প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ আবুল কাশেমের জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ছেদন্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই মহৎ মানুষটি। আজ তাঁর ১০৫তম জন্মদিন।
প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম ছিলেন বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিসত্তার সংগ্রামের এক অনন্য যোদ্ধা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই যখন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছিল, তখন তিনি ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ‘তমদ্দুন মজলিস’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলা ভাষার পক্ষে এক সংগঠিত আন্দোলনের সূচনা করেন। একই বছর প্রকাশ করেন ঐতিহাসিক গ্রন্থ “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু?”, যা বাংলা ভাষার পক্ষে প্রথম লিখিত দলিল হিসেবে বিবেচিত।
শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানের অগ্রদূত:
একজন মেধাবী পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করলেও তিনি বিশ্বাস করতেন, জ্ঞানচর্চার মাধ্যম হওয়া উচিত মাতৃভাষা। এই বিশ্বাস থেকেই ১৯৬২ সালে ঢাকার মিরপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাঙলা কলেজ’। বাংলায় উচ্চশিক্ষা বিস্তারের এ উদ্যোগ ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
রাজনীতিতেও ছিলো তার সক্রিয় অবদান:
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হয়ে তিনি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তার প্রচেষ্টায় ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
লেখনী ও সাহিত্য:
প্রিন্সিপাল কাশেম ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও লেখক। পদার্থবিজ্ঞান, সাহিত্য ও ইসলামী চিন্তাধারা নিয়ে লিখেছেন প্রায় ১০০টির মতো বই। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮২) ও একুশে পদকে (১৯৮৭) ভূষিত হন।
প্রয়াণ:
১৯৯১ সালের ১১ মার্চ তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ ও অবদান আজও বাংলা ভাষা, শিক্ষা ও জাতিসত্তার ইতিহাসে প্রেরণার বাতিঘর হয়ে আছে।
জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি:
আজ তাঁর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র-শিক্ষক, ভাষাকর্মী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানা আয়োজনে স্মরণ করছে এই মহান মানুষটিকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর জীবন ও কর্মের স্মৃতিচারণা।
“প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম শুধু একজন ব্যক্তি ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি আন্দোলন, একটি দর্শন, একটি অগ্রযাত্রার নাম।”