ঢাকা ১২:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদল: আদর্শের পতন না সিন্ডিকেটের উত্থান? Logo উত্তেজনার মধ্যেই বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর চালু করলো ইসরায়েল! Logo ইরানের হামলায় ইসরায়েলের হার্মেস-৯০০ ড্রোন ভূপাতিত-দাবি ইরানের Logo আবার ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইরান Logo সাবেক এমপি তুহিন গ্রেপ্তার Logo যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা সতর্কতা জারি Logo যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে জনগণ,অংশ নিলেন প্রেসিডেন্টও Logo নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য ১৪৭ দলের আবেদন Logo পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী হাউসবোটে নিষেধাজ্ঞা Logo আজ ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি করবে সচিবালয়ের কর্মচারীরা

টেম্পুস্ট্যান্ড দখলে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২

নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় টেম্পু ও ব্যাটারিচালিক অটোরিকশার স্ট্যান্ড দখল এবং মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুইপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার এই সহিংসতায় নিহত হয়েছেন দুই জন। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নতুন করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনীর সদস্যদের।

শনিবার রাতে আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে উপজেলার শাহী মসজিদ ও সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব মাঠ এলাকায় পৃথক সংঘর্ষে হত্যাকাণ্ড দুটি ঘটে। নিহতরা হলেন- হাফেজীবাগ এলাকার রাজমিস্ত্রি আবদুল কুদ্দুস (৭০) ও বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান (৪২)। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক দুই কাউন্সিলর, বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা হান্নান সরকার এবং মহানগর বিএনপির বিতর্কিত যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশার অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বন্দর রেললাইন অটো-ট্যাম্পুস্ট্যান্ড, আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। এর জেরে হান্নান সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত বাবু-মেহেদী পক্ষ এবং আবুল কাউসার আশার সমর্থক রনি-জাফর পক্ষের মধ্যে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শুক্রবারও তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।

এর জের ধরে শনিবার রাত ৯টার দিকে বন্দর শাহী মসজিদ এলাকায় রনি-জাফর পক্ষের সমর্থক পারভেজের বাবা আবদুল কুদ্দুসকে চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। পারভেজকে না পেয়ে তার বাবাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়। খবর পেয়ে অপরপক্ষের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের মধ্যে সংর্ঘ হয়। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় আবদুল কুদ্দুসকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা তীব্র হয়। কুদ্দুসের স্বজনরা তার মরদেহ নিয়ে মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রনি-জাফর পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা মেহেদী হাসানকে বন্দর সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব মাঠের কাছে একা পেয়ে ধরে নিয়ে যায় এবং বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের ভাই দুদু মিয়া বলেন, ‘ভাই বার বার বলেছিলেন, আমারে জানে মাইরো না। কিন্তু ওরা শোনেনি।’

সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা। তিনি বলেন, ‘রনি ও মেহেদী এক সময় ভাইয়ের মতো ছিল। কিশোর গ্যাং ও মাদকের দ্বন্দ্বে এ ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই।’

অপর নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারের দাবি, ‘সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডে আমি কোনোভাবে সম্পৃক্ত নই, উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে আমাকে জড়ানো হচ্ছে। উল্টো আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে।’

বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন উপজেলায় গত এক মাসে রাজনৈতিক কোন্দল, কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তার, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ ও পারিবারিক কলহে ৯ টি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যা পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের তৈরি হয়েছে।

ট্যাগস :

ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদল: আদর্শের পতন না সিন্ডিকেটের উত্থান?

টেম্পুস্ট্যান্ড দখলে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২

আপডেট সময় ০৭:০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় টেম্পু ও ব্যাটারিচালিক অটোরিকশার স্ট্যান্ড দখল এবং মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুইপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার এই সহিংসতায় নিহত হয়েছেন দুই জন। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নতুন করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনীর সদস্যদের।

শনিবার রাতে আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে উপজেলার শাহী মসজিদ ও সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব মাঠ এলাকায় পৃথক সংঘর্ষে হত্যাকাণ্ড দুটি ঘটে। নিহতরা হলেন- হাফেজীবাগ এলাকার রাজমিস্ত্রি আবদুল কুদ্দুস (৭০) ও বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান (৪২)। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক দুই কাউন্সিলর, বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা হান্নান সরকার এবং মহানগর বিএনপির বিতর্কিত যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশার অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বন্দর রেললাইন অটো-ট্যাম্পুস্ট্যান্ড, আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। এর জেরে হান্নান সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত বাবু-মেহেদী পক্ষ এবং আবুল কাউসার আশার সমর্থক রনি-জাফর পক্ষের মধ্যে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শুক্রবারও তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।

এর জের ধরে শনিবার রাত ৯টার দিকে বন্দর শাহী মসজিদ এলাকায় রনি-জাফর পক্ষের সমর্থক পারভেজের বাবা আবদুল কুদ্দুসকে চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। পারভেজকে না পেয়ে তার বাবাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়। খবর পেয়ে অপরপক্ষের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের মধ্যে সংর্ঘ হয়। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় আবদুল কুদ্দুসকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা তীব্র হয়। কুদ্দুসের স্বজনরা তার মরদেহ নিয়ে মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রনি-জাফর পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা মেহেদী হাসানকে বন্দর সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব মাঠের কাছে একা পেয়ে ধরে নিয়ে যায় এবং বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের ভাই দুদু মিয়া বলেন, ‘ভাই বার বার বলেছিলেন, আমারে জানে মাইরো না। কিন্তু ওরা শোনেনি।’

সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা। তিনি বলেন, ‘রনি ও মেহেদী এক সময় ভাইয়ের মতো ছিল। কিশোর গ্যাং ও মাদকের দ্বন্দ্বে এ ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই।’

অপর নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারের দাবি, ‘সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডে আমি কোনোভাবে সম্পৃক্ত নই, উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে আমাকে জড়ানো হচ্ছে। উল্টো আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে।’

বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন উপজেলায় গত এক মাসে রাজনৈতিক কোন্দল, কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তার, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ ও পারিবারিক কলহে ৯ টি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যা পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের তৈরি হয়েছে।