বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলা শাখার উদ্যোগে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার ২২ জুন, জামায়াতের রায়গঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ডা. এস এম মুনসুর আলীর সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা জামায়াতের আমীর আলী মর্তুজা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “গতকাল ২১ জুন ২০২৫ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে কিছু মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। তাদের বক্তব্য ছিল রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। আমরা এসব অভিযোগ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছি এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দের শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “গত ২০ জুন শুক্রবার, দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ শাহ শরীফ জিন্দানী মাজার মসজিদে পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা জুমার নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে পৌঁছাই। সেখানে বিএনপির কয়েকজন এমপি প্রার্থী নেতা-কর্মীসহ মোটরসাইকেল শোডাউন নিয়ে পৌঁছালে— আমি তাদের অভ্যর্থনা জানাই।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও সলঙ্গা) আসনের জামায়াত মনোনীত জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী প্রফেসর শায়খ ড. মাওলানা আব্দুস সামাদ জুমার বয়ান পেশ করেন। বয়ান চলাকালীন সময়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দ মসজিদে প্রবেশ করলে আমি তাদের বসার সুযোগ করে দেই। আমাদের প্রার্থীকে আলোচনা সংক্ষিপ্ত করে বিএনপি নেতৃবৃন্দকে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদানের সুযোগ করে দেই।
এতে বক্তব্য প্রদান করেন পাঁচ এমপি প্রার্থী— আয়নুল হক, রাহিদ মান্নান লেলিন, ইঞ্জিনিয়ার কামাল হোসেন, দুলাল হোসেন খান, আমিনুল বারী তালুকদার—এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শামসুল ইসলাম।”
তিনি আরও বলেন, “পরবর্তীতে ইমাম সাহেবের অনুরোধে খুতবা প্রদান ও ইমামতি করেন জনাব প্রফেসর শায়খ ড. মাওলানা আব্দুস সামাদ। তিনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম হওয়ায় স্থানীয় জনগণের আগ্রহ ও অনুরোধেই তাঁর উপস্থিতি ছিল। বিষয়টি তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “নামাজে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা একসঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। নামাজ শেষে একে অপরকে সম্মান জানিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, করমর্দন ও কোলাকুলি করেন। তখন সৌজন্যতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের অবতারণা হয়।
এরপরেই সারা উপজেলা থেকে আগত বিএনপির নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে শুরু করেন এবং বিশাল শোডাউনের মাধ্যমে পরিবেশ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন, যা সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি করে।”
জামায়াতের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেন, “সেদিন জামায়াতের পক্ষ থেকে কোনো স্লোগান দেওয়া হয়নি। নামাজ শেষে প্রার্থীসহ আমরা যখন নওগাঁ বাজারে পৌঁছাই, তখন কিছু কর্মী আমাদের স্বাগত জানিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্লোগান দিতে শুরু করেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গেই তা বন্ধ করে দেই। বিএনপির উত্থাপিত বিশেষ ব্যক্তির নাম জড়িয়ে স্লোগান দেওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শিক সংগঠন, যেখানে শৃঙ্খলা ও নীতি-নৈতিকতার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিএনপির উত্থাপিত অভিযোগের সাথে জামায়াতে ইসলামীর দূরতম কোন সম্পর্ক নেই।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বিএনপির রায়গঞ্জ উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়নুল হক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন—জামায়াত নাকি আওয়ামী লীগের লোকজনকে দলে নিচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, জামায়াত জুলাই আন্দোলনের চেতনা ধারণ করে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের কোনো আওয়ামী পুনর্বাসন প্রকল্প নেই।
তাঁর আরও অভিযোগ—বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে জামায়াতের নাকি কোনো ভূমিকা ছিল না। আমরা বিনয়ের সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই—বাংলাদেশের যে কোনো যৌক্তিক আন্দোলনে জামায়াতের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। রায়গঞ্জের জনগণ, সচেতন মহল ও সাংবাদিকগণ তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। জামায়াতের নেতা-কর্মীরা জেল-জুলুম, নির্যাতন, হামলা-মামলা উপেক্ষা করে আন্দোলনে থেকেছেন, বিএনপির কোনো কোনো বিশেষ ব্যক্তির মতো এলাকা কিংবা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি।
আলী মর্তুজা বলেন, “বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে একটি স্বাভাবিক, সৌহার্দ্যপূর্ণ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। আমরা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখা এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পরিহারের আহ্বান জানাই।”
বিএনপির প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, “আসুন, প্রায় দেড় হাজার শহীদ এবং ৩০–৪০ হাজার আহতদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশকে আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলি। ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করতে গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার, ন্যূনতম সংস্কার এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে ঐক্যবদ্ধ থাকি।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রায়গঞ্জ উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আবুল কালাম বিশ্বাস, রায়গঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশারফ হোসেন আকন্দ, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি কামরুল ইসলাম, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে খোরশেদ আলম, নজরুল ইসলাম, পৌর জামায়াতের আমীর হোসেন আলী, সেক্রেটারি আব্দুল হক, ধানগড়া ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, চান্দাইকোনা ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি ডা. জাকারিয়া হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।