বগুড়ার আলোচিত যুবলীগ নেতা, পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং কথিত ‘অপরাধ জগতের গডফাদার’ আব্দুল মতিন সরকারকে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গত শনিবার (২১ জুন) রাত ১১টার দিকে একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবির ওসি মো. ইকবাল বাহারের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মতিন সরকারকে আটক করা হয়। তিনি ঢাকায় ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। গ্রেফতারের পর রাত ১২টার দিকে তাকে বগুড়ার উদ্দেশে নিয়ে রওনা দেয় ডিবি টিম। আজ (রোববার) তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে।
পঞ্চাশ বছর বয়সী আব্দুল মতিন সরকারের স্থায়ী ঠিকানা বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর চামড়া গুদাম এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বগুড়ায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভূমিদখল, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত দুটি হত্যা মামলাসহ তার বিরুদ্ধে বর্তমানে প্রায় ২০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, “আব্দুল মতিন সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তাকে ধরতে আমাদের টিম দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করে আসছিল। অবশেষে সফলভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে তোলা হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মতিন সরকারের নেতৃত্বে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিল। তার প্রভাবের কারণে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পেত না। সম্প্রতি বগুড়ায় সংঘটিত কয়েকটি সহিংস ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে ছিলেন তিনি।
মতিন সরকারের গ্রেপ্তারের খবরে শহরে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বগুড়ার অপরাধ জগতে বড় ধরণের ধাক্কা লেগেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, মতিন সরকারের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর পাশাপাশি নতুন করে তদন্ত শুরু হবে। তিনি অপরাধ চক্রে যত গভীরভাবে জড়িত থাকুন না কেন, প্রত্যেকটি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বহুল আলোচিত গ্রেপ্তার বগুড়ার রাজনীতি ও অপরাধ জগতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধ জগতের যে শক্ত ঘাঁটি গড়ে উঠেছিল, তা ভাঙার জন্য এ ধরণের অভিযান অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।