ঢাকা ০২:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ইরান ইস্যুতে টালমাটাল ট্রাম্প, সরে যাচ্ছেন মূলনীতি থেকেও

এক সপ্তাহ ধরে চলা ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান বারবার পাল্টেছে। এর ফলে তার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন (মেগা)’ প্রচারণাতেও বিভক্তি দেখা দিচ্ছে।

এদিকে, মঙ্গলবার (১৭ জুন) কানাডায় জি-সেভেন সম্মেলন থেকে হঠাৎ ওয়াশিংটন ফিরে যাওয়ার সময় ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি চলে গেছে। অথচ মার্চে তারই গোয়েন্দাপ্রধান টুলসি গ্যাবার্ড কংগ্রেসকে বলেছিলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না।

কীভাবে অবস্থান বদলেছে: চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ‘ম্যাক্সিমাম প্রেসার’ নীতি পুনরায় চালু করেন, তবে চলমান সংঘাতে সামরিক হুমকির চেয়ে আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেন। উপসাগরীয় দেশগুলোতে সফরকালে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত।

অন্যদিকে ১৭ মে হুতির হামলা নিয়ে ইরানকে আক্রমণাত্মক বার্তা দেন। ২৮ মে নেতানিয়াহুকে ইরান আক্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েল ইরান আক্রমণ করলে মার্কো রুবিও জানান, যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়।

১৭ জুন ট্রাম্প নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে-এ ইরানকে ‘শর্তহীন আত্মসমর্পণ’ করতে বলেন ও খামেনেয়িকে ‘সহজ লক্ষ্য’ বলে উল্লেখ করেন। ১৮ জুন হোয়াইট হাউজের বাইরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি হয়তো করব, হয়তো করব না — কেউ জানে না আমি কী করব।’

ট্রাম্পের এই দোদুল্যমান অবস্থান তার মূল মেগা সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। তারা মনে করেন, নতুন কোনো যুদ্ধে জড়ানো ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির বিরোধী।

ইরানের কড়া জবাব: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ি বলেছেন, কোনো মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ হলে (ওয়াশিংটনের) অপূরণীয় ক্ষতি হবে। ইরান ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, তবে আইএইএ বা যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা কোনো অস্ত্র তৈরির প্রমাণ পায়নি।

এর আগে ২০১৮ সালে ট্রাম্প ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। ২০২০ সালে বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় কাসেম সোলাইমানি নিহত হলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। এরপর ইরান ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

সম্প্রতি ট্রাম্পের বক্তব্য ও সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে কোন ধারাবাহিকতাই নেই। কখনো চুক্তির কথা বলেন, কখনো যুদ্ধের হুমকি দেন। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছে বিশ্ব, এবং তার নিজের ভোট ব্যাংক ও সমর্থককেরাও দোটানায় পড়ছে। ইরান বরাবরের মতোই বলছে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী অস্ত্র উৎপাদন হারাম।

সূত্র : আল জাজিরা

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে থাকবেন ট্রাম্প, ভেন্যুতে কড়া নিরাপত্তা

ইরান ইস্যুতে টালমাটাল ট্রাম্প, সরে যাচ্ছেন মূলনীতি থেকেও

আপডেট সময় ০৬:৫৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

এক সপ্তাহ ধরে চলা ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান বারবার পাল্টেছে। এর ফলে তার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন (মেগা)’ প্রচারণাতেও বিভক্তি দেখা দিচ্ছে।

এদিকে, মঙ্গলবার (১৭ জুন) কানাডায় জি-সেভেন সম্মেলন থেকে হঠাৎ ওয়াশিংটন ফিরে যাওয়ার সময় ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি চলে গেছে। অথচ মার্চে তারই গোয়েন্দাপ্রধান টুলসি গ্যাবার্ড কংগ্রেসকে বলেছিলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না।

কীভাবে অবস্থান বদলেছে: চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ‘ম্যাক্সিমাম প্রেসার’ নীতি পুনরায় চালু করেন, তবে চলমান সংঘাতে সামরিক হুমকির চেয়ে আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেন। উপসাগরীয় দেশগুলোতে সফরকালে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত।

অন্যদিকে ১৭ মে হুতির হামলা নিয়ে ইরানকে আক্রমণাত্মক বার্তা দেন। ২৮ মে নেতানিয়াহুকে ইরান আক্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েল ইরান আক্রমণ করলে মার্কো রুবিও জানান, যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়।

১৭ জুন ট্রাম্প নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে-এ ইরানকে ‘শর্তহীন আত্মসমর্পণ’ করতে বলেন ও খামেনেয়িকে ‘সহজ লক্ষ্য’ বলে উল্লেখ করেন। ১৮ জুন হোয়াইট হাউজের বাইরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি হয়তো করব, হয়তো করব না — কেউ জানে না আমি কী করব।’

ট্রাম্পের এই দোদুল্যমান অবস্থান তার মূল মেগা সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। তারা মনে করেন, নতুন কোনো যুদ্ধে জড়ানো ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির বিরোধী।

ইরানের কড়া জবাব: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ি বলেছেন, কোনো মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ হলে (ওয়াশিংটনের) অপূরণীয় ক্ষতি হবে। ইরান ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, তবে আইএইএ বা যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা কোনো অস্ত্র তৈরির প্রমাণ পায়নি।

এর আগে ২০১৮ সালে ট্রাম্প ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। ২০২০ সালে বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় কাসেম সোলাইমানি নিহত হলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। এরপর ইরান ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

সম্প্রতি ট্রাম্পের বক্তব্য ও সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে কোন ধারাবাহিকতাই নেই। কখনো চুক্তির কথা বলেন, কখনো যুদ্ধের হুমকি দেন। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছে বিশ্ব, এবং তার নিজের ভোট ব্যাংক ও সমর্থককেরাও দোটানায় পড়ছে। ইরান বরাবরের মতোই বলছে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী অস্ত্র উৎপাদন হারাম।

সূত্র : আল জাজিরা