ঢাকা ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo খামেনিকে হত্যার প্রকাশ্য হুমকি ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর Logo আইআরজিসির স্থলবাহিনীর নতুন কমান্ডার মোহাম্মদ কারামি Logo মুশফিকের সেঞ্চুরি রেকর্ড ধামাকা Logo এখন থেকে ৫ আগস্ট সরকারি ছুটি থাকবে Logo গুমের শিকার ব্যক্তিদের ৪ পরিণতি হতো, যেসব ‘ফাঁদে’আ’লীগ সরকার Logo ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের বিমান হামলা Logo কুষ্টিয়া কালিশংকরপুর ছাত্রাবাসে এক ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু Logo জুলাই সনদ,রাষ্ট্রের সংস্কার ও গণহত্যাকারীদের বিচার দৃশ্যমানের পর নির্বাচন দিতে হবে,সেলিম উদ্দিন Logo অবিলম্বে জুলাই সনদ প্রণয়ন, রাষ্ট্রের সংস্কার ও গণহত্যাকারীদের বিচার দৃশ্যমানের পর নির্বাচন দিতে হবে-মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন Logo শেখ হাসিনার আদালত অবমাননার মামলায় অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ

ভিক্টোরিয়ার ছায়ায় সিয়ামের স্বপ্ন: এক গ্লাস লেবুর শরবতে জীবনের গল্প

কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছায়া ঘেরা ক্যাম্পাস। পথের পাশে এক কোণে চোখে পড়বে ছোট্ট একটি শরবতের টলি।
টলির ওপর সাজানো কয়েকটি গ্লাস, লেবু, বরফ-পানি, মসলা, লাল রঙের বালতি আর একটি মগ। সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক কিশোর, গায়ে স্কুল ড্রেস, মুখে সংযত আত্মবিশ্বাস। দুই হাতে লেবু কেটে একাগ্রচিত্তে শরবত বানাচ্ছে সে।
নাম তার সাইদুল ইসলাম সিয়াম। বয়স মাত্র ১২ বছর। কুমিল্লা রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। সকাল সকাল উঠে ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাওয়ার আগে কলেজ চত্বরে বসে শরবত বিক্রি করে সে। হয়তো শুনতে সাধারণ একটি গল্প মনে হতে পারে। কিন্তু একটু গভীরে তাকালেই ধরা পড়ে, এ ছবির ভেতরে আছে অন্য এক বাস্তবতা— স্বপ্ন, সংগ্রাম আর দায়িত্ববোধে গড়া এক শিশুর জীবনযুদ্ধ।

সিয়ামের কোনো নির্দিষ্ট দোকান নেই। নেই কোনো নামফলক, নেই দোকানের ছাউনিও। খোলা আকাশের নিচে, ভিক্টোরিয়ার বিশাল গাছগুলোর ছায়ায় দাঁড়িয়ে সে বিক্রি করে লেবুর শরবত। দোকান নেই, অথচ মন ভরে আছে স্বপ্নে। সে জানে— জীবনের বোঝা হালকা করতে হলে বসে থাকলে চলবে না।

চাঁদপুর জেলার মহামায়া বাজার এলাকায় তার গ্রামের বাড়ি। এখন পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে কলেজ সংলগ্ন ধর্মপুর চৌমুহনী এলাকায়। মা নুরুন নাহারের সাথে স্কুলে যাওয়ার আগে মাকে সহায়তা করে, আর বাবা কাজ করেন কলেজের ব্যবহারিক খাতা তৈরির কারখানায়। সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাওয়া এই পরিবারে সিয়ামের ছোট্ট হাতও যুক্ত হয়েছে বড় দায়িত্বে।
কোনো অভিযোগ নেই তার মুখে। নেই ক্লান্তির ছাপ। বরং যত্ন করে, পরিচ্ছন্নভাবে সে তৈরি করে শরবত। গ্লাসে তুলে দেয় ক্রেতার হাতে। দাম সাধারণ, কিন্তু তার ভেতর মিশে থাকে সততা, শ্রম আর সম্মান। সিয়াম জানে— কাজ ছোট হতে পারে, কিন্তু মন ছোট হলে চলবে না।

এই বয়সে যখন অনেকেই সময় কাটায় খেলার মাঠে বা মোবাইলের স্ক্রিনে, তখন সিয়াম দাঁড়িয়ে থাকে শরবতের টলির পাশে। শুধু নিজের জন্য নয়, পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে, ভবিষ্যতের জন্য একটু সঞ্চয় করতে।

সিয়ামের এই গল্প কোনো করুণা নয়, এটি অনুপ্রেরণার। সমাজে হাজারও শিশু এখনও অভাবের তাড়নায় থেমে যায়। অন্যের কাছে হাত পাতে। কিন্তু সিয়াম শেখাচ্ছে— কীভাবে কষ্টকে শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। সে প্রমাণ করে দিচ্ছে, বয়স নয়, মানুষকে বড় করে তার কাজ, তার মন, আর সাহস।

ভিক্টোরিয়ার ছায়ায় দাঁড়িয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত হাতে হয়তো আপনি স্বস্তি খুঁজবেন গরমে। কিন্তু সে গ্লাসের প্রতিটা চুমুকে লুকিয়ে আছে এক কিশোরের ঘাম, স্বপ্ন আর জীবনকে জয় করার অদম্য আকাঙ্ক্ষা।

ট্যাগস :

খামেনিকে হত্যার প্রকাশ্য হুমকি ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

ভিক্টোরিয়ার ছায়ায় সিয়ামের স্বপ্ন: এক গ্লাস লেবুর শরবতে জীবনের গল্প

আপডেট সময় ০১:২৮:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছায়া ঘেরা ক্যাম্পাস। পথের পাশে এক কোণে চোখে পড়বে ছোট্ট একটি শরবতের টলি।
টলির ওপর সাজানো কয়েকটি গ্লাস, লেবু, বরফ-পানি, মসলা, লাল রঙের বালতি আর একটি মগ। সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক কিশোর, গায়ে স্কুল ড্রেস, মুখে সংযত আত্মবিশ্বাস। দুই হাতে লেবু কেটে একাগ্রচিত্তে শরবত বানাচ্ছে সে।
নাম তার সাইদুল ইসলাম সিয়াম। বয়স মাত্র ১২ বছর। কুমিল্লা রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। সকাল সকাল উঠে ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাওয়ার আগে কলেজ চত্বরে বসে শরবত বিক্রি করে সে। হয়তো শুনতে সাধারণ একটি গল্প মনে হতে পারে। কিন্তু একটু গভীরে তাকালেই ধরা পড়ে, এ ছবির ভেতরে আছে অন্য এক বাস্তবতা— স্বপ্ন, সংগ্রাম আর দায়িত্ববোধে গড়া এক শিশুর জীবনযুদ্ধ।

সিয়ামের কোনো নির্দিষ্ট দোকান নেই। নেই কোনো নামফলক, নেই দোকানের ছাউনিও। খোলা আকাশের নিচে, ভিক্টোরিয়ার বিশাল গাছগুলোর ছায়ায় দাঁড়িয়ে সে বিক্রি করে লেবুর শরবত। দোকান নেই, অথচ মন ভরে আছে স্বপ্নে। সে জানে— জীবনের বোঝা হালকা করতে হলে বসে থাকলে চলবে না।

চাঁদপুর জেলার মহামায়া বাজার এলাকায় তার গ্রামের বাড়ি। এখন পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে কলেজ সংলগ্ন ধর্মপুর চৌমুহনী এলাকায়। মা নুরুন নাহারের সাথে স্কুলে যাওয়ার আগে মাকে সহায়তা করে, আর বাবা কাজ করেন কলেজের ব্যবহারিক খাতা তৈরির কারখানায়। সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাওয়া এই পরিবারে সিয়ামের ছোট্ট হাতও যুক্ত হয়েছে বড় দায়িত্বে।
কোনো অভিযোগ নেই তার মুখে। নেই ক্লান্তির ছাপ। বরং যত্ন করে, পরিচ্ছন্নভাবে সে তৈরি করে শরবত। গ্লাসে তুলে দেয় ক্রেতার হাতে। দাম সাধারণ, কিন্তু তার ভেতর মিশে থাকে সততা, শ্রম আর সম্মান। সিয়াম জানে— কাজ ছোট হতে পারে, কিন্তু মন ছোট হলে চলবে না।

এই বয়সে যখন অনেকেই সময় কাটায় খেলার মাঠে বা মোবাইলের স্ক্রিনে, তখন সিয়াম দাঁড়িয়ে থাকে শরবতের টলির পাশে। শুধু নিজের জন্য নয়, পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে, ভবিষ্যতের জন্য একটু সঞ্চয় করতে।

সিয়ামের এই গল্প কোনো করুণা নয়, এটি অনুপ্রেরণার। সমাজে হাজারও শিশু এখনও অভাবের তাড়নায় থেমে যায়। অন্যের কাছে হাত পাতে। কিন্তু সিয়াম শেখাচ্ছে— কীভাবে কষ্টকে শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। সে প্রমাণ করে দিচ্ছে, বয়স নয়, মানুষকে বড় করে তার কাজ, তার মন, আর সাহস।

ভিক্টোরিয়ার ছায়ায় দাঁড়িয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত হাতে হয়তো আপনি স্বস্তি খুঁজবেন গরমে। কিন্তু সে গ্লাসের প্রতিটা চুমুকে লুকিয়ে আছে এক কিশোরের ঘাম, স্বপ্ন আর জীবনকে জয় করার অদম্য আকাঙ্ক্ষা।