ঢাকা ০৬:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ, অনুপস্থিতিতেও চলবে বিচার

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের গুরুতর ৫টি অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের হাজিরা নিশ্চিত করতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন।

যদি আগামী ২৪ জুনের মধ্যে তারা ট্রাইব্যুনালে হাজির না হন, তবে তাদের পলাতক দেখিয়ে অনুপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠন এবং আনুষ্ঠানিক বিচারকার্য শুরু হবে। এই ঐতিহাসিক মামলার শুনানি প্রথমবারের মতো সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে, যা সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

নিয়ম অনুযায়ী, এর পরের ধাপে দুই আসামি হাজির না হলে পলাতক দেখিয়ে তাদের অনুপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করা হবে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অভিযোগের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।

প্রসিকিউশন জানিয়েছেন, মামলাটি এখন বিচারের তৃতীয় ধাপে আছে। এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পাশাপাশি পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। এই তিন আসামির মধ্যে সাবেক আইজিপি মামুন গ্রেফতার আছেন। তাকে সোমবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

সোমবার পুলিশের দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেশের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী তাদের হাজির হতে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আবেদন জানান চিফ প্রসিকিউটর।

শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বাসা ও অন্যান্য স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু গ্রেফতার করতে পারেননি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, এই দুই আসামি ভারতে অবস্থান করে থাকতে পারেন। পরে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বহুল প্রচারিত একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আদেশ দেন আদালত।

জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গত ১ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। তাদের গ্রেফতার করা গেল কি না, সে বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে সেদিন ১৬ জুন দিন ধার্য করা হয়। এ মামলার আরেক আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অভ্যুত্থানের সময় আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন। সোমবার কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গত ১ জুন সাড়ে আট হাজার পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পত্রে বলা হয়, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ১৪শ ছাত্র-জনতাকে হত্যার দায় শেখ হাসিনার। তার নির্দেশ, উসকানি, প্ররোচনায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। এই বিচারকাজ সারা বিশ্বকে দেখাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনালের শুনানি সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। এর আগে তদন্ত শেষে গত ১২ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সেখানে শেখ হাসিনাকে জুলাই-আগস্টের নৃশংসতার ‘মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়।

বিচারের পরবর্তী ধাপ : ট্রাইব্যুনাল রুলস ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, রুলসের ৩০ ধারা মতে প্রসেস যদি জারি না হয়ে আসে, তখন ট্রাইব্যুনাল একটি বাংলা, একটি ইংরেজি মোট দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে আসামিকে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেবেন।

প্রসঙ্গত, রুলস ৩০-এ আছে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি। আর ট্রাইব্যুনাল রুলস ৩২ অনুযায়ী, দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক আসামি হাজির না হলে, সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করেন আসামি হাজির হবেন না বা ইচ্ছা করে নিজে পলাতক রয়েছেন-সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরু করতে পারবেন।

প্রসিকিউশনের একটি সূত্র জানায়, ট্রাইব্যুনাল আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরু করতে পারবেন এবং রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেবেন। এই প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তি অনুপস্থিত থাকলেও যাতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন এবং তার পক্ষে যথাযথভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর বিধান অনুযায়ী, এই ধরনের পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।

মুখ খুললেন সারোয়ার তুষার, নিজেকে শুধরে নিতে প্রস্তুত

হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ, অনুপস্থিতিতেও চলবে বিচার

আপডেট সময় ১২:১৪:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের গুরুতর ৫টি অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের হাজিরা নিশ্চিত করতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন।

যদি আগামী ২৪ জুনের মধ্যে তারা ট্রাইব্যুনালে হাজির না হন, তবে তাদের পলাতক দেখিয়ে অনুপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠন এবং আনুষ্ঠানিক বিচারকার্য শুরু হবে। এই ঐতিহাসিক মামলার শুনানি প্রথমবারের মতো সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে, যা সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

নিয়ম অনুযায়ী, এর পরের ধাপে দুই আসামি হাজির না হলে পলাতক দেখিয়ে তাদের অনুপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করা হবে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অভিযোগের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।

প্রসিকিউশন জানিয়েছেন, মামলাটি এখন বিচারের তৃতীয় ধাপে আছে। এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পাশাপাশি পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। এই তিন আসামির মধ্যে সাবেক আইজিপি মামুন গ্রেফতার আছেন। তাকে সোমবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

সোমবার পুলিশের দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেশের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী তাদের হাজির হতে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আবেদন জানান চিফ প্রসিকিউটর।

শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বাসা ও অন্যান্য স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু গ্রেফতার করতে পারেননি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, এই দুই আসামি ভারতে অবস্থান করে থাকতে পারেন। পরে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বহুল প্রচারিত একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আদেশ দেন আদালত।

জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গত ১ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। তাদের গ্রেফতার করা গেল কি না, সে বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে সেদিন ১৬ জুন দিন ধার্য করা হয়। এ মামলার আরেক আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অভ্যুত্থানের সময় আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন। সোমবার কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গত ১ জুন সাড়ে আট হাজার পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পত্রে বলা হয়, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ১৪শ ছাত্র-জনতাকে হত্যার দায় শেখ হাসিনার। তার নির্দেশ, উসকানি, প্ররোচনায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। এই বিচারকাজ সারা বিশ্বকে দেখাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনালের শুনানি সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। এর আগে তদন্ত শেষে গত ১২ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সেখানে শেখ হাসিনাকে জুলাই-আগস্টের নৃশংসতার ‘মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়।

বিচারের পরবর্তী ধাপ : ট্রাইব্যুনাল রুলস ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, রুলসের ৩০ ধারা মতে প্রসেস যদি জারি না হয়ে আসে, তখন ট্রাইব্যুনাল একটি বাংলা, একটি ইংরেজি মোট দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে আসামিকে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেবেন।

প্রসঙ্গত, রুলস ৩০-এ আছে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি। আর ট্রাইব্যুনাল রুলস ৩২ অনুযায়ী, দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক আসামি হাজির না হলে, সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করেন আসামি হাজির হবেন না বা ইচ্ছা করে নিজে পলাতক রয়েছেন-সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরু করতে পারবেন।

প্রসিকিউশনের একটি সূত্র জানায়, ট্রাইব্যুনাল আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরু করতে পারবেন এবং রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেবেন। এই প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তি অনুপস্থিত থাকলেও যাতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন এবং তার পক্ষে যথাযথভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর বিধান অনুযায়ী, এই ধরনের পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।