ঢাকা ০৮:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়াই আমার লক্ষ্য: সিইসি Logo টানা ১০ দিন অতি ভারি বৃষ্টির আভাস Logo রংপুর মহানগরকে ২ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে সিরাজগঞ্জ শহর Logo রাজস্থানে ধসে পড়লো স্কুল ভবন, বহু শিশু হতাহতের শঙ্কা Logo জামায়াত দল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, দেশও পারবে : ড.শফিকুর রহমান Logo আন্দোলনকারীদের সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলো শেখ হাসিনা Logo থানায় ঢুকে রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, ছুরিকাঘাতে আহত এসআই, পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ যুবক Logo আজ যে এলাকয় ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না Logo গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত, নিহত ছাড়াল ৫৯ হাজার ৫০০ Logo বাংলাদেশের স্বার্থেই জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন: মো. তৌহিদ হোসেন

গাজায় ঈদের দ্বিতীয় দিন ইসরায়েলের হামলা, এক পরিবারের ১৬ জনসহ নিহত ৭৫

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের মতো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাতেও ঈদুল আজহা ছিল ৬ জুন। তার পরের দিন ৭ জুন ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর গোলাবর্ষণে উপত্যকাজুড়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৫ জন এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১০০ জন।

রোববার গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগসূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

নিহতদের মধ্যে ১৬ জন একই পরিবারের সদস্য এবং এই ১৬ জনের মধ্যে ৬ জন শিশুও রয়েছে। এই পরিবারটি বসবাস করত গাজার প্রধান ও মধ্যাঞ্চলীয় শহর গাজা সিটির সাবরা এলাকায়।

ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্স বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসেল আল জাজিরাকে বলেছেন, বিমান অভিযানের আগে কোনো সতর্ক সংকেত বা সাইরেন দেয়নি ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। তিনি আরও জানান, শনিবারের হামলায় অন্তত ৮৫ জন ধ্বংস্তূপের তলায় আটকা পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করা এখনও সম্ভব হয়নি।

“এটা ছিল পুরোপুরি ঠান্ডা মাথায় গণহত্যা। শনিবার যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সবাই বেসামরিক এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন নারী ও শিশু আছেন।”

গাজা সিটির বাসিন্দা হামেদ কেহিল আল জাজিরাকে বলেন, “অন্যান্য বছর এ সময় আমরা সকাল সকাল উঠে নিজেদের এবং বাচ্চাদের নতুন পোশাকে সাজিয়ে বন্ধু-আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। আর এবার আমরা আমাদের শিশু ও স্বজনদের লাশ বহন করছি। গতকাল ভোররাতে আমাদের ঘুম ভেঙেছে হামলা, ধ্বংস আর আর্তনাদের শব্দে।”

গাজা সিটির অপর বাসিন্দা হাসান আলখোর আল জাজিরাকে বলেন, “গত প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যা যা করেছে, সেজন্য যেন নেতানিয়াহু (ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী)-কে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়।”

এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তাদের অভিযানের লক্ষ্য ছিল আসাদ আবু শারিয়া নামের এক হামাস নেতাকে নিধন করা। আসাদ আবু শারিয়া হামাসের সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেডের অন্তর্ভুক্ত মুজাহিদিন ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল হামাস, তাতে অংশ নিয়েছিলেন।

এর আগে ঈদের দিন, অর্থাৎ ৬ জুনও দিনভর গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং তাতে নিহত হয়েছিলেন অন্তত ৪২ জন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।

হামাসের এ হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তারপর গত ১৭ মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৭৭ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৩০ জন। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালানোর পাশাপাশি গত মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণবাহী গাড়িও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং খাদ্য, সুপেয় পানি, ও ওষুধের অভাবে নরকের জীবনযাপন করছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা।

যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এখনও অন্তত ৩৫ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।

এদিকে সম্প্রতি গাজায় ফের দু’মাসের যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা হাজির করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই প্রস্তাবনায় নেতানিয়াহু সম্মতি দিলেও হামাস এখন অনুমোদন করেনি।

সূত্র : আলজাজিরা

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়াই আমার লক্ষ্য: সিইসি

গাজায় ঈদের দ্বিতীয় দিন ইসরায়েলের হামলা, এক পরিবারের ১৬ জনসহ নিহত ৭৫

আপডেট সময় ০৯:১১:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের মতো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাতেও ঈদুল আজহা ছিল ৬ জুন। তার পরের দিন ৭ জুন ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর গোলাবর্ষণে উপত্যকাজুড়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৫ জন এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১০০ জন।

রোববার গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগসূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

নিহতদের মধ্যে ১৬ জন একই পরিবারের সদস্য এবং এই ১৬ জনের মধ্যে ৬ জন শিশুও রয়েছে। এই পরিবারটি বসবাস করত গাজার প্রধান ও মধ্যাঞ্চলীয় শহর গাজা সিটির সাবরা এলাকায়।

ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্স বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসেল আল জাজিরাকে বলেছেন, বিমান অভিযানের আগে কোনো সতর্ক সংকেত বা সাইরেন দেয়নি ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। তিনি আরও জানান, শনিবারের হামলায় অন্তত ৮৫ জন ধ্বংস্তূপের তলায় আটকা পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করা এখনও সম্ভব হয়নি।

“এটা ছিল পুরোপুরি ঠান্ডা মাথায় গণহত্যা। শনিবার যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সবাই বেসামরিক এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন নারী ও শিশু আছেন।”

গাজা সিটির বাসিন্দা হামেদ কেহিল আল জাজিরাকে বলেন, “অন্যান্য বছর এ সময় আমরা সকাল সকাল উঠে নিজেদের এবং বাচ্চাদের নতুন পোশাকে সাজিয়ে বন্ধু-আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। আর এবার আমরা আমাদের শিশু ও স্বজনদের লাশ বহন করছি। গতকাল ভোররাতে আমাদের ঘুম ভেঙেছে হামলা, ধ্বংস আর আর্তনাদের শব্দে।”

গাজা সিটির অপর বাসিন্দা হাসান আলখোর আল জাজিরাকে বলেন, “গত প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যা যা করেছে, সেজন্য যেন নেতানিয়াহু (ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী)-কে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়।”

এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তাদের অভিযানের লক্ষ্য ছিল আসাদ আবু শারিয়া নামের এক হামাস নেতাকে নিধন করা। আসাদ আবু শারিয়া হামাসের সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেডের অন্তর্ভুক্ত মুজাহিদিন ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল হামাস, তাতে অংশ নিয়েছিলেন।

এর আগে ঈদের দিন, অর্থাৎ ৬ জুনও দিনভর গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং তাতে নিহত হয়েছিলেন অন্তত ৪২ জন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।

হামাসের এ হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তারপর গত ১৭ মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৭৭ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৩০ জন। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালানোর পাশাপাশি গত মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণবাহী গাড়িও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং খাদ্য, সুপেয় পানি, ও ওষুধের অভাবে নরকের জীবনযাপন করছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা।

যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এখনও অন্তত ৩৫ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।

এদিকে সম্প্রতি গাজায় ফের দু’মাসের যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা হাজির করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই প্রস্তাবনায় নেতানিয়াহু সম্মতি দিলেও হামাস এখন অনুমোদন করেনি।

সূত্র : আলজাজিরা