বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত যৌথ অভিযানে কুষ্টিয়ার ডন লিপটনসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে শুক্রবার (৬ জুন) ভোরে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার উজানপুর ইউনিয়নের দুর্বাচারা গ্রামের কয়েকটি বাড়ি ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনীর একটি দল। সেখানে অভিযান চালিয়ে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬টি পিস্তল, একটি বন্দুক কয়েকটি ম্যাগজিন, গুলি ও দেশীয় বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়া এলাকায় এক সময়ের চরমপন্থি সংগঠন গণমুক্তি ফৌজ নামের অস্ত্রবাজ গ্রুপে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির ওরফে লিপটন। আওয়ামী আমলে মূলধারার রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে এলাকায় হয়ে উঠেছিলেন আতঙ্কের মূর্তিমান।
এর আগে ৯০ এর দশকে কলেজ ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় লিপটনের। পরবর্তীতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অতিমাত্রায় সক্রিয় চরমপন্থি সংগঠন গণমুক্তি ফৌজে নাম লেখান তিনি। কুষ্টিয়া শহরে প্রকাশ্যে জামাই বাবুসহ একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করে আলোচনায় আসেন এই লিপটন। এরপর তার অপরাধের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হতে শুরু করে আশপাশের জেলাগুলোতে।
জানা যায়, বহুল বিতর্কিত সাবেক র্যাব কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ‘ক্রসফায়ার’ এর নামে ভাড়ায় মানুষ খুন, গুম ও অস্ত্র কারবারের বিশাল নেটওয়ার্কও ছিল তার। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতনের পর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলে, মত পাল্টে বিএনপির জার্সি গায়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন লিপটন।
এদিকে তার গ্রেপ্তারের খবরে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
ভবানীপুর গ্রামের ধান ব্যবসায়ী রাশিদুল ইসলাম বলেন, এলাকার একটি মারামারি নিয়ে মামলায় সাক্ষী হওয়ার জেরে লিপটন র্যাব দিয়ে আমাকে একটি চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর দুটি অস্ত্র দিয়ে চালান করা হয়। প্রায় চার মাস পর জামিন পায় সেখান থেকে। তবে এখনো হাজিরা দিতে হচ্ছে।
শুধু ব্যবসায়ীদেরই নয়, গত এক যুগে নিজ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের অর্ধশতাধিক মানুষকে র্যাব দিয়ে ফাঁসিয়েছেন তিনি।
র্যাবের একটি সূত্রানুযায়ী, র্যাবের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান জিয়াউল আহসানের (বর্তমানে কারাবন্দি) সোর্স হিসাবেও কাজ করতেন তিনি। জিয়ার নির্দেশে এক সময় ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া গেলে তার নিরাপত্তা দিতেন স্থানীয় র্যাব সদস্যরা। গ্রামের বাড়ি গেলেও সেখানে পাহারায় থাকত র্যাব।
বিগত সময়ে র্যাবের নাম ব্যবহার করে নানা অপকর্ম ঘটালেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিজ এলাকার নিরীহ এক ইউপি মেম্বারকে র্যাবের মাধ্যমে তুলে এনে অস্ত্র রাখার অভিযোগ দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর হাজারো নারী-পুরুষ তার বিরুদ্ধে মহাসড়কে অবরোধ করে মিছিল-সমাবেশ করেছিল। এ ছাড়া ২০১৫ সালে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে গাজীপুরের একটি রিসোর্ট থেকে তুলে নিয়ে যায় র্যাব। এরপর তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
এ ঘটনার জন্য সবুজের পরিবার হানিফকে দায়ী করে একটি মামলা করে। অভিযোগে বলা হয়েছে, র্যাবকে ব্যবহার করে সবুজকে অপহরণ করিয়েছেন লিপটন। কিন্তু ভয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেনি সবুজের পরিবার।
আরো জানা যায়, জিয়াউল আহসানের শেল্টারে থাকাকালীন র্যাবের নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন লিপটন। ৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে র্যাবকে দিয়ে অনেককেই বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।