পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের কৃষক সোহাগ মৃধার দেওয়া কুরবানির গরু ‘কালো মানিক’গ্রহণ করেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি সোহাগ মৃধাকে নির্দেশ দিয়েছেন নিজ এলাকায় ফিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোরবানি সম্পন্ন করতে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে সকাল ৮টার সময় সেই আদরের কালো মানিককে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন সোহাগ মৃধা। পরে ঢাকায় পৌঁছালে সোহাগ মৃধার দেওয়া কুরবানির গরু ‘কালো মানিক’ গ্রহণ করেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ বলেছেন, খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোরবানির পশু উপহার দেওয়ার জন্য সোহাগ মৃধা ও তার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া, সোহাগ মৃধা ও তার পরিবারের জন্য ঈদের বিশেষ উপহার পাঠিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৩৫ মণ ওজনের, ১০ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার বিশাল এই ষাঁড়টি দেখে মুগ্ধ এলাকাবাসী। কুচকুচে কালো রঙের জন্যই কালো মানিক নামে ডাকা হয় তাকে। ষাঁড়টির এক সময় ১০ লাখ টাকা দাম উঠলেও বিক্রি করেননি সোহাগ। বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার হাতে উপহার তুলে দিতে মির্জাগঞ্জ থেকে রওনা দিয়ে ঢাকায় আসেন তিনি। এ জন্য ভাড়া করা হয়েছে তিনটি মিনি ট্রাক। সঙ্গে ছিল ব্যানার, বাজনার দল ও টি-শার্ট পরা সঙ্গীরা।
সোহাগ মৃধা বলেছেন, আজকে আমি গণতন্ত্রের মাকে গরুটি উপহার দিতে যাচ্ছি, আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে ২০২৩ সালে সংবাদমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক কৃষকের গরু উপহার দেওয়ার খবর দেখে আমার ইচ্ছা জেগেছিল যদি কখনো সুযোগ হয় আমিও আমার প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে একটি গরু উপহার দেব।
সোহাগ ২০১৮ সালের শেষের দিকে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি ফ্রিজিয়ান গাভি কিনে লালন-পালন করেন। সপ্তাহ যেতে না যেতেই গরুটি বেশ বড়সড় একটি বকনা বাছুরের জন্ম দেয়। পরে গাভি গরুটি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেন। বাছুরটিকে দেশীয় খাবার ভুসি, খইল, সবুজ ঘাস, খড়কুটা খাইয়ে অতি যত্নে ছয় বছর ধরে লালন-পালন করেন।
আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, সোহাগ মৃধা বিএনপির একজন নিবেদিত কর্মী। পরিবারের সবার সহায়তায় ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি লালন-পালন করছেন।
সোহাগ মৃধার মা হাজেরা বেগম বলেন, ওর মন চাইছে, তাই ও এটা খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে চায়। আমরাও খুশি। ওর বাবা নেই। সামান্য জমি চাষাবাদ করে সংসার চালায়। ছোটবেলা থেকেই সোহাগ বিএনপিকে ভালোবাসে।
সোহাগের স্ত্রী সুলতানা আক্তার পলি বলেছেন, কালো মানিক আর আমার ছোট ছেলে একই বয়সের। ওদের একই রকম স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করেছি। ওর বাবার ইচ্ছা সে তার প্রিয় নেত্রীকে এটি উপহার দেবে। এমন ইচ্ছায় আমরাও খুশি।
২০১৮ সালের শেষ দিকে মাত্র ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি গাভি কিনে যাত্রা শুরু করেন সোহাগ। সপ্তাহ না যেতেই গাভিটি জন্ম দেয় একটি বাছুরের, এই বাছুরই আজকের কালো মানিক। এরপর দীর্ঘ ছয় বছর ধরে পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা আর যত্নে বড় হয়ে ওঠে ষাঁড়টি।