ঢাকা ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এখন মরক্কো Logo তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে মশাল মিছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের Logo সাভারে বাড়ি ফেরার পথে ধ’র্ষ’ণে’র শিকার তরুণী, থানায় মামলা Logo ‘কুরআন প্রশিক্ষণ প্রোগামে হামলা কোনো সভ্য মানুষ করতে পারে না’ Logo নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের উপর যুবদলের হামলার প্রতিবাদে ফেনীতে বিক্ষোভ Logo শিক্ষকদের দাবি না মানলে খুনি হাসিনার চেয়ে পরিণতি আরও বেশি খারাপ হবে: ডাকসু ভিপি Logo জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা Logo শিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে বিইউপি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল Logo সয়দাবাদ রেলস্টেশন এলাকার রেলের মাটি বিক্রি করছেন বিএনপি নেতা Logo পিআর আন্দোলনকে জামায়াতের একটি রাজনৈতিক প্রতারণা বলছেন নাহিদ ইসলাম

ঠুকঠাক শব্দে জেগে উঠেছে নওগাঁর কামারপল্লী

ঈদুল আযহা মানেই কুরবানির ঈদ—আত্মত্যাগ আর মানবতার এক মহান শিক্ষা। আর সেই কুরবানির অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে ধারালো লোহার তৈরি সরঞ্জাম—দা, ছুরি, বঁটি, চাকু, চাপাতি। তাই এই সময়টায় নবজাগরণ ঘটে নওগাঁর কামারপল্লীগুলোতে।

গভীর রাত হোক কিংবা প্রখর দুপুর—লাল আগুনে জ্বলে ওঠা চুলা, ঠুকঠাক হাতুড়ির ছন্দ, আর কর্মব্যস্ত কারিগরদের ঘামে সিক্ত মুখে এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই প্রাচীন শিল্পপল্লী।

কামারপল্লীতে ঢুকতেই চোখে পড়ে ধোঁয়ায় ঝাপসা বাতাস, কানে আসে একটানা লোহার শব্দ। যেন শিল্প আর ইতিহাসের মিলনমেলা! শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সবখানেই এখন কামারদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। পুরোনো দা-বঁটি শাণ দেওয়ার পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ছুরি, চাপাতি ও কুড়াল।

রধুনাথ কর্মকার, গোস্তহাটির মোড়ের এক পুরনো কামার। বললেন, “ঈদের সময়টাই আমাদের সবচেয়ে উপার্জনের সময়। এখন এত অর্ডার আসছে যে দম ফেলার ফুরসত নেই।” তিনি জানান, স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় সরঞ্জাম। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি জিনিস টেকসই হলেও দাম বেশি, আর কাঁচা লোহা তুলনায় সস্তা।

আরেক কারিগর, সদর উপজেলার মনোরঞ্জন পাল, যিনি ২৫ বছর ধরে এই পেশায় আছেন, বলেন, “ঈদের আগে কামারদের জন্য যেন উৎসবের আরেক রূপ। প্রতি বছর এই সময়টার অপেক্ষাতেই থাকি।”

শিবপুর বাজারের রবীন্দ্রনাথ শাহা জানালেন, “তিন দশক ধরে এ পেশায় আছি। ঈদের সময়ই আমাদের বেচাবিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়। যদি সহজ শর্তে ঋণ পেতাম, তাহলে আরও উন্নতভাবে কাজ করতে পারতাম।”

সরঞ্জামের দামের কথায় জানা যায়—ছোট ছুরি ১০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে জবাইয়ের ছুরি ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দা ২০০ থেকে ৩৫০, বঁটি ২৫০ থেকে ৫০০, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে এখন।

নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, “ঈদের এই মৌসুমে কামারদের কদর বেড়ে যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আধুনিক যন্ত্র ও বিদেশি পণ্যের ভিড়ে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আজ হুমকির মুখে।”
তিনি মনে করেন, কামারদের টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

একটা সময় ছিল, কামারেরা ছিলেন গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। আজও তারা সেই শক্তি ধরে রেখেছে, তবে টিকে থাকতে চাইছে যুগোপযোগী সহায়তা। কুরবানির উৎসব শুধু ধর্মীয় অনুশীলনই নয়—এটি আমাদের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও ঐতিহ্যেরও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে কামাররা আছেন অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হয়ে।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এখন মরক্কো

ঠুকঠাক শব্দে জেগে উঠেছে নওগাঁর কামারপল্লী

আপডেট সময় ১০:০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

ঈদুল আযহা মানেই কুরবানির ঈদ—আত্মত্যাগ আর মানবতার এক মহান শিক্ষা। আর সেই কুরবানির অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে ধারালো লোহার তৈরি সরঞ্জাম—দা, ছুরি, বঁটি, চাকু, চাপাতি। তাই এই সময়টায় নবজাগরণ ঘটে নওগাঁর কামারপল্লীগুলোতে।

গভীর রাত হোক কিংবা প্রখর দুপুর—লাল আগুনে জ্বলে ওঠা চুলা, ঠুকঠাক হাতুড়ির ছন্দ, আর কর্মব্যস্ত কারিগরদের ঘামে সিক্ত মুখে এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই প্রাচীন শিল্পপল্লী।

কামারপল্লীতে ঢুকতেই চোখে পড়ে ধোঁয়ায় ঝাপসা বাতাস, কানে আসে একটানা লোহার শব্দ। যেন শিল্প আর ইতিহাসের মিলনমেলা! শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সবখানেই এখন কামারদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। পুরোনো দা-বঁটি শাণ দেওয়ার পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ছুরি, চাপাতি ও কুড়াল।

রধুনাথ কর্মকার, গোস্তহাটির মোড়ের এক পুরনো কামার। বললেন, “ঈদের সময়টাই আমাদের সবচেয়ে উপার্জনের সময়। এখন এত অর্ডার আসছে যে দম ফেলার ফুরসত নেই।” তিনি জানান, স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় সরঞ্জাম। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি জিনিস টেকসই হলেও দাম বেশি, আর কাঁচা লোহা তুলনায় সস্তা।

আরেক কারিগর, সদর উপজেলার মনোরঞ্জন পাল, যিনি ২৫ বছর ধরে এই পেশায় আছেন, বলেন, “ঈদের আগে কামারদের জন্য যেন উৎসবের আরেক রূপ। প্রতি বছর এই সময়টার অপেক্ষাতেই থাকি।”

শিবপুর বাজারের রবীন্দ্রনাথ শাহা জানালেন, “তিন দশক ধরে এ পেশায় আছি। ঈদের সময়ই আমাদের বেচাবিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়। যদি সহজ শর্তে ঋণ পেতাম, তাহলে আরও উন্নতভাবে কাজ করতে পারতাম।”

সরঞ্জামের দামের কথায় জানা যায়—ছোট ছুরি ১০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে জবাইয়ের ছুরি ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দা ২০০ থেকে ৩৫০, বঁটি ২৫০ থেকে ৫০০, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে এখন।

নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, “ঈদের এই মৌসুমে কামারদের কদর বেড়ে যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আধুনিক যন্ত্র ও বিদেশি পণ্যের ভিড়ে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আজ হুমকির মুখে।”
তিনি মনে করেন, কামারদের টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

একটা সময় ছিল, কামারেরা ছিলেন গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। আজও তারা সেই শক্তি ধরে রেখেছে, তবে টিকে থাকতে চাইছে যুগোপযোগী সহায়তা। কুরবানির উৎসব শুধু ধর্মীয় অনুশীলনই নয়—এটি আমাদের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও ঐতিহ্যেরও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে কামাররা আছেন অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হয়ে।