ঢাকা ০৭:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo টিভিতে যে খেলা দেখবেন আজ Logo সভাপতির পর এবার প্রকাশ্যে ববি শিবিরের দপ্তর সম্পাদক Logo রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে আমরা এই পুলিশকে বিএনপির পুলিশ বানাবো না: জি কে গউছ Logo চট্টগ্রামে কর্ণফুলীতে চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিতে ফের মানববন্ধন Logo চট্টগ্রামে পুলিশের উপর হামলাকারী শাকিল অস্ত্রসহ গ্রেফতার Logo খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন, ছাত্রদল নেতার উদ্যোগে দোয়া ও উপহার বিতরণ Logo চট্টগ্রামে পুকুরে ডুবে চবি ছাত্রীসহ প্রাণ গেল ২ জনের Logo চিকিৎসা পেশা নিয়ে আসিফ নজরুলের মন্তব্য রাষ্ট্রবিরোধী: এনসিপি Logo মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী গ্রেপ্তার Logo বিএনপি নেতা দুলুর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন নাটোর জেলা জামায়াত

ঠুকঠাক শব্দে জেগে উঠেছে নওগাঁর কামারপল্লী

 

জেলা (নওগাঁ) :

ঈদুল আযহা মানেই কুরবানির ঈদ—আত্মত্যাগ আর মানবতার এক মহান শিক্ষা। আর সেই কুরবানির অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে ধারালো লোহার তৈরি সরঞ্জাম—দা, ছুরি, বঁটি, চাকু, চাপাতি। তাই এই সময়টায় নবজাগরণ ঘটে নওগাঁর কামারপল্লীগুলোতে।

গভীর রাত হোক কিংবা প্রখর দুপুর—লাল আগুনে জ্বলে ওঠা চুলা, ঠুকঠাক হাতুড়ির ছন্দ, আর কর্মব্যস্ত কারিগরদের ঘামে সিক্ত মুখে এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই প্রাচীন শিল্পপল্লী।

কামারপল্লীতে ঢুকতেই চোখে পড়ে ধোঁয়ায় ঝাপসা বাতাস, কানে আসে একটানা লোহার শব্দ। যেন শিল্প আর ইতিহাসের মিলনমেলা! শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সবখানেই এখন কামারদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। পুরোনো দা-বঁটি শাণ দেওয়ার পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ছুরি, চাপাতি ও কুড়াল।

রধুনাথ কর্মকার, গোস্তহাটির মোড়ের এক পুরনো কামার। বললেন, “ঈদের সময়টাই আমাদের সবচেয়ে উপার্জনের সময়। এখন এত অর্ডার আসছে যে দম ফেলার ফুরসত নেই।” তিনি জানান, স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় সরঞ্জাম। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি জিনিস টেকসই হলেও দাম বেশি, আর কাঁচা লোহা তুলনায় সস্তা।

আরেক কারিগর, সদর উপজেলার মনোরঞ্জন পাল, যিনি ২৫ বছর ধরে এই পেশায় আছেন, বলেন, “ঈদের আগে কামারদের জন্য যেন উৎসবের আরেক রূপ। প্রতি বছর এই সময়টার অপেক্ষাতেই থাকি।”

শিবপুর বাজারের রবীন্দ্রনাথ শাহা জানালেন, “তিন দশক ধরে এ পেশায় আছি। ঈদের সময়ই আমাদের বেচাবিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়। যদি সহজ শর্তে ঋণ পেতাম, তাহলে আরও উন্নতভাবে কাজ করতে পারতাম।”

সরঞ্জামের দামের কথায় জানা যায়—ছোট ছুরি ১০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে জবাইয়ের ছুরি ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দা ২০০ থেকে ৩৫০, বঁটি ২৫০ থেকে ৫০০, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে এখন।

নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, “ঈদের এই মৌসুমে কামারদের কদর বেড়ে যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আধুনিক যন্ত্র ও বিদেশি পণ্যের ভিড়ে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আজ হুমকির মুখে।”
তিনি মনে করেন, কামারদের টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

একটা সময় ছিল, কামারেরা ছিলেন গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। আজও তারা সেই শক্তি ধরে রেখেছে, তবে টিকে থাকতে চাইছে যুগোপযোগী সহায়তা। কুরবানির উৎসব শুধু ধর্মীয় অনুশীলনই নয়—এটি আমাদের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও ঐতিহ্যেরও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে কামাররা আছেন অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হয়ে।

মোঃ রাকিব হোসাইন
নওগাঁ
০৪.০৬.২০২৫
০১৭৭৪০৫৮২১৯

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

টিভিতে যে খেলা দেখবেন আজ

ঠুকঠাক শব্দে জেগে উঠেছে নওগাঁর কামারপল্লী

আপডেট সময় ০৯:০০:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

 

জেলা (নওগাঁ) :

ঈদুল আযহা মানেই কুরবানির ঈদ—আত্মত্যাগ আর মানবতার এক মহান শিক্ষা। আর সেই কুরবানির অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে ধারালো লোহার তৈরি সরঞ্জাম—দা, ছুরি, বঁটি, চাকু, চাপাতি। তাই এই সময়টায় নবজাগরণ ঘটে নওগাঁর কামারপল্লীগুলোতে।

গভীর রাত হোক কিংবা প্রখর দুপুর—লাল আগুনে জ্বলে ওঠা চুলা, ঠুকঠাক হাতুড়ির ছন্দ, আর কর্মব্যস্ত কারিগরদের ঘামে সিক্ত মুখে এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই প্রাচীন শিল্পপল্লী।

কামারপল্লীতে ঢুকতেই চোখে পড়ে ধোঁয়ায় ঝাপসা বাতাস, কানে আসে একটানা লোহার শব্দ। যেন শিল্প আর ইতিহাসের মিলনমেলা! শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সবখানেই এখন কামারদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। পুরোনো দা-বঁটি শাণ দেওয়ার পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ছুরি, চাপাতি ও কুড়াল।

রধুনাথ কর্মকার, গোস্তহাটির মোড়ের এক পুরনো কামার। বললেন, “ঈদের সময়টাই আমাদের সবচেয়ে উপার্জনের সময়। এখন এত অর্ডার আসছে যে দম ফেলার ফুরসত নেই।” তিনি জানান, স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় সরঞ্জাম। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি জিনিস টেকসই হলেও দাম বেশি, আর কাঁচা লোহা তুলনায় সস্তা।

আরেক কারিগর, সদর উপজেলার মনোরঞ্জন পাল, যিনি ২৫ বছর ধরে এই পেশায় আছেন, বলেন, “ঈদের আগে কামারদের জন্য যেন উৎসবের আরেক রূপ। প্রতি বছর এই সময়টার অপেক্ষাতেই থাকি।”

শিবপুর বাজারের রবীন্দ্রনাথ শাহা জানালেন, “তিন দশক ধরে এ পেশায় আছি। ঈদের সময়ই আমাদের বেচাবিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়। যদি সহজ শর্তে ঋণ পেতাম, তাহলে আরও উন্নতভাবে কাজ করতে পারতাম।”

সরঞ্জামের দামের কথায় জানা যায়—ছোট ছুরি ১০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে জবাইয়ের ছুরি ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দা ২০০ থেকে ৩৫০, বঁটি ২৫০ থেকে ৫০০, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে এখন।

নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, “ঈদের এই মৌসুমে কামারদের কদর বেড়ে যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আধুনিক যন্ত্র ও বিদেশি পণ্যের ভিড়ে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আজ হুমকির মুখে।”
তিনি মনে করেন, কামারদের টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

একটা সময় ছিল, কামারেরা ছিলেন গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। আজও তারা সেই শক্তি ধরে রেখেছে, তবে টিকে থাকতে চাইছে যুগোপযোগী সহায়তা। কুরবানির উৎসব শুধু ধর্মীয় অনুশীলনই নয়—এটি আমাদের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও ঐতিহ্যেরও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে কামাররা আছেন অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হয়ে।

মোঃ রাকিব হোসাইন
নওগাঁ
০৪.০৬.২০২৫
০১৭৭৪০৫৮২১৯