ঢাকা ০২:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈদে খাবারের বিষয়ে যেভাবে সতর্ক থাকবেন

কোরবানির ঈদের আনন্দকে উপভোগ করার জন্য প্রায় প্রতিটি ঘরেই মজাদার ও মুখরোচক বিভিন্ন খাবার এর পদ তৈরি করা হয়। তবে সুস্থ থেকে ঈদ পালনে খাবারের ভালো মন্দের দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন, কেননা প্রতিটি পরিবারেই বিভিন্ন বয়সী মানুষ যেমন থাকে, তেমনি বিভিন্ন রোগীও কিন্তু থাকে । তাই কোরবানির ঈদের খাবারের মেনুটি স্বাস্থ্যকর হতে হবে। এর পাশাপাশি গরু খাসির মাংসের নানা পদ তৈরিতে নিরাপদ স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি অবশ্যই মেনে চলতে হবে ।

যারা বাড়ন্ত বয়সী এবং ওজন স্বাভাবিক এবং যাদের কোন শারীরিক জটিলতা বা অসুস্থতা নেই তারা পছন্দমতো বাড়িতে তৈরি সব খাবারই খেতে পারেন, শুধু মাত্রাতিরিক্ত নয় ।

গরু খাসির মাংসে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিনস, মিনারেলস বা খনিজ উপাদান যেমন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, হিম আয়রন। আবার ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি২ বি৩, বি৬, এবং বি১২। এছাড়াও আছে ক্ষতিকারক স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরল। লাল মাংস আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে না উপকারী সেটা নির্ভর করবে আপনি সেটা কতোটা নিয়ম মেনে, কি পরিমাণে খাচ্ছেন।

ঈদের দিনের মুল খাবারের মেনুতে পোলাউ বিরিয়ানি খিচুরি তেহারি এর সাথে লাল মাংসের নানা আইটেম থাকে, তবে যারা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা বা অসুস্থতায় ভুগছেন তারা সাদা ভাত সাথে যেকোনো ১ প্রকারের মাংসের ১ টী আইটেম পরিমিত পরিমানে খেতে পারেন ।

ঈদের সকালে বা বিকালে দুধ সেমাই পায়েস পুডিং ফালুদা কাস্টারড জাতীয় বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর নাশতা পরিমিত খেতে পারেন। তবে মিষ্টান্ন তৈরিতে কন্ডেন্সড মিল্ক বাটার অয়েল মেয়নেজ মারজারিন সাদা চিনি ইত্যাদি ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকুন, ডায়াবেটিস রোগিরা ডেসার্ট তৈরিতে বিকল্প মিষ্টি-কারক স্টেভিয়া দিতে পারেন, এড়িয়ে চলবেন চিনি গুড় মধু মিসরি । খুব ভালো হয় ডেসার্ট এর পরিবর্তে নাশতায় মৌসুমি রঙ্গিন মিষ্টি ফল খাওয়া ।

যাদের হৃদরোগ, লিভার, কিডনির রোগ. উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদী কোন রোগ আছে তারা খুব বেশি সতর্ক থাকবেন গরু খাসির মাংস খাওয়ার বিষয়ে, স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে একদিনে ৬০-৯০ গ্রাম এর বেশি খাবেন না এবং সেদিন অন্য কোন প্রোটিন জাতীয় খাবার খাবেন না ।
আমাদের জানা প্রয়োজন, গরু খাসির বিভিন্ন অংশের মাংসে ফ্যাট প্রোটিন ও কোলেস্টেরল এর পরিমানের তারতম্য আছে, যেমন – গরু খাশির পেছনের রানে, পিঠ দাবনার মাংসে তুলনামুলক কম ফ্যাট ও বেশি প্রোটিন যুক্ত লিন মিট আছে, চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব লিন মিট খেতে । এড়িয়ে চলুন মগজ ভুরি চর্বির টুকরা ।

স্বাস্থ্যকর উপায়ে মাংস রান্নার পদ্ধতি হিসেবে, লিন মিট গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে লেবুর রস সিরকা টক দই আদা রসুন ইত্যাদি যেকোনো মসলা দিয়ে ৩০ মিনিট মাখিয়ে রেখে কম তেলে সবজি দিয়ে রান্না করুন, মাংস ভাজা ভুনা করা বাদ দিন, মাংস ভুনার ঝোল এড়িয়ে চলুন। রান্নায় ঘি, মাখন যথাসম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া সিদ্ধ বা খুবই সামান্য তেলে রান্না করা গোশত দেহের জন্য কম ক্ষতি বয়ে আনে।
কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে ও সার্বিক সুস্থতায় প্রতি ৫০ গ্রাম মাংসের সাথে ১০০ গ্রাম সবজি বা সালাদ খেতে পারেন এবং সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
ভারি খাবারের পর হজমে সহায়ক বোরহানি টক দই এর মাঠা লেবু বা জিরা পানি জাতীয় স্বাস্থ্যকর পানীয় খেতে পারেন, এড়িয়ে চলবেন কল্ড-ড্রিঙ্কস বা কোলা । ঈদে ফাস্ট-ফুড বেকারি ও রেস্তোরাঁর খাবার বর্জন করুন ।

সঠিক উপায়ে খাবার গ্রহণ করে সুস্থ থেকে ঈদ উদযাপন করুন । প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

ট্যাগস :

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে

ঈদে খাবারের বিষয়ে যেভাবে সতর্ক থাকবেন

আপডেট সময় ০৬:৪২:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

কোরবানির ঈদের আনন্দকে উপভোগ করার জন্য প্রায় প্রতিটি ঘরেই মজাদার ও মুখরোচক বিভিন্ন খাবার এর পদ তৈরি করা হয়। তবে সুস্থ থেকে ঈদ পালনে খাবারের ভালো মন্দের দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন, কেননা প্রতিটি পরিবারেই বিভিন্ন বয়সী মানুষ যেমন থাকে, তেমনি বিভিন্ন রোগীও কিন্তু থাকে । তাই কোরবানির ঈদের খাবারের মেনুটি স্বাস্থ্যকর হতে হবে। এর পাশাপাশি গরু খাসির মাংসের নানা পদ তৈরিতে নিরাপদ স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি অবশ্যই মেনে চলতে হবে ।

যারা বাড়ন্ত বয়সী এবং ওজন স্বাভাবিক এবং যাদের কোন শারীরিক জটিলতা বা অসুস্থতা নেই তারা পছন্দমতো বাড়িতে তৈরি সব খাবারই খেতে পারেন, শুধু মাত্রাতিরিক্ত নয় ।

গরু খাসির মাংসে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিনস, মিনারেলস বা খনিজ উপাদান যেমন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, হিম আয়রন। আবার ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি২ বি৩, বি৬, এবং বি১২। এছাড়াও আছে ক্ষতিকারক স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরল। লাল মাংস আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে না উপকারী সেটা নির্ভর করবে আপনি সেটা কতোটা নিয়ম মেনে, কি পরিমাণে খাচ্ছেন।

ঈদের দিনের মুল খাবারের মেনুতে পোলাউ বিরিয়ানি খিচুরি তেহারি এর সাথে লাল মাংসের নানা আইটেম থাকে, তবে যারা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা বা অসুস্থতায় ভুগছেন তারা সাদা ভাত সাথে যেকোনো ১ প্রকারের মাংসের ১ টী আইটেম পরিমিত পরিমানে খেতে পারেন ।

ঈদের সকালে বা বিকালে দুধ সেমাই পায়েস পুডিং ফালুদা কাস্টারড জাতীয় বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর নাশতা পরিমিত খেতে পারেন। তবে মিষ্টান্ন তৈরিতে কন্ডেন্সড মিল্ক বাটার অয়েল মেয়নেজ মারজারিন সাদা চিনি ইত্যাদি ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকুন, ডায়াবেটিস রোগিরা ডেসার্ট তৈরিতে বিকল্প মিষ্টি-কারক স্টেভিয়া দিতে পারেন, এড়িয়ে চলবেন চিনি গুড় মধু মিসরি । খুব ভালো হয় ডেসার্ট এর পরিবর্তে নাশতায় মৌসুমি রঙ্গিন মিষ্টি ফল খাওয়া ।

যাদের হৃদরোগ, লিভার, কিডনির রোগ. উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদী কোন রোগ আছে তারা খুব বেশি সতর্ক থাকবেন গরু খাসির মাংস খাওয়ার বিষয়ে, স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে একদিনে ৬০-৯০ গ্রাম এর বেশি খাবেন না এবং সেদিন অন্য কোন প্রোটিন জাতীয় খাবার খাবেন না ।
আমাদের জানা প্রয়োজন, গরু খাসির বিভিন্ন অংশের মাংসে ফ্যাট প্রোটিন ও কোলেস্টেরল এর পরিমানের তারতম্য আছে, যেমন – গরু খাশির পেছনের রানে, পিঠ দাবনার মাংসে তুলনামুলক কম ফ্যাট ও বেশি প্রোটিন যুক্ত লিন মিট আছে, চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব লিন মিট খেতে । এড়িয়ে চলুন মগজ ভুরি চর্বির টুকরা ।

স্বাস্থ্যকর উপায়ে মাংস রান্নার পদ্ধতি হিসেবে, লিন মিট গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে লেবুর রস সিরকা টক দই আদা রসুন ইত্যাদি যেকোনো মসলা দিয়ে ৩০ মিনিট মাখিয়ে রেখে কম তেলে সবজি দিয়ে রান্না করুন, মাংস ভাজা ভুনা করা বাদ দিন, মাংস ভুনার ঝোল এড়িয়ে চলুন। রান্নায় ঘি, মাখন যথাসম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া সিদ্ধ বা খুবই সামান্য তেলে রান্না করা গোশত দেহের জন্য কম ক্ষতি বয়ে আনে।
কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে ও সার্বিক সুস্থতায় প্রতি ৫০ গ্রাম মাংসের সাথে ১০০ গ্রাম সবজি বা সালাদ খেতে পারেন এবং সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
ভারি খাবারের পর হজমে সহায়ক বোরহানি টক দই এর মাঠা লেবু বা জিরা পানি জাতীয় স্বাস্থ্যকর পানীয় খেতে পারেন, এড়িয়ে চলবেন কল্ড-ড্রিঙ্কস বা কোলা । ঈদে ফাস্ট-ফুড বেকারি ও রেস্তোরাঁর খাবার বর্জন করুন ।

সঠিক উপায়ে খাবার গ্রহণ করে সুস্থ থেকে ঈদ উদযাপন করুন । প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।