টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাস পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্লাসরুমেও সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এ অবস্থায় প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী হাঁটুপানিতে বসেই স্নাতক ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়েছেন। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীরা ও তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকরা।
শুধু মূল ক্যাম্পাসেই নয়, কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরের বিভিন্ন কেন্দ্রেও অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন আরও প্রায় ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। সরেজমিনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ধর্মপুর ডিগ্রি শাখায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
কলেজের ডিগ্রি শাখায় দেখা গেছে, কলা ভবন, বিজ্ঞান ভবন-১, বিজ্ঞান ভবন-২, মিলেনিয়াম ভবন ও অর্থনীতি ভবনের নিচতলায় থাকা ১৫টিরও বেশি পরীক্ষাকক্ষ হাঁটু পানিতে থইথই করছে। পানির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে দেখা গেছে। এছাড়াও কলেজের প্রধান ফটক, অশোকতলা রেলগেট এবং ধর্মপুরের তিনটি প্রবেশ পথও পানিতে ডুবে থাকায় শিক্ষার্থীদের হাঁটু পানিতে হেঁটেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, ভিক্টোরিয়া কলেজের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। অধ্যক্ষসহ কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কলেজে থাকা তিনটি ড্রেনেজ মোটর থাকলেও সেগুলোর কোনো ব্যবহার হয়নি। ফলে শনিবারের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা সবাই দুর্ভোগে পড়েছেন। তাদের দাবি, দ্রুত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা হোক।
মুরাদনগর থেকে আসা সীমা আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছি, কিন্তু এসেই পানিতে ডুবে গেছি। আমার সিট ছিল কলা ভবনের নিচতলায়। রুমে হাঁটুপানি জমে ছিল। সেখানেই বসে পরীক্ষা দিতে হয়েছে।”
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর থেকে আসা কলেজ শিক্ষক আব্দুল জব্বার বলেন, “মেয়েকে ভর্তি পরীক্ষায় নিয়ে এসেছি। তার রুমেও হাঁটুপানি ছিল। পানিতে বসে পরীক্ষা দেওয়ার ফলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তবে মেয়ের পরীক্ষা মোটামুটি ভালো হয়েছে।”
এ বিষয়ে ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল বাশার ভূঁঞা বলেন, “জলাবদ্ধতা সমস্যাটি দীর্ঘ ২০ বছরের। আমি মাত্র কিছুদিন হলো যোগ দিয়েছি। এ সমস্যার সমাধানে একাধিক প্রকল্প শিক্ষা প্রকৌশলী দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুমোদন পেলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে।”
তবে শিক্ষকদের গাফিলতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তারা না বুঝেই মন্তব্য করছেন। মোটর ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি ছিল না, তাই সেগুলো চালানো হয়নি।”
এবারের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করেন ১৪,১৬৩ জন। এর মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন ২,২৮০ জন, এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১১,৮৮৩ জন।