ঢাকা ০১:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo রুয়ার কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় অধ্যাপক মহিউদ্দীনকে নওগাঁ উন্নয়ন ফোরামের সংবর্ধনা Logo খোকসা থানায় চোরাই ট্রলি গায়েব, ভুয়া স্ট্যাম্পে ধামাচাপা Logo চালকের ঘুমের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে মাইক্রোবাসটি,একই পরিবারের ৭ জন নিহত Logo মেহেরপুরের সড়কে ককটেল ফাটিয়ে গণডাকাতি Logo জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিএনপি প্রতিক্রিয়া জানাবে আজ Logo এখন জনগণের ভয়ে সরকার পোস্ট ডিলিট করে Logo বিচারিক হত্যাকাণ্ড ‘শাহবাগ-আওয়ামী যৌথ প্রজেক্টের ফল’: ঢাবি শিবির সেক্রেটারি Logo বেগমগঞ্জে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে মাইক্রোবাস, নিহত ৭ Logo কক্সবাজার নয়, ওয়াশিংটনে আছেন পিটার হাস Logo ভারতে আকস্মিক বন্যায় ৯ সেনাসহ দেড় শতাধিক নিখোঁজ

গ্রীষ্মকাল মানেই লিচুর মৌসুম — মিষ্টি স্বাদের ছোট্ট ফলের ভেতর লুকানো অসাধারণ পুষ্টিগুণ!

লিচু, বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন ফলের রাজসিংহাসনে অন্যতম একটি নাম। ছোট আকার, লালচে খোসা আর রসালো ভেতরের জন্য এই ফল শুধু স্বাদে নয়, স্বাস্থ্যেও অতুলনীয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Litchi chinensis। ইংরেজিতে একে বলা হয় Lychee.

বাংলাদেশে লিচুর জন্য বিখ্যাত অঞ্চল হলো দিনাজপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মেহেরপুর ও যশোর। এর মধ্যে দিনাজপুরের বোম্বাই লিচু ও চায়না-৩ জাতের লিচু বেশ জনপ্রিয়।

আপনি জানেন কি, লিচু শুধু মিষ্টি আর রসালোই নয়—এটি একটি শক্তিশালী পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফল?

লিচুর পুষ্টিগুণ: (প্রতি ১০০ গ্রামে)

ভিটামিন C,
পটাশিয়াম,
কপার,
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (পলিফেনলস),
ফাইবার,
প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ),
পানি (প্রায় ৭৮ – ৮০ %)

লিচু খাওয়ার উপকারিতা:

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
লিচুতে থাকা উচ্চমাত্রার ভিটামিন C শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।

২. ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও কপার ত্বককে উজ্জ্বল রাখে, বার্ধক্যের ছাপ কমায় এবং চুলের গঠন উন্নত করে।

৩. হজমে সহায়ক:
লিচুর ফাইবার হজম প্রক্রিয়া সহজ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

৪. হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে:
লিচুতে থাকা পলিফেনলস কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে।

৫. পানি শূন্যতা রোধ করে:
গ্রীষ্মকালে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। লিচুর উচ্চ জলীয় উপাদান শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে।

৬. ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর করে:
প্রাকৃতিক চিনি ও ভিটামিন B-কমপ্লেক্স শারীরিক ও মানসিক শক্তি জোগায়।

লিচু খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্যকর উপায়:

১. টাটকা লিচু ফল হিসেবে খাওয়া,
২. লিচুর শরবত বা জুস,
৩. ফলের সালাদে লিচু যোগ করা,
৪. লিচু দিয়ে বানানো হালকা ডেজার্ট,
৫. লিচু স্মুদি বা কুলফি,
৬. ঘরোয়া লিচু জ্যাম বা জেলি।

সতর্কতা ও ক্ষতিকর দিক:

১. অতিরিক্ত লিচু খেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে, বিশেষ করে খালি পেটে। (হাইপোগ্লাইসেমিয়া বিষয়টি: এই সমস্যা মূলত বেশি পাকা বা খালি পেটে প্রচুর পরিমাণ লিচু খেলে শিশুদের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে।
ভারতে ২০১৩–২০১৭ সালের মধ্যে মুজাফফরপুরে কিছু শিশু মৃত্যুর পেছনে লিচু (বিশেষত খালি পেটে খাওয়া) দায়ী ছিল বলে বলা হয়েছিল। তবে এটি স্বাভাবিক খাওয়ার ক্ষেত্রে বড়দের জন্য সাধারণত সমস্যা করে না।)

২. ডায়াবেটিস রোগীরা লিচু খাওয়ার সময় পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

৩. বাজার থেকে কেনার সময় রাসায়নিক মুক্ত লিচু কিনুন।

৪. পাকা ফল ছাড়া কাঁচা লিচু খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে।

শেষ কথা:
“লিচু” শুধু গ্রীষ্মকালীন এক ফল নয়—এটি গ্রীষ্মের প্রশান্তি, পুষ্টির ভাণ্ডার, আর এক মুঠো মিষ্টি ভালো লাগার নাম। পরিমিত লিচু খান, সুস্থ থাকুন—এই গরমে শরীরকে রিফ্রেশ করুন লিচুর স্বাদে ও শক্তিতে।

রংপুর জেলা প্রতিনিধি মুশফিকুর রহমান।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

রুয়ার কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় অধ্যাপক মহিউদ্দীনকে নওগাঁ উন্নয়ন ফোরামের সংবর্ধনা

গ্রীষ্মকাল মানেই লিচুর মৌসুম — মিষ্টি স্বাদের ছোট্ট ফলের ভেতর লুকানো অসাধারণ পুষ্টিগুণ!

আপডেট সময় ০১:৫৬:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

লিচু, বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন ফলের রাজসিংহাসনে অন্যতম একটি নাম। ছোট আকার, লালচে খোসা আর রসালো ভেতরের জন্য এই ফল শুধু স্বাদে নয়, স্বাস্থ্যেও অতুলনীয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Litchi chinensis। ইংরেজিতে একে বলা হয় Lychee.

বাংলাদেশে লিচুর জন্য বিখ্যাত অঞ্চল হলো দিনাজপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মেহেরপুর ও যশোর। এর মধ্যে দিনাজপুরের বোম্বাই লিচু ও চায়না-৩ জাতের লিচু বেশ জনপ্রিয়।

আপনি জানেন কি, লিচু শুধু মিষ্টি আর রসালোই নয়—এটি একটি শক্তিশালী পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফল?

লিচুর পুষ্টিগুণ: (প্রতি ১০০ গ্রামে)

ভিটামিন C,
পটাশিয়াম,
কপার,
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (পলিফেনলস),
ফাইবার,
প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ),
পানি (প্রায় ৭৮ – ৮০ %)

লিচু খাওয়ার উপকারিতা:

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
লিচুতে থাকা উচ্চমাত্রার ভিটামিন C শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।

২. ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও কপার ত্বককে উজ্জ্বল রাখে, বার্ধক্যের ছাপ কমায় এবং চুলের গঠন উন্নত করে।

৩. হজমে সহায়ক:
লিচুর ফাইবার হজম প্রক্রিয়া সহজ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

৪. হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে:
লিচুতে থাকা পলিফেনলস কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে।

৫. পানি শূন্যতা রোধ করে:
গ্রীষ্মকালে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। লিচুর উচ্চ জলীয় উপাদান শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে।

৬. ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর করে:
প্রাকৃতিক চিনি ও ভিটামিন B-কমপ্লেক্স শারীরিক ও মানসিক শক্তি জোগায়।

লিচু খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্যকর উপায়:

১. টাটকা লিচু ফল হিসেবে খাওয়া,
২. লিচুর শরবত বা জুস,
৩. ফলের সালাদে লিচু যোগ করা,
৪. লিচু দিয়ে বানানো হালকা ডেজার্ট,
৫. লিচু স্মুদি বা কুলফি,
৬. ঘরোয়া লিচু জ্যাম বা জেলি।

সতর্কতা ও ক্ষতিকর দিক:

১. অতিরিক্ত লিচু খেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে, বিশেষ করে খালি পেটে। (হাইপোগ্লাইসেমিয়া বিষয়টি: এই সমস্যা মূলত বেশি পাকা বা খালি পেটে প্রচুর পরিমাণ লিচু খেলে শিশুদের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে।
ভারতে ২০১৩–২০১৭ সালের মধ্যে মুজাফফরপুরে কিছু শিশু মৃত্যুর পেছনে লিচু (বিশেষত খালি পেটে খাওয়া) দায়ী ছিল বলে বলা হয়েছিল। তবে এটি স্বাভাবিক খাওয়ার ক্ষেত্রে বড়দের জন্য সাধারণত সমস্যা করে না।)

২. ডায়াবেটিস রোগীরা লিচু খাওয়ার সময় পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

৩. বাজার থেকে কেনার সময় রাসায়নিক মুক্ত লিচু কিনুন।

৪. পাকা ফল ছাড়া কাঁচা লিচু খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে।

শেষ কথা:
“লিচু” শুধু গ্রীষ্মকালীন এক ফল নয়—এটি গ্রীষ্মের প্রশান্তি, পুষ্টির ভাণ্ডার, আর এক মুঠো মিষ্টি ভালো লাগার নাম। পরিমিত লিচু খান, সুস্থ থাকুন—এই গরমে শরীরকে রিফ্রেশ করুন লিচুর স্বাদে ও শক্তিতে।

রংপুর জেলা প্রতিনিধি মুশফিকুর রহমান।