ফিলিস্তিন ও দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষককে (বিশেষ ধরনের পোস্টিং) ওএসডি করা হয়েছে।
সোমবার (২৬ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে (বিশেষ ধরনের পোস্টিং) ওএসডি করে ময়মনসিংহে গৌরিপুর সরকারি কলেজে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা।
জানা গেছে, গত ৬ এপ্রিল গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা ইস্যুতে ফেসবুকে পোস্ট করেন অধ্যাপক মেহেরুন নেছা। তার পোস্টের পর সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় তোলেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওই শিক্ষককে বয়কটের ডাক দেন তারা। বিভাগ থেকে তাকে অপসারণ না করলে ক্লাস বর্জনের ঘোষণাও আসে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কলেজ প্রশাসন।
বিতর্কিত ওই পোস্টে অধ্যাপক মেহেরুন নেছা লিখেন, ‘গাজা নিয়ে ইসরায়েলকে দায়ী করার বিষয়টা কিন্তু ঘটনার পরের ঘটনা। মূল ঘটনা হলো, গাজার এই পরিণতির জন্য হামাসের কট্টর-প্রতিক্রিয়াশীল-একরোখা রাজনীতিই দায়ী।’ তার পোস্ট মুহূর্তেই স্ক্রিনশট নিয়ে নেন শিক্ষার্থীরা। পরে যার যার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে তার পোস্ট করে প্রতিবাদ জানান তারা। শিক্ষার্থীরা এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে অধ্যাপক মেহেরুন নেছাকে ডিপার্টমেন্ট থেকে বয়কট করার ঘোষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। পরে ওই পোস্ট ডিলিট করে দিয়ে ফেসবুক প্রোফাইল লক করে দেন ওই অধ্যাপক। সোমবার ( ৭ এপ্রিল) ক্ষমাপ্রার্থনা করে ফের আরেকটি পোস্ট করেন অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা।
ওই পোস্টে মেহেরুন নেছা লিখেন, “গতকাল ফিলিস্তিন নিয়ে আমার টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছিলাম। সে স্ট্যাটাসটি হয়তো আমি যা বলতে চেয়েছি, তা আমার অক্ষমতার কারণে অন্যভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। সেজন্য আমি বিনীতভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের এই রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি আমি নিতে পারিনি । আমি একজন মুসলিম নারী এবং এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা অটুট। ব্যক্তিগতভাবে, আমি নারীর পোশাক পরিধানের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল । বোরকা বা হিজাবের প্রতি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করি না। অতীতে, কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে পর্দা সংক্রান্ত কিছু স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, যা ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত করতে পারে- সেজন্য আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত। আমার শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানতুল্য। সবসময় আমি তাদের মঙ্গল কামনা করেছি এবং আমৃত্যু তা করে যাবো। আমার অতীতের অসচেতন কোনো কাজে যদি কেউ দুঃখ পেয়েছেন, আমি তার জন্যও ক্ষমাপ্রার্থী। আমি চাই না আমাদের আর কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকুক।”
ওএসডির বিষয়ে জানতে অধ্যাপক মেহেরুন্নেছার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।