প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার খুলনা আসছেন। তিনি দলীয় জনসভাস্থল থেকে খুলনার ২২টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। গোটা শহর ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে।
বিভিন্ন সড়কে তোরণ বানানো হয়েছে। জেলা-উপজেলায় উন্নয়নের প্রচারপত্র বিলি হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এদিকে নাগরিক সংগঠন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খুলনায় বিমানবন্দর প্রকল্পের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারসহ ১৮ দফা দাবি জানিয়েছে।
মনোনয়নপ্রত্যাশী ও বর্তমান সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্যক্তিগত প্রচারে জোর দিয়েছেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জনসভা ঘিরে কয়েক কোটি টাকার তোরণ, ব্যানার আর প্যানাফ্লেক্স নির্মাণ করেছেন দলটির নেতাকর্মী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই সমাবেশের কারণে বিভাগের ১০ জেলার দলীয় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ খুলনা মহানগর শাখার যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং খুলনা-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী শেখ মো. ফারুক হাসান হিটলু কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আসার কারণে খুলনার মানুষ উচ্ছ্বসিত। নগরীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, আইসিটি এবং সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে যে পরিবর্তন হয়েছে তাতে খুলনাবাসী বেশ খুশি।
আওয়ামী লীগ খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে উত্সবের আমেজ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে দুপুর ২টায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি রয়েছে।
২২টি প্রকল্প উদ্বোধন
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো তালিকায় মোট ২২টি উদ্বোধনযোগ্য প্রকল্প আছে।
এর মধ্যে গণপূর্ত বিভাগের আটটি; স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১০টি, সুন্দরবন পর্যটন উন্নয়নে একটি, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের একটি এবং সিটি করপোরেশন ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি করে প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুলনায় স্বাগত জানানোর পাশাপাশি খুলনায় বিমানবন্দর প্রকল্পের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে দ্রুত কাজ শুরু করাসহ ১৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছে।
দাবিগুলো হচ্ছে—খুলনা বিমানবন্দর প্রকল্পের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে দ্রুত কাজ শুরু করা, খুলনা-মোংলা-ভাঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা, রূপসা-তেরখাদা ও দীঘলিয়াকে খুলনা শহরের সঙ্গে সংযোগের জন্য টানেল নির্মাণ করা, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ড্রেজিংব্যবস্থা অব্যাহত রাখা, খুলনায় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা, খুলনা-যশোর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করা, খুলনায় অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন, স্বতন্ত্র ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন, আমদানি-রপ্তানির সুবিধার্থে মোংলা পোর্টের অদূরে কনটেইনার স্টেশন স্থাপন, খুলনার পাটকলসহ বন্ধ সব মিল-কলকারখানা চালুর ব্যবস্থা করা, সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন অঞ্চল গড়ে তোলা; ভৈরব, রূপসা ও পশুর নদের নাব্যতা বাড়াতে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা, খুলনায় পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্র চালু করা, সরকারি উদ্যোগে খুলনায় বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং একটি চিড়িয়াখানা স্থাপন করা, খুলনা প্রেস ক্লাবের বহুতল ভবন নির্মাণে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা, খুলনায় মেরিন একাডেমি ও ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা, খুলনা আলিয়া মাদরাসা ও মহিলা আলিয়া মাদরাসাসহ আহসান উল্লাহ কলেজ, হাজি আব্দুল মালেক কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, দৌলতপুর দিবা-নৈশ কলেজ সরকারি করা, খুলনা-যশোর-দর্শনা ডাবল রেললাইন স্থাপন করা, খুলনা থেকে রেলযোগে ঢাকা যাওয়ার জন্য খুলনা-গোপালগঞ্জ রেললাইন স্থাপন করা, মুন্সীগঞ্জ-সাতক্ষীরা-যশোর রেললাইন স্থাপন এবং খুলনা-কালনা-ঢাকা সরাসরি রেল যোগাযোগব্যবস্থা চালু করা, শহর রক্ষা বাঁধ ও রিভারভিউ পার্ক স্থাপন করা এবং খুলনায় নভো থিয়েটার দ্রুত বাস্তবায়ন ও ডায়াবেটিক হাসপাতালে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা।