ঢাকা ১২:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুভ জন্মদিন সাহিত্যের বরপুত্র হুমায়ূন আহমেদ

শুভ জন্মদিন সাহিত্যের বরপুত্র হুমায়ূন আহমেদ

পাঠক বিবেচনায় হ‌ুমায়ূন আহমেদ এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। তার প্রতিভার বিস্তার ঘটে উপন্যাসে। নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। তিনি বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীরও জনক। দেশে এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়, যারা তাঁর অন্তত একটি নাটক দেখেনি কিংবা তাঁর কোনো বই পড়েনি।

আজ নন্দিত এই কথাসাহিত্যিকের হ‌ুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মদিন। দীর্ঘকাল ধরে তার লেখার জাদুতে মোহিত পাঠক। জননন্দিত এই কথাশিল্পী বলেন, পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে…কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।

তিনি তার লেখায় প্রতি প্যারায় প্যারায় পাঠককে চমকে দিতেন। অনেক লেখক দেখা যায় দু–চার পাতা পর একটা চমক দেন। অনেক লেখক একটা অধ্যায়ের শেষে চমক রাখেন, যাতে পাঠক পরের অধ্যায় পড়তে আগ্রহ বোধ করেন। আর হ‌ুমায়ূন আহমেদ পাঠককে চমকে দেন ক্ষণে ক্ষণে। দু–চার-দশ লাইন পরপরই চমক থাকে তার। আর পাঠক চমকাতে চমকাতে একটা বিস্ময়কর ঘোরের মধ্যে চলে যান। এ দেশের সাহিত্য ভুবনে ভারতীয় লেখকদের একচেটিয়া আধিপত্যকে ম্লান করে আপন লেখনীর অনবধ্যতায় গড়ে দিয়েছেন সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্পের ভিত্তিভূমি। একইভাবে বিচিত্র বিষয়ের নাটক কিংবা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শিল্পরসিকদের দিয়েছেন বিশুদ্ধ বিনোদনের খোরাক।

তার জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়ায়। ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার অন্য দুই ভাইও বরেণ্য ও প্রতিভাবান। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।

তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক। অথচ কথা সাহিত্যে- নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরিপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প, এমন ঝড় তোলার মতো উপন্যাস উপহার দিয়েছেন আমাদের। তার বইয়ের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে তিনশ’র উপরে।

বিজ্ঞানের ছাত্র হ‌ুমায়ূন আহমেদ প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়েই সাড়া ফেলেন। তার উপন্যাসের নাট্যরূপ ধারাবাহিকভাবে টেলিভিশনে প্রচারিত হলে সেখানেও দর্শকদের সাড়া। আবার যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তা দেখতেও শহর ভেঙে পড়ে। তার চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নয় নম্বর বিপদ সংকেত ও ঘেটুপুত্র কমলা সবগুলোই ছিলো দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসা সফল।

চলচ্চিত্র বা নাটকের জন্য তিনি গান লিখেছেন, আবার তাতে সুরও দিয়েছেন- যা আজও জনপ্রিয়। ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো ’, ‘চাঁদনী পসরে কে’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’, ’এক যে ছিল সোনার কন্যা’, ‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা বেড়া ভাঙা চালার ফাঁকে’, ‘চাঁদনী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়’ এসব গান আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক `একুশে পদক` লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি আমাদের ছেড়ে যান। মরণব্যাধি ক্যানসারের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাবার পর সেখানেই তিনি মারা যান। মাত্র ৬৪ বছর বয়সেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। সেখান থেকে মরদেহ ঢাকায় আনার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে লাখো মানুষের অশ্রু পুষ্পতে সিক্ত হন তিনি। ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। হ‌ুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে জন্মদিন উপলক্ষে তার নিজ হাতে গড়া নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজন রাখা হয়েছে। চ্যানেল আইও সকাল থেকে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠান করছে। দিনব্যাপী চলবে তাদের অনুষ্ঠানমালা।নেত্রকোনায়ও দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

অ্যাডভোকেট সাইফুলের জানাজায় হাসনাত-সারজিস

শুভ জন্মদিন সাহিত্যের বরপুত্র হুমায়ূন আহমেদ

আপডেট সময় ১০:০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৩

পাঠক বিবেচনায় হ‌ুমায়ূন আহমেদ এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। তার প্রতিভার বিস্তার ঘটে উপন্যাসে। নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। তিনি বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীরও জনক। দেশে এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়, যারা তাঁর অন্তত একটি নাটক দেখেনি কিংবা তাঁর কোনো বই পড়েনি।

আজ নন্দিত এই কথাসাহিত্যিকের হ‌ুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মদিন। দীর্ঘকাল ধরে তার লেখার জাদুতে মোহিত পাঠক। জননন্দিত এই কথাশিল্পী বলেন, পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে…কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।

তিনি তার লেখায় প্রতি প্যারায় প্যারায় পাঠককে চমকে দিতেন। অনেক লেখক দেখা যায় দু–চার পাতা পর একটা চমক দেন। অনেক লেখক একটা অধ্যায়ের শেষে চমক রাখেন, যাতে পাঠক পরের অধ্যায় পড়তে আগ্রহ বোধ করেন। আর হ‌ুমায়ূন আহমেদ পাঠককে চমকে দেন ক্ষণে ক্ষণে। দু–চার-দশ লাইন পরপরই চমক থাকে তার। আর পাঠক চমকাতে চমকাতে একটা বিস্ময়কর ঘোরের মধ্যে চলে যান। এ দেশের সাহিত্য ভুবনে ভারতীয় লেখকদের একচেটিয়া আধিপত্যকে ম্লান করে আপন লেখনীর অনবধ্যতায় গড়ে দিয়েছেন সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্পের ভিত্তিভূমি। একইভাবে বিচিত্র বিষয়ের নাটক কিংবা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শিল্পরসিকদের দিয়েছেন বিশুদ্ধ বিনোদনের খোরাক।

তার জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়ায়। ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার অন্য দুই ভাইও বরেণ্য ও প্রতিভাবান। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।

তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক। অথচ কথা সাহিত্যে- নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরিপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প, এমন ঝড় তোলার মতো উপন্যাস উপহার দিয়েছেন আমাদের। তার বইয়ের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে তিনশ’র উপরে।

বিজ্ঞানের ছাত্র হ‌ুমায়ূন আহমেদ প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়েই সাড়া ফেলেন। তার উপন্যাসের নাট্যরূপ ধারাবাহিকভাবে টেলিভিশনে প্রচারিত হলে সেখানেও দর্শকদের সাড়া। আবার যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তা দেখতেও শহর ভেঙে পড়ে। তার চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নয় নম্বর বিপদ সংকেত ও ঘেটুপুত্র কমলা সবগুলোই ছিলো দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসা সফল।

চলচ্চিত্র বা নাটকের জন্য তিনি গান লিখেছেন, আবার তাতে সুরও দিয়েছেন- যা আজও জনপ্রিয়। ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো ’, ‘চাঁদনী পসরে কে’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’, ’এক যে ছিল সোনার কন্যা’, ‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা বেড়া ভাঙা চালার ফাঁকে’, ‘চাঁদনী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়’ এসব গান আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক `একুশে পদক` লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি আমাদের ছেড়ে যান। মরণব্যাধি ক্যানসারের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাবার পর সেখানেই তিনি মারা যান। মাত্র ৬৪ বছর বয়সেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। সেখান থেকে মরদেহ ঢাকায় আনার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে লাখো মানুষের অশ্রু পুষ্পতে সিক্ত হন তিনি। ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। হ‌ুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে জন্মদিন উপলক্ষে তার নিজ হাতে গড়া নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজন রাখা হয়েছে। চ্যানেল আইও সকাল থেকে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠান করছে। দিনব্যাপী চলবে তাদের অনুষ্ঠানমালা।নেত্রকোনায়ও দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।