প্রাকৃতিক সুপারফুড — আমলকী, আমাদের উপমহাদেশের চিরচেনা একটি ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Phyllanthus emblica, ইংরেজি নাম: Amla, Amloki, Malacca tree, emblic myrobalan, or emblic myrobalan.ছোট এই সবুজ ফলটির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অসংখ্য ঔষধিগুণ। হাজার বছর ধরে এটি আয়ুর্বেদ ও লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এটি ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণে ভরপুর, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আমলকী দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে, হজম শক্তি উন্নত করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নিই আমলকীর গুণাগুণ, উপকারিতা ও কিছু সতর্কতা।
আমলকীর পুষ্টিগুণ: (প্রতি ১০০ গ্রামে)
ভিটামিন C: ৪৫০-৭০০ মিগ্রা (কমলার চেয়ে ২০ গুণ বেশি)
ক্যালসিয়াম
আয়রন
ফাইবার
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ফসফরাস
পলিফেনল
আমলকী খাওয়ার উপকারিতা:
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,
আমলকীতে থাকা প্রাকৃতিক ভিটামিন C ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ঠান্ডা-জ্বরের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
২. চুল ও ত্বকের যত্নে অনন্য,
আমলকী চুল পড়া কমায়, খুশকি দূর করে ও চুল ঘন-কালো রাখে। এটি ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায় ও ব্রণ/ফুসকুড়ি প্রতিরোধ করে।
৩. আঁশ ও প্রাকৃতিক এনজাইম সমৃদ্ধ হওয়ায় আমলকী হজমে সহায়তা করে, গ্যাস্ট্রিক কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক,
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত খেলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে।
৫. লিভার ও হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা দেয়,
আমলকী লিভার পরিষ্কার রাখে ও হেপাটাইটিস প্রতিরোধে কার্যকর। এছাড়া এটি কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যে সহায়তা করে।
৬. দৃষ্টিশক্তি ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী,
ভিটামিন A ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় চোখের ছানি পড়া রোধ করে ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
৭. রক্তশুদ্ধিকরণ ও ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক,
এতে থাকা গ্যালিক অ্যাসিড ও এলাজিক অ্যাসিড ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধে কাজ করে।
আমলকী খাওয়ার কিছু উপায়:
১. কাঁচা আমলকী (খোসাসহ বা খোসা ছাড়া)
২. আমলকী আচার
৩. আমলকী জুস বা শরবত
৪. আমলকী মোরব্বা
৫. শুকনো আমলকীর গুঁড়া (ভেজে বা কাঁচা)
৬. আমলকী তেল (চুলের যত্নে)
সতর্কতা ও ক্ষতিকর দিক: যদিও আমলকী একটি নিরাপদ প্রাকৃতিক ফল, তবুও কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত,
১. অতিরিক্ত খেলে গ্যাস বা অম্বল হতে পারে,
২. রক্ত পাতলা করার ওষুধ গ্রহণকারীদের সাবধানে খাওয়া উচিত,
৩. যাদের হাই অ্যাসিডিটি সমস্যা আছে, তাদের জন্য কাঁচা আমলকী খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে,
৪. ডায়রিয়া থাকলে একসাথে বেশি আমলকী না খাওয়াই ভালো।
৫. যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে বা যারা ডায়াবেটিস-বিরোধী ওষুধ সেবন করেন, তাদের জন্য আমলকী ভালো নাও হতে পারে।
৬. যাদের পেটের সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তাদের জন্য বেশি পরিমাণে আমলকী খাওয়া উচিত নয়।
৭. গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের আমলকী খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শেষ কথা:
আমলকী শুধু একটি ফল নয়—এটি একটি প্রাকৃতিক ওষুধ। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই ফলটি রাখলে আপনি শরীরকে অনেক রকম রোগ থেকে রক্ষা করতে পারেন। তবে মাত্রার অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।