চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মানের পর থেকে এ পর্যন্ত চবক এর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে আসছে। NCT টার্মিনালটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এর সাথে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং করার জন্য পর্যায়ক্রমে সংগৃহিত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত ইকুইপমেন্ট সমূহ। বর্তমানে NCT তে ৫ টি বার্থের অর্থাৎ একই সাথে ৫টি জাহাজে কন্টেইনার উঠা-নামার জন্য ১৪ টি QGC রয়েছে। পাঁচটি বার্থের জন্য ১০ টি QGC প্রয়োজন হলেও শুধুমাত্র Operation Undropped রাখতে ৪ টি অতিরিক্ত QGC রয়েছে।
International Ranking এ জাহাজের Turn Around Time কে বিবেচনায় ধরা হয়। সেই ক্ষেত্রে QGC এর Performanceই মুখ্য। QGC গুলোর Manufacturer Manual এ প্রতি ঘন্টায় ৩০ টি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করার সক্ষমতার কথা বলা হলেও System Loss এর কারণে পৃথিবীর কোথাও ২৫ টির বেশী সম্ভব হয় না। বর্তমানে আমাদের দেশীয় অপারেটরগণ ২২ টি পর্যন্ত হ্যান্ডলিং করতে পারেন। NCT তে ইয়ার্ড অপারেশন এর জন্য রয়েছে ৩০ টি RTG ও ৮ টি স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার ছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি।
উন্নত বিশ্বের বন্দর গুলোতে বন্দর অভ্যন্তরে মালামাল খালাসের কোন ব্যবস্থা নেই। আমরা এখনও সেই সক্ষমতা অর্জন করতে পারি নি। বর্তমানে Total Import এর মাত্র ১৬-১৮ শতাংশ মালামাল বন্দরের বাহিরে Off dock গুলোতে ডেলিভারী হয়ে থাকে। এছাড়া রয়েছে নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারী না নেওয়া(অকশান) কন্টেইনার প্রায় ১২-১৫ শতাংশ। যা ইয়ার্ড গুলোর সক্ষমতা ১২-১৫ শতাংশ হ্রাস করছে।
NCT তে নিযুক্ত ইকুইপমেন্ট সমূহের সকল অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেক লিং কর্তৃক নিয়োগকৃত। এদেরকে বন্দর এর আওতায় এনে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করলে কাজের গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে। ২০০৬ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সাইফ পাওয়ারটেক লিঃ পরবর্তী সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় মদদে বন্দরের সকল কাজ কুক্ষিগত করে। দুর্নীতিগ্রস্ত এই প্রতিষ্ঠান টি এতটাই বেপরোয়া ছিল যে, সাইফের বিরুদ্ধে কথা বলে অনেক কর্মকর্তা OSD বা বন্দর থেকে বিতাড়িত হয়েছেন।
এমতাবস্থায়, NCTর সক্ষমতাকে গতিশীল রাখতে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার জন্য আমাদের প্রস্তাবনা আপনার সদয় অবগতির জন্য পেশ করছিঃ-
প্রস্তাবনা-১: QGC গুলোর আন্তর্জাতিক মানের সক্ষমতা বজায় রাখতে দেশীয় অপারেটরের পাশাপাশি কমপক্ষে ১০ জন বিদেশী অপারেটর নিয়োগ।
প্রস্তাবনা-২: Export Container সমূহ জাহাজ বার্থিং এর ১২ ঘন্টা আগে পোর্টে ডাম্পিং করে রাখতে হবে।
প্রস্তাবনা-৩: NCT,CCT তে নিয়োজিত সাইফ পাওয়ারটেক লিঃ কর্তৃক নিয়োগকৃত সকল অপারেটরদের NCT প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করে চট্টগ্রাম বন্দরের আওতায় ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা।
প্রস্তবনা-৪: চট্টগ্রাম বন্দরের সকল ইয়ার্ড হতে অকশান কন্টেইনার অপসারণ করা । এটা নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে পরিগণিত করা।
প্রস্তাবনা-৫: ফ্যাসিষ্ট সরকারের মদদপুষ্ট সাইফ পাওয়ারটেক লিঃ থেকে কাজ বুঝে নিয়ে বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার ব্যবস্থা করা।
প্রস্তাবনা-৬: চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত বন্দর পরিদর্শন ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থাকরণ।
বিশ্বের বন্দর ব্যবস্থাপনার ranking-এ চট্টগ্রাম বন্দর ৫৮ তম অবস্থানে রয়েছে। গত বছরও আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী আয় ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছি। প্রতিনিয়তই আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রতিযোগীতায় এগিয়ে যাচ্ছি। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই সফলতা সেই বন্দর শ্রমিক কর্মচারীদের কর্মে আরো উৎসাহ প্রদান জরুরী তাই শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য নিম্নে বিষয় গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক মানের বন্দর হওয়ায় আন্তর্জাতিক মানের স্বতন্ত্র পে-স্কেল অনুসরন করা।
* পোর্ট ডিউটি ভাতা ১০০০০/- টাকা ( চবক বোর্ড সভায় অনুমোদিত ) বাস্তবায়ন করা।
* ঝুঁকি ভাতা বেসিকের ৩০% ( চবক বোর্ড সভায় অনুমোদিত ) বাস্তবায়ন করা।
* প্রতি বছর বন্দর দিবসে ( পোর্ট ডে ) বন্দরের লভ্যাংশের ৫% সমবন্টন করা।
* সসরকার ঘোষিত গৃহনির্মাণ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
* চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের সাথে সমন্বয়ের স্বার্থে সিবিএ নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রমিক প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা দরকার।
উল্লেখ্য: আমরা সকল প্রকার বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছি,এক্ষেত্রে দেশের স্বাধীনতা,নিরাপত্তা, দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের নিশ্চিয়তা,বিদেশ থেকে প্রশিক্ষিত জনবল এনে দেশের জনশক্তিকে প্রশিক্ষনের আওতায় দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা,এজেন্সির মাধ্যমে দৈনিক ভিত্তিতে লোক নিয়োগের নামে আধুনিক দাস প্রথার অবসানে ব্যবস্হা নেয়া সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মতবিনিময়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিডার চেয়ারম্যান উপরোক্ত প্রস্তাবনা সমূহ দেয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন,আগামীতে আলোচনার ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে দেশ বান্ধব ও শ্রমিকবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।