যশোর শহরের শংকরপুর জমাদ্দারপাড়ায় একটি বসতঘরে বোমা বিস্ফোরণে খাদিজা (৭) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে তার দুই ভাইবোন সজীব (৫) ও আয়েশা (৩)। সোমবার (১৯ মে) সকাল ৮টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
বোমাটি কীভাবে ঘরের ভেতরে এল, তা ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা ও আতঙ্ক। স্থানীয়দের দাবি, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং নাশকতার উদ্দেশ্যে বসানো বোমাই হয়তো ঘরে আনা হয়েছিল। যদিও পরিবারের দাবি, কুড়িয়ে পাওয়া বোমা ঘরে নিয়ে খেলতে গিয়ে শিশুরা হতাহত হয়েছে। অপরাধে হটস্পট হিসেবে পরিচিত শংকরপুরে বোমা বিস্ফোরণের বিষয়টি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতার জন্য রাখা ছিল, সেটি খতিয়ে দেখছে প্রশাসন
এ বিষয়ে কোতয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত বলেন, ঢাকায় নেওয়ার পথে শিশু খাদিজার মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছি শিশুরা ককটেলসদৃশ বোমা বাইরে থেকে কুড়িয়ে ঘরে এনেছিল। খেলতে গিয়ে বিস্ফোরণে তারা আহত হয়েছে।
জানা যায়, শহরের শংকরপুর জমাদ্দারপাড়ার আধপাকা টিনের বাড়িতে তিন সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন শাহাদত ও সুমি দম্পতি। কখনো হকারি, কখনো বাদাম বিক্রি করে সংসার চালান তারা। প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে তিন সন্তানকে বাড়িতে রেখে কাজের সন্তানে বের হন তারা। ঘরের ভেতর প্যাকেটে খেলনার বলসদৃশ বস্তু হাতে নিয়ে খেলা শুরু করে তাদের বড় মেয়ে খাদিজা (৭)। এ সময় হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রক্তাক্ত অবস্থায় খাদিজা ও সজীবকে দ্রুত উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। অবস্থা গুরুতর হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে খাদিজার মৃত্যু হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ আছে আয়েশা।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাক্তার ইমন হোসেন জানিয়েছেন, আহত তিনজনের মধ্যে খাদিজা ও সজীবের শারীরিক অবস্থা খারাপ ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় রেফার করা হয়।
শিশুর দাদি মনোয়ারা বেগম জানান, আমরা সকালে উঠানে বসে খাবার খাচ্ছিলাম। হঠাৎ ঘরের ভেতরে বিকট শব্দ শুনি। তাকিয়ে দেখি ধোঁয়া বের হচ্ছে। ঘরে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় ওরা পড়ে আছে। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে এনেছি।
নিহতের মা সুমি খাতুন বলেন, বাড়ির সামনে খেলার মাঠে কলাগাছের গোড়াতে কেউ বোমা রেখেছিল। সেটা সকালে তারা কুড়িয়ে পেয়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। সকালে বের হওয়ার সময় দেখি তাদের হাতে লাল টেপ দিয়ে পেঁচানো বলের মতো কিছু একটা নিয়ে খেলা করছে। আমি দেখে বুঝেছিলাম, বল নিয়ে তারা খেলা করছে। পরে শুনি আমরা সন্তানেরা বোমার আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিভাবে ঘরের ভিতরে এই বোমা এসেছে, সেটা বুঝতে পারছি না।