ঢাকা ১০:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৌকায় অনবরত সিল মারা সেই ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি ব্যালট পেপারে অবৈধভাবে সিল মারার ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা আজাদ হোসেনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিকেলে পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার (১০ নভেম্বর) ভোরে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আজাদকে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রাম থেকে তুলে আনা হয়। সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়দানকারীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর বাকবিতণ্ডা ও ধ্বস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে একটি মোটরসাইকেলে করে আজাদ হোসেনকে তুলে আনা হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাকে তুলে নেয়।

এ ব্যাপারে জানতে গতকাল দুপুরে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলামের ফোনেও একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, বিকেলে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আজাদকে হেফাজতে নেয় চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে শনিবারও জেলা পুলিশ এবং চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের কোনো কর্মকর্তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রও আজাদকে শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গত ৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের ১১৫টি কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আজাদ ব্যালট বইয়ে নৌকায় মার্কায় অনবরত সিল মারেন। এ ঘটনার ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে ওই নেতাকে ৪৩টি ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখা যায়। এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

আজাদ হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার কর্মী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। আজাদ চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এর আগে দিঘলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন তিনি। গত অক্টোবর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রলীগ।

তবে গত ৭ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু দাবি করেছেন, ব্যালটে সিল মারা যুবকটি ছাত্রলীগের কেউ নন। ছাত্রলীগ থেকে তাকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি শিবির কর্মী। যদিও তার এ দাবির স্বপক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি। এছাড়া স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়েও আজাদের সঙ্গে শিবিরের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়নি।

নির্বাচনের দিন দুপুরেই অনিয়ম এবং কারচুপির অভিযোগ এনে জাপা ও জাকের পার্টির প্রার্থী ভোট বর্জন করেন।

এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই আসনের ফলাফলের গেজেট স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক (ডিসি), জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পৃথকভাবে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

নৌকায় অনবরত সিল মারা সেই ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে

আপডেট সময় ০৬:৩১:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি ব্যালট পেপারে অবৈধভাবে সিল মারার ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা আজাদ হোসেনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিকেলে পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার (১০ নভেম্বর) ভোরে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আজাদকে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রাম থেকে তুলে আনা হয়। সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়দানকারীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর বাকবিতণ্ডা ও ধ্বস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে একটি মোটরসাইকেলে করে আজাদ হোসেনকে তুলে আনা হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাকে তুলে নেয়।

এ ব্যাপারে জানতে গতকাল দুপুরে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলামের ফোনেও একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, বিকেলে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আজাদকে হেফাজতে নেয় চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে শনিবারও জেলা পুলিশ এবং চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের কোনো কর্মকর্তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রও আজাদকে শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গত ৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের ১১৫টি কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আজাদ ব্যালট বইয়ে নৌকায় মার্কায় অনবরত সিল মারেন। এ ঘটনার ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে ওই নেতাকে ৪৩টি ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখা যায়। এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

আজাদ হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার কর্মী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। আজাদ চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এর আগে দিঘলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন তিনি। গত অক্টোবর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রলীগ।

তবে গত ৭ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু দাবি করেছেন, ব্যালটে সিল মারা যুবকটি ছাত্রলীগের কেউ নন। ছাত্রলীগ থেকে তাকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি শিবির কর্মী। যদিও তার এ দাবির স্বপক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি। এছাড়া স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়েও আজাদের সঙ্গে শিবিরের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়নি।

নির্বাচনের দিন দুপুরেই অনিয়ম এবং কারচুপির অভিযোগ এনে জাপা ও জাকের পার্টির প্রার্থী ভোট বর্জন করেন।

এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই আসনের ফলাফলের গেজেট স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক (ডিসি), জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পৃথকভাবে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।