ডাকা ভয়েজ ডেক্স: দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে ঢাকা কলেজে নেই ছাত্রসংসদের কার্যক্রম। অথচ একসময়কার ছাত্ররাজনীতির আঁতুড়ঘর হিসেবে দেশের অসংখ্য বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তির রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছে ঢাকা কলেজ থেকে।
দেশ ও জাতির দুর্দিনে ঢাকা কলেজ দুঃশাসনের মরণ-যন্ত্রণা আর কষ্ট সংগ্রামকে ধারণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজপথে। ১৯৩৯-৪৫ সালের বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৪১ সালের দোল দাঙ্গা, ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এই কলেজের ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিল অগ্রভাগে।
১৮৪১ সালে ২০ নভেম্বর উপমহাদেশের প্রথম আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদের রয়েছে একটি অনন্য ইতিহাস।
ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ সম্পর্কে সবচেয়ে পুরনো যে তথ্য পাওয়া যায় তা হলো ১৯৩২–৩৩ সালের ছাত্র সংসদের জি.এস. ছিলেন নুরুল হুদা, তখন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিল সর্বোচ্চ পদ। বর্তমানে সহ-সভাপতি বা ভিপি হলো নির্বাচিত সর্বোচ্চ পদ। এরপর ৫০ এর দশকে ৮টি, ৬০ এর দশকে ৭টি, ৭০ এর দশকে ৩টি, ৮০ এর দশকে ১টি এবং সর্বশেষ ৯০ এর দশকে ৪টি ছাত্র সংসদ গঠিত হয়। সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯৩–৯৪ সালে। এরপর থেকে আজ অবধি আর ছাত্রসংসদ আলোর মুখ দেখেনি।
বর্তমান বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলেরও অনেক উজ্জ্বল নেতা কিংবা প্রয়াত অনেক জাতীয় নেতা ঢাকা কলেজ থেকে এবং ছাত্রসংসদের নেতৃত্বের মাধ্যমে তাদের সোনালী রাজনৈতিক জীবনের শুভ সূচনা করেছিলেন। এক অজানা কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্র সংসদের কার্যক্রম স্থবির।
তবে দীর্ঘ এই সময় ধরে ঢাকা কলেজ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এর কোন কার্যক্রম না থাকলে প্রতিবছর প্রতিটি শিক্ষার্থীদের টানতে হচ্ছে ছাত্রসংসদ কার্যক্রমের ফি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি যেন অবিলম্বে ছাত্রসংসদ সচল করা হয়।
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ গালিব বলেন, ১৮১ বছরে পদার্পণ করেছে ঢাকা কলেজ। এত প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যগত ভাবেই সরব ছাত্রসংসদ থাকা দরকার। কিন্তু ঢাকা কলেজে সেটি নেই। আমাদের প্রত্যাশা একটাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্রসংসদ সচল হোক। আমরা একটি প্রজন্ম ছাত্রসংসদের কার্যক্রম না দেখেই পড়াশোনা শেষ করে ক্যাম্পাস ছাড়ছি। অথচ নিয়মিতভাবে ফি পরিশোধ করছি।
ছাত্র সংসদের নির্বাচন দিতে কলেজ প্রশাসন ও আন্তরিক বলে জানান ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার।
তিনি বলেন, সুস্থ ধারার রাজনৈতিক প্রবাহ বজায় রাখতে অবশ্যই ছাত্র সংসদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরাও চাই ছাত্র সংসদের কার্যক্রম চালু হোক। কিন্তু এ বিষয়ে কলেজ প্রশাসন একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে অনুমতি দেওয়া হয় তবেই এর কার্যক্রম শুরু করতে পারি। আমরাও চাই যেন ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদ এবং পুরনো অবস্থা ফিরে আসে। ডাকা ভয়েজ নিউজ ২৪/সাদিক