রংপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
আজ বুধবার (১৪ মে) সকাল ১০টায় রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের কাউনিয়া উপজেলার মীরবাগ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
কাউনিয়া উপজেলা সচেতন নাগরিক ফোরামের ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সনাফের আহ্বায়ক মমিন মিল্লাত, সদস্য সচিব মামুন ভুইয়া, সদস্য নাজমুল হাসান নান্নু, রবিউল ইসলাম, আব্দুল হাশেম, সুলাইমান মিলন, শাহরিয়ার ইসলাম সাদ, মাইদুল ইসলামসহ অন্যান্যরা।
সমাবেশে বক্তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন:
১. দ্রুত বিচার অধীনে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে শিক্ষার্থীসহ সব সড়ক হত্যার বিচার নিশ্চিত করা এবং নিহতের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান।
২. সড়ক ৪ লেনে উন্নতি করন। সড়কে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে ‘এক রুটে এক বাস’ নীতি বাস্তবায়ন। ব্যাটারি চালিত অটো বা থ্রি হুইলার গাড়ির জন্য পৃথকভাবে সড়ক নির্মান করতে হবে।
৩. ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহন এবং চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪. রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশ ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন।
৫. সড়কের বাঁক ও মোড়গুলোতে দৃশ্যমানতা (ভিজিবিলিটি) বৃদ্ধির ব্যবস্থা।
৬. গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া কার্যকর করা।
৭. মাহাসরকে কাকড়া চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।
বক্তারা বলেন, অপ্রশস্ত সড়কে বেপরোয়া যান চলাচলের কারণে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে একের পর এক প্রাণহানি ঘটছে। প্রশাসনের নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। দ্রুত চার লেনের বাস্তবায়ন এবং অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ নিরাপদ সড়কের দাবি জানান বক্তারা। এসব দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
অবরোধের কারণে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন আটকে পড়ে ব্যাপক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এবং কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হক ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। তিনি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চার লেন নির্মাণ শুরু হবে বলেও জানান। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।
অতীতে এই সড়কে একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা
এই সড়কে এর আগেও একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
গত ১১ মে (রবিবার) দিবাগত রাত ১২:৩০ টায়, মীরবাগ বুড়াইল ব্রিজ এলাকায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন।
১৩ মে (মঙ্গলবার) সকাল, কাউনিয়ার বেইলি ব্রিজ এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ একই পরিবারের তিনজন প্রাণ হারান।
২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়, রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে ধরলা ব্রিজ পশ্চিম পাশে ঠ্যানারিপাড়া এলাকায় মোটরসাইকেল ও ট্রাকের সংঘর্ষে সাদমান সাদিক (১৬) ও হিমু (১৭) নামে দুই কিশোর নিহত হন।
২০২২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার সকালে, রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কের নব্দীগঞ্জ এলাকায় দুই বাস ও একটি প্রাইভেটকারের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন।
২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায়, রংপুর-কুড়িগ্রাম ও রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হন।