ঢাকা ০১:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা: ২৩ দিনেও মেলেনি খাদ্যসহায়তা, দুর্দিনে জেলেরা

ভারতের সাথে মিল রেখে বাংলাদেশেও গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের পরিবর্তে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ সময় গভীর সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার থেকে বিরত থাকবে সমুদ্রগামী জেলেরা। তবে প্রতি বছর ৬৫ দিন মাছ শিকার থেকে বিরত থাকা জেলেদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা দিলেও এ বছর তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও কোনো সহায়তা পাননি জেলে পরিবারগুলো। ঘরে খাবার না থাকায় জেলে পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পরেছে। এদিকে মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না আসায় কবে নাগাদ সরকারি প্রণোদনা পাবে তা-ও নিশ্চিত করতে পারেনি পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য বিভাগ।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটায় সরকারি তালিকায় মোট জেলে রয়েছেন ১৬ হাজার ৮২০ জন। তাদের মধ্যে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যায় ১১ হাজার ৪১১ জেলে এবং উপকূলীয় নদী বিষখালী ও বলেশ^রে মাছ শিকার করে পাঁচ হাজার ৪০৯ জন জেলে। এ ছাড়া নতুন করে সরকারি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন তিন হাজার ৫০০ জেলে। মৎস্য বিভাগের ধারণা, এ আবেদিত জেলেদের মধ্যে দুই হাজার জেলে নিবন্ধন পেতে পারেন। এদিকে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির তথ্য মতে এ উপজেলায় জেলে রয়েছেন ২২ হাজারের মতো। তাদের অধিকাংশ জেলেই জীবনের ঝুকি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের গভীরে মাছ শিকার করতে যায়।

জেলে মনির হোসন, খাইরুল ইসলাম, ছগির হোসেনসহ আরো অনেকে জানান, এ বছর বঙ্গোপসাগরে তেমন মাছ ধরা পরেনি জেলেদের জালে। ধারণা ছিল সাগরে মাছ ধরা পরলে পেছনের ধারদেনা শোধ করতে পারবেন এবং নিষেধাজ্ঞা শুরুর দিকে খাদ্য সহায়তা দেবে সরকার। কিন্তু এ বছর তার উল্টোটা হয়েছে। প্রায় তিন সপ্তাহ হলেও এখনো সহায়তা করার কোনো নাম নেই। যে অবস্থা দেখি তাতে আমাগো না খেয়ে কাটাতে হবে। সংসার চালাতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন। বর্তমানে তারা ধার-দেনা করে চলছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে চাল পেলে তা দিয়ে কষ্ট লাগব হয় না জেলেদের। সরকারের পক্ষ থেকে বেকার জেলেদের জন্য খাদ্যসহায়তা বরাদ্দ থাকলেও প্রতি বছরই তা বিতরণ করা হয় শেষ দিকে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে চাল বিতরণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন জেলেরা।

ট্রলার মালিকরা জানান, এ অঞ্চলের প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ মৎস্য পেশার সাথে জড়িত থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য কোনো কাজেও জেলেদের দেখা যায় না বা অন্য কাজে তাদের নেয়া হয় না। যেমন সরকারের নিষেধাজ্ঞা জেলেরা ঠিকমতো পালন করছে তেমন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলেদের খাদ্যসহায়তা দেয়া উচিৎ। তা নাহলে জীবনের তাগিদের জন্য হলেও অসৎভাবে মাছ শিকারে নেমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হক বলেন, বঙ্গোপসাগরে মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে সাগরে ৫৮ দিনের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ১৫ এপ্রিল থেকে যা চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। এর আগে এ নিষেধাজ্ঞা ছিল ৬৫ দিন যা বর্তমানে সাতদিন কমিয়ে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। প্রতি বছর এ নিষেধাজ্ঞায় সমুদ্রগামী জেলেরা অলস সময় কাটান। এ সময় জেলেদের কোনো কাজ না থাকায় তাদের জন্য এর আগে প্রতি বছর ৮৫ কেজি করে চাল দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে ৬৫ দিন পরিবর্তন করে ৫৮ দিন করার কারণে জেলেদের সরকারি প্রণোদনা দিতে সরকারের একটু দেরি হচ্ছে। জেলেদের প্রণোদনা দেয়ার জন্য মৎস্য বিভাগ থেকে কাগজপত্র তৈরি করে খাদ্য বিভাগে দিতে হয়। ধারণা করছি এ কাগজ দিতে হয়ত দেরি হচ্ছে। আশা করছি এ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে জেলেদের খাদ্যসহায়তা দেয়া হবে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, জেলেদের দাবি ছিল ভারতের সাথে মিল রেখে ৬৫ দিনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার। জেলেদের আশা পূরণ হয়েছে। সম্প্রতি মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সাথে আমরা বৈঠক করেছি। তখন আমরা তাকে বিষয়টি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি বলেই ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বঙ্গোপসাগরে। ভারতের সাথে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা না দেয়ায় ভারতের জেলেরা বাংলাদেশী জলসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যেত। এতে সাগর-নদী মাছশূণ্য হয়ে পড়েছিল। জেলেরা খুব কষ্টে আছেন। আমাদের ব্যবসায়-বাণিজ্যও ধ্বংস হওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছিল। দীর্ঘ দিন পর হলেও এ সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমরা খুব খুশি।

তিনি আরো বলেন, ৫৮ দিন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার কিন্তু প্রায় তিন সপ্তাহ হয়ে গেছে এখনো এ অবসর সময় কাটানো জেলেদের কোনো রকমের সহায়তা করা হচ্ছে না। প্রতি বছর গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করা জেলেরা ৮৫ কেজি করে চাল পেতো। এ চাল না পাওয়ায় দুরাবস্তায় দিন কাটাতে হচ্ছে। জেলেদের চালের পাশাপশি অর্থসহায়তা না দিলে এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। আর জেলেরা মুখ ফিরিয়ে নিলে মৎস্যশিল্প বিলুপ্ত হবে বলেও ধারণা করছেন তিনি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

এটিএম আজহারের আপিলের রায় ২৭ মে

সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা: ২৩ দিনেও মেলেনি খাদ্যসহায়তা, দুর্দিনে জেলেরা

আপডেট সময় ১০:১২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

ভারতের সাথে মিল রেখে বাংলাদেশেও গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের পরিবর্তে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ সময় গভীর সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার থেকে বিরত থাকবে সমুদ্রগামী জেলেরা। তবে প্রতি বছর ৬৫ দিন মাছ শিকার থেকে বিরত থাকা জেলেদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা দিলেও এ বছর তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও কোনো সহায়তা পাননি জেলে পরিবারগুলো। ঘরে খাবার না থাকায় জেলে পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পরেছে। এদিকে মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না আসায় কবে নাগাদ সরকারি প্রণোদনা পাবে তা-ও নিশ্চিত করতে পারেনি পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য বিভাগ।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটায় সরকারি তালিকায় মোট জেলে রয়েছেন ১৬ হাজার ৮২০ জন। তাদের মধ্যে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যায় ১১ হাজার ৪১১ জেলে এবং উপকূলীয় নদী বিষখালী ও বলেশ^রে মাছ শিকার করে পাঁচ হাজার ৪০৯ জন জেলে। এ ছাড়া নতুন করে সরকারি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন তিন হাজার ৫০০ জেলে। মৎস্য বিভাগের ধারণা, এ আবেদিত জেলেদের মধ্যে দুই হাজার জেলে নিবন্ধন পেতে পারেন। এদিকে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির তথ্য মতে এ উপজেলায় জেলে রয়েছেন ২২ হাজারের মতো। তাদের অধিকাংশ জেলেই জীবনের ঝুকি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের গভীরে মাছ শিকার করতে যায়।

জেলে মনির হোসন, খাইরুল ইসলাম, ছগির হোসেনসহ আরো অনেকে জানান, এ বছর বঙ্গোপসাগরে তেমন মাছ ধরা পরেনি জেলেদের জালে। ধারণা ছিল সাগরে মাছ ধরা পরলে পেছনের ধারদেনা শোধ করতে পারবেন এবং নিষেধাজ্ঞা শুরুর দিকে খাদ্য সহায়তা দেবে সরকার। কিন্তু এ বছর তার উল্টোটা হয়েছে। প্রায় তিন সপ্তাহ হলেও এখনো সহায়তা করার কোনো নাম নেই। যে অবস্থা দেখি তাতে আমাগো না খেয়ে কাটাতে হবে। সংসার চালাতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন। বর্তমানে তারা ধার-দেনা করে চলছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে চাল পেলে তা দিয়ে কষ্ট লাগব হয় না জেলেদের। সরকারের পক্ষ থেকে বেকার জেলেদের জন্য খাদ্যসহায়তা বরাদ্দ থাকলেও প্রতি বছরই তা বিতরণ করা হয় শেষ দিকে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে চাল বিতরণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন জেলেরা।

ট্রলার মালিকরা জানান, এ অঞ্চলের প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ মৎস্য পেশার সাথে জড়িত থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য কোনো কাজেও জেলেদের দেখা যায় না বা অন্য কাজে তাদের নেয়া হয় না। যেমন সরকারের নিষেধাজ্ঞা জেলেরা ঠিকমতো পালন করছে তেমন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলেদের খাদ্যসহায়তা দেয়া উচিৎ। তা নাহলে জীবনের তাগিদের জন্য হলেও অসৎভাবে মাছ শিকারে নেমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হক বলেন, বঙ্গোপসাগরে মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে সাগরে ৫৮ দিনের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ১৫ এপ্রিল থেকে যা চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। এর আগে এ নিষেধাজ্ঞা ছিল ৬৫ দিন যা বর্তমানে সাতদিন কমিয়ে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। প্রতি বছর এ নিষেধাজ্ঞায় সমুদ্রগামী জেলেরা অলস সময় কাটান। এ সময় জেলেদের কোনো কাজ না থাকায় তাদের জন্য এর আগে প্রতি বছর ৮৫ কেজি করে চাল দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে ৬৫ দিন পরিবর্তন করে ৫৮ দিন করার কারণে জেলেদের সরকারি প্রণোদনা দিতে সরকারের একটু দেরি হচ্ছে। জেলেদের প্রণোদনা দেয়ার জন্য মৎস্য বিভাগ থেকে কাগজপত্র তৈরি করে খাদ্য বিভাগে দিতে হয়। ধারণা করছি এ কাগজ দিতে হয়ত দেরি হচ্ছে। আশা করছি এ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে জেলেদের খাদ্যসহায়তা দেয়া হবে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, জেলেদের দাবি ছিল ভারতের সাথে মিল রেখে ৬৫ দিনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার। জেলেদের আশা পূরণ হয়েছে। সম্প্রতি মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সাথে আমরা বৈঠক করেছি। তখন আমরা তাকে বিষয়টি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি বলেই ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বঙ্গোপসাগরে। ভারতের সাথে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা না দেয়ায় ভারতের জেলেরা বাংলাদেশী জলসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যেত। এতে সাগর-নদী মাছশূণ্য হয়ে পড়েছিল। জেলেরা খুব কষ্টে আছেন। আমাদের ব্যবসায়-বাণিজ্যও ধ্বংস হওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছিল। দীর্ঘ দিন পর হলেও এ সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমরা খুব খুশি।

তিনি আরো বলেন, ৫৮ দিন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার কিন্তু প্রায় তিন সপ্তাহ হয়ে গেছে এখনো এ অবসর সময় কাটানো জেলেদের কোনো রকমের সহায়তা করা হচ্ছে না। প্রতি বছর গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করা জেলেরা ৮৫ কেজি করে চাল পেতো। এ চাল না পাওয়ায় দুরাবস্তায় দিন কাটাতে হচ্ছে। জেলেদের চালের পাশাপশি অর্থসহায়তা না দিলে এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। আর জেলেরা মুখ ফিরিয়ে নিলে মৎস্যশিল্প বিলুপ্ত হবে বলেও ধারণা করছেন তিনি।