গো ডেভেলপমেন্ট ফোরামের আয়োজনে আয়োজিত এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ।
সম্মেলনে দেশের ৪৪টি জেলা থেকে আসা প্রায় ৩৫০ জন আমচাষী, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। দিনব্যাপী এই আয়োজন জুড়ে আম চাষাবাদ, বাজারজাতকরণ, পরিবহন, সংরক্ষণ, রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন আম গবেষক, কৃষি কর্মকর্তা ও খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা।
আয়োজকরা জানান, দেশের মোট আম উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। এ জেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি মৌসুমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার আম ও আমজাত পণ্যের বাণিজ্য হয়, যেখানে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, “প্রতি মৌসুমে ৩০-৪০ শতাংশ আম ঝরে পড়ে, যা ব্যবহার হয় না। অথচ এসব আম প্রক্রিয়াজাত করে আচার, আমচুরসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করলে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার বাজার সৃষ্টি সম্ভব।”
উদ্যোক্তারা জানান, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছে। তবে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ, আধুনিক প্যাকেজিং ও হ্যান্ডলিংয়ের অভাব এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম ও পরিবহনের ঘাটতি রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বক্তারা রপ্তানিমুখী জোন নির্ধারণ, প্রশিক্ষিত রপ্তানিকারক তৈরি, আধুনিক প্যাকিং হাউস স্থাপন এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, “আম রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এজন্য রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জকে সরকারিভাবে ‘আমের রাজধানী’ ঘোষণা করতে হবে।”
ম্যাংগো ডেভেলপমেন্ট ফোরামের এডমিন শামীম খান বলেন, “আমের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা জরুরি। এজন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তৌফিক আজিজ, হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক একেএম মুনজুরে মাওলা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নয়ন মিয়া প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ বলেন, “আমকে ঘিরে যে বিপুল সম্ভাবনার কথা সম্মেলনে উঠে এসেছে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। সরকারিভাবে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, তবে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।”
উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।