মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাতের চব্বিশ ঘণ্টা না পেরোতেই নিহতের সংখ্যা ১০০০ দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে এক হাজার ৬৭০ জন। এদিকে ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মিয়ানমারের এই ভূমিকম্পকে ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বলা হচ্ছে। ইউএসজিএস বলেছে, শুধু নিহতের সংখ্যাই নয়, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ব্যাপকহারে বাড়তে পারে। সংস্থাটির মতে, দেশটির আর্থিক, পরিবেশগত এবং সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তবে প্রশ্ন হলো, ভূমিকম্পের ফলে নিহত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতো বেশি কেন। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভিস বলছে, কম্পনের তীব্রতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনসংখ্যা বিবেচনা করে প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। নিহত এবং ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণ কম্পনের তীব্রতা ও আঘাত হানা এলাকার জনবসতি।
মিয়ানমারের যেসব অঞ্চলে ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে, সেসব অঞ্চলে ব্যাপক জনবসতি ছিল। পাশাপাশি কম্পন অনুভূত হয়েছে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে। এই সময়ে অনেকে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। যেমন পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবনে ৩২০ জন কর্মী কাজ করছিলেন। কম্পনের পর ভবনটি ধসে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দশ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমারজুড়ে অসংখ্য ভবন ধসের কারণে হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে কম্পনের মাত্রার সঙ্গে মাটির নিচে কোথায় কম্পনটা হলো সেই জায়গাটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেশি গভীরে কম্পন উৎপন্ন হলে স্থলভাগে এর প্রভাব কম পড়ে। মিয়ানমারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। অর্থাৎ এটিও ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
ইউএসজিএস’র ওয়েবসাইটের ইন্টারেক্টিভ ম্যাপে দেখা গেছে, ৭.৭ মাত্রার কম্পনের পর মিয়ানমারে অন্তত ১৪টি আফটারশক (ভূমিকম্প পরবর্তী ছোট ছোট কম্পন) আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ কম্পনই বড় ভূমিকম্প আঘাত হানার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঘটেছে। এগুলোর মাত্রা ছিল ৩-৫ এর মধ্যে।
সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৭, এটি ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রায় ১০ মিনিট পরে আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া ৪.৯ এবং ৬.৭ মাত্রার দুইটি কম্পন মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে ঘটেছে। এতেও যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্য কম্পনগুলো ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে উত্তর ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ে একটি রেখা তৈরি করেছে।
ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে এসব ছোট ছোট কম্পন মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কারণ বড় কম্পনের পর মানুষ নিরাপদ ভেবে আশ্রয় নেয়া জায়গা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। তখন এই কম্পনের ফলে নতুন করে দুর্ঘটনা ঘটে।
এছাড়া ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের ওপরের মাটির প্রকৃতি কী বা মাটি কতটা শক্ত তার ওপরও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করে। পাশাপাশি উদ্ধার তৎপরতা যত দ্রুত শুরু হয়, ততই বেশি সংখ্যক মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হয়। পূর্বপ্রস্তুতি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। মিয়ানমার যেহেতু সাধারণত ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ নয়, তাই দেশটির এই ধরনের উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা করাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তার নেতা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্যের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং শুক্রবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বক্তৃতায় বলেন, “পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। আমি সবাইকে হাতে হাত রেখে চলমান উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করার জন্য আহ্বান জানাতে চাই।”
এই আহ্বানের পর প্রতিবেশী চীন এবং ভারত উদ্ধার অভিযানে সহায়তার জন্য টিম পাঠিয়েছে। শনিবার সকালে চীনের একটি টিম দেশটিতে পৌঁছেছে। এটিই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল। তবে রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার তথ্য অনুসারে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জরুরি মানবিক সহায়তাসহ একটি উদ্ধার ও চিকিৎসা দল পাঠিয়েছে ভারত।