ঢাকা ০৩:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সীমান্ত ঘিরে ভারতের নতুন পরিকল্পনা

পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি ও নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে ভারত সরকার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের জন্য ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদনের পথে রয়েছে। পাশাপাশি পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে দুইটি ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ বা ফিল্ড কমান্ড ঘাঁটি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রের বরাতে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি ব্যাটালিয়নে এক হাজারের বেশি সেনা নিয়ে গঠিত এই নতুন ইউনিটগুলোতে মোট ১৭ হাজার সদস্য যুক্ত হবেন। বর্তমানে বিএসএফের ব্যাটালিয়নের সংখ্যা ১৯৩। নতুন ইউনিটগুলো গঠিত হলে মোট সদস্য সংখ্যা আরও বাড়বে। এই পরিকল্পনাটি এরইমধ্যে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। এখন শুধু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়সহ কিছু চূড়ান্ত প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষা। অনুমোদন পেলে আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যেই ধাপে ধাপে এই ইউনিটগুলো গঠন করা হবে।

নতুন ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার দুটির মধ্যে একটি গঠিত হবে জম্মুতে, যার লক্ষ্য ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে (বিশেষ করে জম্মু ও পাঞ্জাব অংশে) নিরাপত্তা জোরদার করা। অন্যটি স্থাপন করা হবে মিজোরামে, যা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা আরও কার্যকর করবে। এই হেডকোয়ার্টার দুটি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ফোর্সের কর্মকৌশল, সমন্বয় ও জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সহায়ক হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ সীমান্তে এবং কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তান সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। এ প্রেক্ষাপটেই বিএসএফের সক্ষমতা বাড়াতে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন এই পরিকল্পনায় এগোচ্ছে।

বর্তমানে বিএসএফের পূর্ব ফ্রন্টিয়ারে আসামভিত্তিক মিজোরাম-কাছার হেডকোয়ার্টারের অধীনে শিলচর, আইজল ও মণিপুরে তিনটি সেক্টর রয়েছে। আর পশ্চিম ফ্রন্টিয়ারে জম্মু সীমান্তে রাজৌরি, সুন্দরবনি, জম্মু ও ইন্দ্রেশ্বর নগরে চারটি সেক্টরের দায়িত্বে রয়েছেন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। নতুন হেডকোয়ার্টার স্থাপনের ফলে এ সেক্টরগুলোতে সমন্বয় ও কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিএসএফ ইতোমধ্যে পুরুষ ও নারী সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিয়োগের পরপরই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন ইউনিটগুলো কার্যক্রম শুরু করবে।

উল্লেখ্য, বিএসএফ বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজার সদস্যের একটি শক্তিশালী বাহিনী রয়েছে। তারা ৬ হাজার ৭২৬ কিলোমিটার সীমান্ত রক্ষা করে থাকে—এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত ২ হাজার ২৯০ কিলোমিটার এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ৪ হাজার ৯৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪৭ কিলোমিটার এখনো সুরক্ষাবেষ্টনী নেই, যা নদীবাহিত অঞ্চল ও দুর্গম বনাঞ্চল দিয়ে গিয়েছে। এই সীমান্ত এলাকায় ১ হাজার ৭৬০টি বিএসএফ চৌকি রয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় সীমান্তে দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ভূপ্রকৃতিগত চ্যালেঞ্জের মুখে এই নতুন ইউনিট ও কমান্ড হেডকোয়ার্টার বিএসএফের সক্ষমতা ও কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সীমান্ত ঘিরে ভারতের নতুন পরিকল্পনা

আপডেট সময় ১০:০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি ও নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে ভারত সরকার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের জন্য ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদনের পথে রয়েছে। পাশাপাশি পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে দুইটি ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ বা ফিল্ড কমান্ড ঘাঁটি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রের বরাতে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি ব্যাটালিয়নে এক হাজারের বেশি সেনা নিয়ে গঠিত এই নতুন ইউনিটগুলোতে মোট ১৭ হাজার সদস্য যুক্ত হবেন। বর্তমানে বিএসএফের ব্যাটালিয়নের সংখ্যা ১৯৩। নতুন ইউনিটগুলো গঠিত হলে মোট সদস্য সংখ্যা আরও বাড়বে। এই পরিকল্পনাটি এরইমধ্যে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। এখন শুধু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়সহ কিছু চূড়ান্ত প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষা। অনুমোদন পেলে আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যেই ধাপে ধাপে এই ইউনিটগুলো গঠন করা হবে।

নতুন ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার দুটির মধ্যে একটি গঠিত হবে জম্মুতে, যার লক্ষ্য ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে (বিশেষ করে জম্মু ও পাঞ্জাব অংশে) নিরাপত্তা জোরদার করা। অন্যটি স্থাপন করা হবে মিজোরামে, যা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা আরও কার্যকর করবে। এই হেডকোয়ার্টার দুটি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ফোর্সের কর্মকৌশল, সমন্বয় ও জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সহায়ক হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ সীমান্তে এবং কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তান সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। এ প্রেক্ষাপটেই বিএসএফের সক্ষমতা বাড়াতে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন এই পরিকল্পনায় এগোচ্ছে।

বর্তমানে বিএসএফের পূর্ব ফ্রন্টিয়ারে আসামভিত্তিক মিজোরাম-কাছার হেডকোয়ার্টারের অধীনে শিলচর, আইজল ও মণিপুরে তিনটি সেক্টর রয়েছে। আর পশ্চিম ফ্রন্টিয়ারে জম্মু সীমান্তে রাজৌরি, সুন্দরবনি, জম্মু ও ইন্দ্রেশ্বর নগরে চারটি সেক্টরের দায়িত্বে রয়েছেন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। নতুন হেডকোয়ার্টার স্থাপনের ফলে এ সেক্টরগুলোতে সমন্বয় ও কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিএসএফ ইতোমধ্যে পুরুষ ও নারী সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিয়োগের পরপরই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন ইউনিটগুলো কার্যক্রম শুরু করবে।

উল্লেখ্য, বিএসএফ বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজার সদস্যের একটি শক্তিশালী বাহিনী রয়েছে। তারা ৬ হাজার ৭২৬ কিলোমিটার সীমান্ত রক্ষা করে থাকে—এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত ২ হাজার ২৯০ কিলোমিটার এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ৪ হাজার ৯৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪৭ কিলোমিটার এখনো সুরক্ষাবেষ্টনী নেই, যা নদীবাহিত অঞ্চল ও দুর্গম বনাঞ্চল দিয়ে গিয়েছে। এই সীমান্ত এলাকায় ১ হাজার ৭৬০টি বিএসএফ চৌকি রয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় সীমান্তে দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ভূপ্রকৃতিগত চ্যালেঞ্জের মুখে এই নতুন ইউনিট ও কমান্ড হেডকোয়ার্টার বিএসএফের সক্ষমতা ও কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।