ছিলেন নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের অ্যাকটিভ কর্মী ছিলেন নূর ইসলাম। ছাত্রদলে এর আগে তিনি কোনো পদেও ছিলেন না। হঠাৎ করেই ছাত্রলীগের এই কর্মীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) ছাত্রদলের সভাপতি করা হয়েছে। ২০২৩ সালে এমবিবিএস শেষ করে এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরি করছেন। তাকে সভাপতি করায় ছাত্রদলের নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
গত রোববার (২৩ মার্চ) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের স্বাক্ষরে রামেক ছাত্রদলের ১১ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এতে সভাপতি করা হয় রামেকের সাবেক শিক্ষার্থী নূর ইসলামকে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আংশিক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়েছে। এই কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নূর ইসলামের অংশ নেওয়ার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
একাধিক ছবিতে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে নূরকে সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কন্যা ও ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আনিকা ফারিহা জামান অর্ণাকে ফুল দিতে দেখা যাচ্ছে। অর্ণার সঙ্গে একই ছবিতে তাকে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন, রামেক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোমিনুল ইসলামের সঙ্গে শোক দিবসে খাবার বিতরণ, মিছিলে অংশগ্রহণ, শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের কবর জিয়ারত করতেও দেখা গেছে। আরেক ছবিতে আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের নেতা (বর্তমানে পলাতক) ডা. নওশাদ আলীর সঙ্গে কেক কাটতে দেখা যাচ্ছে নূরকে।
জানা যায়, ছাত্রলীগে নূর ইসলামের পদ ছিল না, তবে কর্মী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি পাবনা। মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি নুরুন্নবী হলে থাকতেন। ওই হলে তাকে ছাত্রলীগের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা’ ধরা হতো। ওই সময় ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মসূচিতেই অংশ নিতেন নূর। তাকে সভাপতি করায় সংগঠনের অন্য নেতাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
রামেক ছাত্রদলের এক নেতা বলেছেন, নুরুন্নবী হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছিলেন। ওই হলের সভাপতি প্রার্থীও ছিলেন। শেষ পর্যন্ত কমিটি না হওয়ায় পদ পাননি। তার মতো একজন ছাত্রলীগ কর্মীকে সভাপতি করায় আমরা হতাশ। ড্যাবের স্থানীয় নেতারাও আমাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। আমরা যতদূর জানি, সবশেষ সিটি নির্বাচনে নূর আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের স্বাস্থ্যসেবা উপকমিটির সদস্য ছিলেন। তাকে কীভাবে ছাত্রদল সভাপতি করা হলো, সেটিই বুঝতে পারছি না।
ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ আরেক নেতা বলেন, রামেক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোমিনুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ ছিলেন নূর ইসলাম। তিনি এখন ছাত্রদল সভাপতি হয়ে গেলেন। এটা ছাত্রদলের জন্যই ক্ষতির কারণ হবে।
নূর ইসলাম বলেন, প্রথম বর্ষে থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের কিছু প্রোগ্রামে আমাকে জোর করে নেওয়া হয়েছিল। কোনোদিনই ছাত্রলীগ করতাম না। জুলাই আন্দোলনে রামেক থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। দলকে সুসংগঠিত করেছি। তাই কেন্দ্র আমাকে রামেক ছাত্রদলের সভাপতি করেছে। আগে মহানগর কমিটির প্রোগ্রামে অংশ নিতাম।
মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি আকবর আলী জ্যাকি বলেন, নূর ইসলামকে আগে সেভাবে চিনতাম না। ৫ আগস্টের পর থেকে চিনি, সে আমাদের কর্মী হয়েছিল।
নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ বলেন, কমিটি করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা তদন্ত করেছেন। এরপর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি দিয়েছেন। তাই কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব জানান, কমিটি দেওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে নূরের ছবিগুলো পেয়েছেন। রাতেই তদন্ত করে দেখবেন।