ঢাকা ১০:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষকের ওপর হামলা, মধ্যরাতে উত্তাল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক এবং সহকারী ছাত্র বিষয়ক পরিচালক হাসান মাহমুদ সাকিকে লাঞ্ছনার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। ঘটনার প্রতিবাদে গভীর রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিসিপ্লিনের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের পাশে শারীরিকভাবে আঘাত করেন ওই শিক্ষককে। ঘটনার পরপরই তা ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

হামলায় আহত হন শিক্ষক হাসান মাহমুদ সাকি। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করে সিটি মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক।

বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাত ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন- ‘শিক্ষকের নিরাপত্তা চাই’, ‘যে শিক্ষক আমাদের নিরাপত্তা দিবেন, তারাই নিরাপদ নয়’, ‘সন্ত্রাসীদের বিচার চাই’ ইত্যাদি। তারা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা যদি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকেন, তাহলে আমরা শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিরাপদ বোধ করব?’

চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের দাবি তাকে (নোমানকে) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে। তার এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট নেওয়ার কোনো অধিকার নেই। এসব নোংরা মানুষ সমাজের কিট।’

এ বিষয়ে ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দোষী ও তার সহযোগীদের দ্রুত শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম জানায়, ‘এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে আমরা একমত। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা একটি নিকৃষ্ট এবং গর্হিত কাজ, যা চিন্তা করা যায় না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের জঘন্যতম ঘটনা একটিও ঘটেনি। একজন শিক্ষক লাঞ্ছিত করা মানে পুরো শিক্ষক সমাজকেই লাঞ্ছিত করা। হামলাকারীকে শাস্তির আওতায় আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সচেষ্ট থাকবে। গণঅভ্যুত্থানে তার ভূমিকা তোমরা দেখেছো। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এভাবেই সোচ্চার থাকো। আমরা তিন দিনের মধ্যে দোষীকে শাস্তির আওতায় আনব।

রাত ২টা পর্যন্ত চলা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হলে তারা রোববার থেকে ক্লাস বর্জনসহ আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মাদক সেবনের দায়ে নিষিদ্ধ রাবাদা

শিক্ষকের ওপর হামলা, মধ্যরাতে উত্তাল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট সময় ০৭:৪২:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক এবং সহকারী ছাত্র বিষয়ক পরিচালক হাসান মাহমুদ সাকিকে লাঞ্ছনার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। ঘটনার প্রতিবাদে গভীর রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিসিপ্লিনের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের পাশে শারীরিকভাবে আঘাত করেন ওই শিক্ষককে। ঘটনার পরপরই তা ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

হামলায় আহত হন শিক্ষক হাসান মাহমুদ সাকি। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করে সিটি মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক।

বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাত ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন- ‘শিক্ষকের নিরাপত্তা চাই’, ‘যে শিক্ষক আমাদের নিরাপত্তা দিবেন, তারাই নিরাপদ নয়’, ‘সন্ত্রাসীদের বিচার চাই’ ইত্যাদি। তারা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা যদি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকেন, তাহলে আমরা শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিরাপদ বোধ করব?’

চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের দাবি তাকে (নোমানকে) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে। তার এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট নেওয়ার কোনো অধিকার নেই। এসব নোংরা মানুষ সমাজের কিট।’

এ বিষয়ে ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দোষী ও তার সহযোগীদের দ্রুত শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম জানায়, ‘এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে আমরা একমত। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা একটি নিকৃষ্ট এবং গর্হিত কাজ, যা চিন্তা করা যায় না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের জঘন্যতম ঘটনা একটিও ঘটেনি। একজন শিক্ষক লাঞ্ছিত করা মানে পুরো শিক্ষক সমাজকেই লাঞ্ছিত করা। হামলাকারীকে শাস্তির আওতায় আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সচেষ্ট থাকবে। গণঅভ্যুত্থানে তার ভূমিকা তোমরা দেখেছো। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এভাবেই সোচ্চার থাকো। আমরা তিন দিনের মধ্যে দোষীকে শাস্তির আওতায় আনব।

রাত ২টা পর্যন্ত চলা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হলে তারা রোববার থেকে ক্লাস বর্জনসহ আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন।