ঢাকা ১১:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাভারে ভূঁইফোর আবাসিক প্রকল্পের নামে সরকারি ও ব্যক্তি জমি দখলের অভিযোগ, কিশোর গ্যাং ভাড়া করে ত্রাস সৃষ্টি

সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর-রাজারবাগ এলাকায় ‘রেলিক সিটি’ নামে একটি ভূঁইফোর আবাসিক কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষিজমি জবর-দখলের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, জমি দখল নিশ্চিত করতে কোম্পানিটি স্থানীয় কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করে এলাকাজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রেলিক সিটির পেছনে রয়েছেন সাভারের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত টেপা জাকির ওরফে মামা জাকিরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও একাধিক মামলার আসামি মো. নূরুজ্জামান। তার নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে এক শতাধিক কিশোর সদস্যের একটি গ্যাং, যারা জমি দখলে সহায়তা করছে। এ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে রয়েছে ভবানীপুর, কালিয়াকৈর ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন যুবক ও কিশোর।

গ্রামবাসীরা জানান, জমি বিক্রিতে রাজি না হলে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ জানিয়েছেন, জোরপূর্বক জমি দখল করে সেখানে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই বাহিনী আমাদের জমি দিতে চাপ দিচ্ছে, না মানলে বলপূর্বক দখল করে নিচ্ছে।”

তদন্তে জানা যায়, রেলিক সিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছে যে, তারা ১০টি মৌজায় প্রায় ৮ হাজার ২৫১ বিঘা জমির পরিকল্পনা তৈরি করেছে। তাদের দাবি অনুযায়ী প্রকল্প এলাকায় ৬০ ফুট রাস্তা রয়েছে, যদিও বাস্তবে এটি ১০ ফুট প্রশস্ত একটি সরকারি রাস্তা। এমনকি, কোনো জমির মালিকানা কিংবা নামজারি ছাড়াই প্লট বিক্রি শুরু করেছে তারা। এই প্লটে স্থানীয়দের বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ নানা স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো উপেক্ষা করে বিদেশি প্রবাসীদের কাছে প্লট বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে।
“জমি নয়, বিক্রি হচ্ছে প্রতারণার স্বপ্ন”
স্থানীয়দের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ ব্যক্তির কাছ থেকে বুকিং মানির নামে ৪-৫ কোটি টাকার লেনদেন করেছে রেলিক সিটি। অথচ রাজউকের অনুমোদন তো দূরে থাক, প্রাথমিক পরামর্শ তালিকাতেও কোম্পানিটির নাম নেই।

এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে গত ২১ এপ্রিল সোমবার কমলাপুর, রাজারবাগ, ভবানীপুরসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষ মানববন্ধন করেন। পরদিন রেলিক সিটির পক্ষ থেকে পাল্টা মানববন্ধন করা হয় এবং হামলা চালিয়ে তিনজনকে গুরুতর আহত করা হয়।

আহত সালাউদ্দিন আহমেদ এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি মামলা (নং-৭৮) দায়ের করেছেন। মামলায় রেলিক সিটির চেয়ারম্যান এ এস এম শাহ নেওয়াজ, পরিচালক সাব্বির, সন্ত্রাসী মো. নূরুজ্জামানসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর দাবি, এমন অবৈধ কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি, না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মৌলভীবাজারে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে সাংবাদিকতা বিষয়ক কর্মশালা

সাভারে ভূঁইফোর আবাসিক প্রকল্পের নামে সরকারি ও ব্যক্তি জমি দখলের অভিযোগ, কিশোর গ্যাং ভাড়া করে ত্রাস সৃষ্টি

আপডেট সময় ০৭:৩৫:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর-রাজারবাগ এলাকায় ‘রেলিক সিটি’ নামে একটি ভূঁইফোর আবাসিক কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষিজমি জবর-দখলের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, জমি দখল নিশ্চিত করতে কোম্পানিটি স্থানীয় কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করে এলাকাজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রেলিক সিটির পেছনে রয়েছেন সাভারের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত টেপা জাকির ওরফে মামা জাকিরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও একাধিক মামলার আসামি মো. নূরুজ্জামান। তার নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে এক শতাধিক কিশোর সদস্যের একটি গ্যাং, যারা জমি দখলে সহায়তা করছে। এ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে রয়েছে ভবানীপুর, কালিয়াকৈর ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন যুবক ও কিশোর।

গ্রামবাসীরা জানান, জমি বিক্রিতে রাজি না হলে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ জানিয়েছেন, জোরপূর্বক জমি দখল করে সেখানে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই বাহিনী আমাদের জমি দিতে চাপ দিচ্ছে, না মানলে বলপূর্বক দখল করে নিচ্ছে।”

তদন্তে জানা যায়, রেলিক সিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছে যে, তারা ১০টি মৌজায় প্রায় ৮ হাজার ২৫১ বিঘা জমির পরিকল্পনা তৈরি করেছে। তাদের দাবি অনুযায়ী প্রকল্প এলাকায় ৬০ ফুট রাস্তা রয়েছে, যদিও বাস্তবে এটি ১০ ফুট প্রশস্ত একটি সরকারি রাস্তা। এমনকি, কোনো জমির মালিকানা কিংবা নামজারি ছাড়াই প্লট বিক্রি শুরু করেছে তারা। এই প্লটে স্থানীয়দের বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ নানা স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো উপেক্ষা করে বিদেশি প্রবাসীদের কাছে প্লট বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে।
“জমি নয়, বিক্রি হচ্ছে প্রতারণার স্বপ্ন”
স্থানীয়দের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ ব্যক্তির কাছ থেকে বুকিং মানির নামে ৪-৫ কোটি টাকার লেনদেন করেছে রেলিক সিটি। অথচ রাজউকের অনুমোদন তো দূরে থাক, প্রাথমিক পরামর্শ তালিকাতেও কোম্পানিটির নাম নেই।

এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে গত ২১ এপ্রিল সোমবার কমলাপুর, রাজারবাগ, ভবানীপুরসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষ মানববন্ধন করেন। পরদিন রেলিক সিটির পক্ষ থেকে পাল্টা মানববন্ধন করা হয় এবং হামলা চালিয়ে তিনজনকে গুরুতর আহত করা হয়।

আহত সালাউদ্দিন আহমেদ এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি মামলা (নং-৭৮) দায়ের করেছেন। মামলায় রেলিক সিটির চেয়ারম্যান এ এস এম শাহ নেওয়াজ, পরিচালক সাব্বির, সন্ত্রাসী মো. নূরুজ্জামানসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর দাবি, এমন অবৈধ কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি, না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।