মুন্সীগঞ্জ জেলা ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন “পাতক্ষীর”-কে ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) পণ্যের সনদ প্রদান করা হয়। বুধবার পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর-এর উদ্যোগে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মাল্টিপারপাস হলে “বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও নিবন্ধনকৃত ভৌগোলিক নির্দেশকপণ্যের সনদ প্রদান” অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। মুন্সীগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব ফাতেমা তুল জান্নাত সনদটি গ্রহণ করেন। এরমাধ্যমে জেলার প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃত লাভ করলো পাতক্ষীর।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আদিলুর রহমান খান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ ওবায়দুর রহমান।
আলোচনায় বক্তারা মেধাসম্পদের সুরক্ষা ও GI পণ্যের পঠন-পাঠন ও বাণিজ্যিকীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং উদ্ভাবক বা কারিগরদের যথাযথ সম্মান ও স্বীকৃতি প্রদানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, গবেষক, উদ্যোক্তা এবং গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
২শ বছরের ঐতিহ্য পাতক্ষীর:
বহু প্রজন্ম ধরে স্থানীয় কারিগরদের নিপুণ হাতে তৈরি এই সুস্বাদু মিষ্টি মুন্সীগঞ্জবাসীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে। ২০০ বছর আগে সিরাজদিখানে পুলিন বিহারী দেব ও তাঁর স্ত্রী প্রথম নিজ বাড়িতে পাতক্ষীর তৈরি করেন। এরপর ধীরে ধীরে সেটি বাজারে বিক্রি শুরু করেন পুলিন বিহারী। সুস্বাদু এই মিষ্টি খাবার তৈরি করে সিরাজদিখান উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের সন্তোষপাড়া গ্রামের ঘোষ পরিবারগুলো। কলাপাতায় মুড়িয়ে পরিবেশন করা হতো বলে প্রথম দিকে এর নামকরণ করা হয় পাতাক্ষীর। পরে পরিচিতি পায় পাতক্ষীর হিসেবে। পুলিন বিহারীর মৃত্যুর পর এখন তাঁর উত্তরসূরিরা পাতক্ষীর তৈরি করছেন।
প্রস্তুতকারী কয়েকজেন সাথে কথা বলে জানাযায়, প্রথমে দুধ গরম করে ঢালা হয় বড় কড়াই। এরপর এক ঘণ্টা সেই দুধ জ্বাল দিয়ে কিছুটা ঘন করে মেশানো হয় হলুদগুঁড়া। পরে ঘণ্টা ধরে জ্বাল দেওয়ার পর যোগ করা হয় চিনি। মিশ্রণ ঘন হয়ে এলে অনবরত নাড়তে নাড়তে প্রস্তুত করা হয় ক্ষীর। ১পাতা পাতক্ষীর তৈরিতে দুধ প্রয়োজন হয় কেজি। চুলায় জ্বালের কাজ শেষ হলে এরপর তাফাল থেকে সুবিধাজনক পাত্রে ঢেলে মাটির পাতিলে গরম-গরম ক্ষীর তুলে রাখা হয়। ঘণ্টাখানেক পর ঠান্ডা হলে ক্ষীরের পাতিলগুলো নেওয়া হয় দোকানে। নিয়ম মত সংরক্ষন করা হলে ১মাস পর্যন্ত খাওয়ার উপযোগী থাকে পাতক্ষীর।
বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকার বাঙালি কমিউনিটির অনেক বিখ্যাত মিষ্টিপণ্যের দোকান বা সুপারশপেও বিক্রি করা হয় পাতক্ষীর। তা ছাড়া শীতকালে নতুন জামাইকে পিঠা-পুলির সঙ্গে এ ক্ষীর খেতে দেওয়া এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের চল। তাই পাতক্ষীর ক্রয়ে ভীড় থাকে সিরাজদিখানের দোকান গুলোতে । বর্তমানে এর দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। বর্তমানে সন্তোষপাড়া গ্রামের ৫-৬টি পরিবার পাতক্ষীর তৈরি ও বিক্রি করেন। সিরাজদিখান বাজারে সবারই দোকান রয়েছে। তথ্যটি আমাকে নিশ্চিত করেছে আরাফাত রায়হান সাকিব।