ঢাকা ০৪:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমরা শুধু আমাদের জন্য না, বিশ্বের জন্য বাংলাদেশ গড়তে চাই: প্রধান উপদেষ্ঠা

ছাত্রদের ঐক্য এই দেশ গঠন করেছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ছাত্রদের ঐক্য এই দেশ গঠন করেছে। পুরো জনগোষ্ঠীর মধ্যে এটি একটি ইউনিক বিষয়। বাংলাদেশিরা অনেক কথা বলেন, অনেক বিষয়ে দ্বিমত করেন; কিন্তু একটি বিষয়ে সবাই একমত যে, নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই।’

গত শনিবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে কোনো মতপার্থক্য নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গন্তব্য খুব পরিষ্কার, আমরা এটা করতে চাই এবং আমরা করব। সেজন্য আপনি এসেছেন আমাদেরকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে। আমরা শুধু আমাদের জন্য বাংলাদেশ গড়তে চাই না, আমরা এটি করতে চাই বিশ্বের জন্য, যাতে তারা দেখতে পারে যে, ভিন্ন উপায়ে কীভাবে করা যায়। মানুষের জীবন কীভাবে দ্রুত বদলে যেতে পারে। আমাদের জন্য ধীরগতির দিন শেষ। আমরা ধীরগতির পরিবর্তনে আর যাব না। আমাদের যাত্রায় আপনার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।’

প্রধান উপদেষ্টা জানায়, বাংলাদেশে অত্যন্ত আশ্চর্যজনক বিষয় ঘটে গেছে। বাংলাদেশে যারা এসেছেন তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না কীভাবে কী হলো, কীভাবে তরুণেরা রাজপথে নেমে এল এবং প্রতিবাদ করল। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা বটে। জীবন ছাড়া তাদের কিছুই ছিল না, কোনো অস্ত্র তাদের ছিল না। তারা শুধু বলেছে, আমরা স্বাধীনতা চাই, আমার দেশ ফেরত চাই এবং তারা সেটাই পূরণ করেছে। সেখান থেকেই নতুন বাংলাদেশের সূচনা।’

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে উদ্দেশ্য করে ইউনূস বলেন, আপনি এসেছেন, এর মধ্যে একটা জোর দিয়েছেন। এ দেশের মানুষ দেশের প্রয়োজনে যা করা দরকার তা করতে প্রস্তুত, আমাদের শুধু আপনার সহায়তা প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, ভুল তথ্য মোকাবিলায় আপনার সহায়তা দরকার। আমাদেরকে এটি শেষ করে ফেলছে। মানুষ কঠোর পরিশ্রম করছে একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে; কিন্তু কিছু মানুষের তা পছন্দ নয়। সুতরাং আমাদেরকে রক্ষা করুন ভুল তথ্য থেকে, বাকিটা আমরা করব। সেটি আমাদের জন্য কোনো সমস্যা নয়।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘এ দেশকে সফল করার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের যে বক্তব্য, তাতে আমি বাকরুদ্ধ। আপনার সফর এ দেশে উৎফুল্লতা নিয়ে এসেছে। রমজান মাস অর্ধেক প্রায় শেষ; কিন্তু আপনার সফর আমাদের জন্য অগ্রিম ঈদ বয়ে এনেছে। আপনার এ সফরে এখন থেকে ঈদের আয়োজন শুরু হয়েছে। কারণ আমরা চাচ্ছিলাম, আপনি কী বলতে চাচ্ছেন, তা শুনতে। বাংলাদেশের মানুষ আপনার বক্তব্য এবং আপনার সহায়তার প্রতিশ্রুতিতে বেশ খুশি।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য আপনি গতকাল যা করেছেন তাতে সবার মন জয় করেছেন। সবাই আপনাকে ফেরেশতা হিসেবে দেখেছে এবং একটাই বার্তা দিয়েছে যে, তারা ফিরে যেতে চায়। তারা আগামী বছরের ঈদে তাদের নিজ ঘরে আপনাকে আমন্ত্রণ জানাতে চায়। তারা দেখাতে চায়, এই দুনিয়ায় তারা কোনো রকম বোঝা নয়। তারা (রোহিঙ্গারা) বলতে চায়, আমাদের অর্থ খোঁজার প্রয়োজন হয় কেন, আমরা তো ভিক্ষুক না। আমরা পারিবারিক লোক। আমরা নিজেদের দেখভাল নিজেরাই করতে পারি, আমরা বাকি বিশ্বের দেখভাল করতে চাই নিজেদের মতো করে, আমরা কারও ওপর বোঝা না। তারা যে বোঝা নয়, এই বিশ্বের সম্পদ, তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে চায়, এই বার্তা দিয়েছে।’

প্রধান উপদেষ্ঠা বলেন, ‘গতকাল রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী, শিশু একটাই বার্তা দিয়েছে, আমাদের সাহায্য করুন নিজ দেশে ফিরে যেতে। তারা বুকে আশা বেঁধে আছে যে, তাদের স্বপ্ন সত্যি হবে, আপনাকে ধন্যবাদ তাদের মধ্যে আশা জাগানোর জন্য। এটি তাদের জন্য সেরা ঈদ পুরস্কার আপনি দিয়েছেন। আমি আশা করি, আপনি আবার আসবেন এবং বারবার আসবেন।’

জনপ্রিয় সংবাদ

বহাল থাকলো আবরার ফাহাদ হত্যায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন

আমরা শুধু আমাদের জন্য না, বিশ্বের জন্য বাংলাদেশ গড়তে চাই: প্রধান উপদেষ্ঠা

আপডেট সময় ০৮:৫৬:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

ছাত্রদের ঐক্য এই দেশ গঠন করেছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ছাত্রদের ঐক্য এই দেশ গঠন করেছে। পুরো জনগোষ্ঠীর মধ্যে এটি একটি ইউনিক বিষয়। বাংলাদেশিরা অনেক কথা বলেন, অনেক বিষয়ে দ্বিমত করেন; কিন্তু একটি বিষয়ে সবাই একমত যে, নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই।’

গত শনিবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে কোনো মতপার্থক্য নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গন্তব্য খুব পরিষ্কার, আমরা এটা করতে চাই এবং আমরা করব। সেজন্য আপনি এসেছেন আমাদেরকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে। আমরা শুধু আমাদের জন্য বাংলাদেশ গড়তে চাই না, আমরা এটি করতে চাই বিশ্বের জন্য, যাতে তারা দেখতে পারে যে, ভিন্ন উপায়ে কীভাবে করা যায়। মানুষের জীবন কীভাবে দ্রুত বদলে যেতে পারে। আমাদের জন্য ধীরগতির দিন শেষ। আমরা ধীরগতির পরিবর্তনে আর যাব না। আমাদের যাত্রায় আপনার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।’

প্রধান উপদেষ্টা জানায়, বাংলাদেশে অত্যন্ত আশ্চর্যজনক বিষয় ঘটে গেছে। বাংলাদেশে যারা এসেছেন তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না কীভাবে কী হলো, কীভাবে তরুণেরা রাজপথে নেমে এল এবং প্রতিবাদ করল। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা বটে। জীবন ছাড়া তাদের কিছুই ছিল না, কোনো অস্ত্র তাদের ছিল না। তারা শুধু বলেছে, আমরা স্বাধীনতা চাই, আমার দেশ ফেরত চাই এবং তারা সেটাই পূরণ করেছে। সেখান থেকেই নতুন বাংলাদেশের সূচনা।’

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে উদ্দেশ্য করে ইউনূস বলেন, আপনি এসেছেন, এর মধ্যে একটা জোর দিয়েছেন। এ দেশের মানুষ দেশের প্রয়োজনে যা করা দরকার তা করতে প্রস্তুত, আমাদের শুধু আপনার সহায়তা প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, ভুল তথ্য মোকাবিলায় আপনার সহায়তা দরকার। আমাদেরকে এটি শেষ করে ফেলছে। মানুষ কঠোর পরিশ্রম করছে একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে; কিন্তু কিছু মানুষের তা পছন্দ নয়। সুতরাং আমাদেরকে রক্ষা করুন ভুল তথ্য থেকে, বাকিটা আমরা করব। সেটি আমাদের জন্য কোনো সমস্যা নয়।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘এ দেশকে সফল করার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের যে বক্তব্য, তাতে আমি বাকরুদ্ধ। আপনার সফর এ দেশে উৎফুল্লতা নিয়ে এসেছে। রমজান মাস অর্ধেক প্রায় শেষ; কিন্তু আপনার সফর আমাদের জন্য অগ্রিম ঈদ বয়ে এনেছে। আপনার এ সফরে এখন থেকে ঈদের আয়োজন শুরু হয়েছে। কারণ আমরা চাচ্ছিলাম, আপনি কী বলতে চাচ্ছেন, তা শুনতে। বাংলাদেশের মানুষ আপনার বক্তব্য এবং আপনার সহায়তার প্রতিশ্রুতিতে বেশ খুশি।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য আপনি গতকাল যা করেছেন তাতে সবার মন জয় করেছেন। সবাই আপনাকে ফেরেশতা হিসেবে দেখেছে এবং একটাই বার্তা দিয়েছে যে, তারা ফিরে যেতে চায়। তারা আগামী বছরের ঈদে তাদের নিজ ঘরে আপনাকে আমন্ত্রণ জানাতে চায়। তারা দেখাতে চায়, এই দুনিয়ায় তারা কোনো রকম বোঝা নয়। তারা (রোহিঙ্গারা) বলতে চায়, আমাদের অর্থ খোঁজার প্রয়োজন হয় কেন, আমরা তো ভিক্ষুক না। আমরা পারিবারিক লোক। আমরা নিজেদের দেখভাল নিজেরাই করতে পারি, আমরা বাকি বিশ্বের দেখভাল করতে চাই নিজেদের মতো করে, আমরা কারও ওপর বোঝা না। তারা যে বোঝা নয়, এই বিশ্বের সম্পদ, তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে চায়, এই বার্তা দিয়েছে।’

প্রধান উপদেষ্ঠা বলেন, ‘গতকাল রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী, শিশু একটাই বার্তা দিয়েছে, আমাদের সাহায্য করুন নিজ দেশে ফিরে যেতে। তারা বুকে আশা বেঁধে আছে যে, তাদের স্বপ্ন সত্যি হবে, আপনাকে ধন্যবাদ তাদের মধ্যে আশা জাগানোর জন্য। এটি তাদের জন্য সেরা ঈদ পুরস্কার আপনি দিয়েছেন। আমি আশা করি, আপনি আবার আসবেন এবং বারবার আসবেন।’