ঢাকা ০৭:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ‌আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে বিএনপির সাধুবাদ Logo কুরআন দিবসে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর হাফেজ সংবর্ধনা Logo সরকারের সিদ্ধান্ত বিএনপির কথার সঙ্গে মিলে গেছে : এ্যানি Logo রাজনৈতিক দলের বিচারে ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ Logo আ.লীগ নিষিদ্ধের খবরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শিবিরের আনন্দ মিছিল Logo কেরানীগঞ্জে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে “কোরআন দিবস” উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo আওয়ামী লীগের নিবন্ধন দ্রুত বাতিল চায় এনসিপি Logo বিক্ষোভে উত্তাল তেল আবিব Logo আবারও শাহবাগ ব্লকেড জুলাই মঞ্চের Logo উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবি ‘কুচক্রীমূলক’ দাবি করে বেকার মুক্তি পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

ফাঁস হওয়া নথি বাস্তবায়ন চলছে, বিশ্বকে পরিয়ে টিনের চশমা; প্রসঙ্গ: ইসরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধ।

গত অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করার কয়েকদিন পর, ইসরায়েলের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের একটি নথি অনলাইনে ফাঁস হয়ে যায়, যা একটি অশুভ পরিকল্পনা প্রকাশ করে।

ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত গাজায় ১০ হাজার জনের বেশি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৪ হাজার ১০০ শিশু।

ইসরায়েলি সংবাদ সাইট ক্যালকালিস্ট প্রকাশিত ” গাজায় বেসামরিক জনসংখ্যার জন্য একটি রাজনৈতিক নির্দেশনার বিকল্প ” শিরোনামে নথিটিতে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজাকে জাতিগতভাবে উচ্ছেদ করার জন্য একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। যদিও পরিকল্পনাটি ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের সাথে মিলে যাচ্ছে।

পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় অনুসারে, “উত্তর গাজা স্ট্রিপের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বিমান অভিযান পরিচালনা করা হবে ..

দ্বিতীয় পর্যায়ে “একটি ক্রমশ স্থল কৌশল যা সীমান্ত বরাবর উত্তর থেকে এগিয়ে যাবে যতক্ষণ না পুরো গাজা উপত্যকা দখল করা হয় এবং ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারগুলি হামাস যোদ্ধাদের  নির্মূল করা হয়”।

পরিকল্পনার চূড়ান্ত পরিণতি হল, “ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক মিশরে বহিষ্কার করা, বিশেষ করে রাফাহ সীমান্তবর্তী সিনাই উপদ্বীপ। এই কারণে পরিকল্পনাটি নির্দেশ করে যে, রাফাহ অভিমুখে বেসামরিক জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য দক্ষিণমুখী পরিবহন রুটগুলি খোলা রাখা গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনটি পর্যায়ই বিভিন্ন মাত্রায় গাজায় ঘটেছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি বিশ্ব দেখেছে ইসরায়েল গাজার উত্তরে বোমাবর্ষণ করে বর্ণিত বিমান অভিযান শুরু করেছে। তারপর থেকে এটি পুরো অঞ্চলে বোমাবর্ষণ করছে। তাই জাতিসংঘসহ গাজার ভেতরে ও বাইরে অনেকেই সতর্ক করে যাচ্ছেন যে ,গাজার কোথাও নিরাপদ নয়।

যদিও ইসরায়েলি স্থলবাহিনী রোববার গাজার এলাকা থেকে আংশিকভাবে পিছু হটেছে । তারা এখনও এর উত্তরে রয়ে গেছে যখন, ইসরায়েলি বোমা হামলা অবরোধকৃত অঞ্চল জুড়ে ফিলিস্তিনিদের জীবন ধ্বংস করে চলেছে।

বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা গাজায় আটকে থাকা বা নিহত হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েল  পহেলা নভেম্বর থেকে  ধীরে ধীরে অবিচলিতভাবে এটির কিছু অংশকে মিশরে ঠেলে দিতে পেরেছে। বর্তমানে ৫লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি রয়েছে , যারা শুধুমাত্র দক্ষিণ গাজাতেই জাতিসংঘের  আশ্রয়ে রয়েছে।

এটি শেষ পর্যন্ত ‘তাঁবুর শহর’ এ নিয়ে যাবে কি না, যা ফাঁস হওয়া নথিতে ফিলিস্তিনিদের বসবাসের সুপারিশ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার নয়।
যেমন ফাঁস নথিতে বলা হয়েছে, ”উত্তর সিনাইয়ের পুনর্বাসন এলাকা।”

মিশর অবশ্য এই সম্ভাবনার বিরুদ্ধে পিছিয়ে যাচ্ছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবুলি অক্টোবরের শেষের দিকে বলেছিলেন , ”আমরা গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে আমাদের ভূখণ্ডকে যেকোনো দখল থেকে রক্ষা করতে লক্ষ লক্ষ জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।”

এটি প্রশ্ন জাগিয়েছে যে, কীভাবে বিশাল তাঁবুর শহরগুলি সম্ভাব্য  মিশরে প্রতিষ্ঠিত হবে?

নথি অনুসারে, এই এলাকাটি মিশরের মধ্যে কয়েক কিলোমিটারের জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে জনসংখ্যার কার্যক্রম বা বাসস্থানে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।

যদি ইসরায়েলের পরিকল্পনা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়, তবে এর অর্থ এই যে, মিশরকে তার ভূখণ্ডের একটি বড় অংশ উৎসর্গ করতে হবে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিদের বাসস্থানের জন্যই নয় বরং তাদের ইসরায়েল সীমান্তের কাছাকাছি যাওয়া থেকেও বাধা তৈরি করবে।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে মাদবুলি প্রতিরোধ সত্ত্বেও, মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক সংস্থা বুর্জিল হোল্ডিংস, রেসপন্স প্লাস হোল্ডিং এবং ক্লিওপেট্রা হসপিটালস গ্রুপ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনিদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, যারা মিশরে প্রবেশ করতে পারে।

এই সাহায্য দুর্ভাগ্যবশত একটি দ্বি-ধারী তলোয়ার। একদিকে এটি ফিলিস্তিনিদের তাদের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে, অন্যদিকে এটি ইসরায়েলকে উপকৃত করবে।
যেহেতু জাতিগত নির্মূল পরিকল্পনার সাথে মিল রেখে  এ সাহায্য ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে দূরে রাখে, আর সেখানেই ইসরায়েল তাদের চায়।

ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যম এবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, আগামী বেশ কিছুদিন গাজা স্ট্রিপের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে ইসরায়েল। হামাসের মতো কোনো সংগঠন যাতে সেখানে আর তৈরি হতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে চায় তারা।

ইসরায়েল যতদূর সম্ভব তাদের পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং ফাঁস হওয়া নথির প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন চলছে বলে দৃশ্যমান বাস্তবতায় মনে হচ্ছে। আর এটির জন্য রাজনৈতিক সমর্থন পাওয়ারও চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে পশ্চিমা বিশ্ব ফিলিস্তিনি ভাইদের সহায়তা এবং তাদের পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার জন্য অ-ইসরায়েল-পন্থী বিশ্বকে লক্ষ্য করে সুকৌশলে চালাচ্ছে প্রচারণা।

তদুপরি, প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে গাজার বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে নির্দিষ্ট প্রচারণা- ইসরায়েল শীঘ্রই যে অঞ্চলগুলি দখল করবে সেখানে ফিরে যাওয়ার কোনও আশা নেই।

পরোক্ষভাবে বার্তাটি যেন এমন, ‘আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আপনি হামাসের নেতৃত্বের কারণে এই জমি হারাবেন -একমাত্র বিকল্প হল আপনার মুসলিম ভাইদের সাহায্যে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া’।

এই প্রচারাভিযানগুলো, গাজায় ইসরায়েল যে নির্মম সহিংসতা চালিয়েছে, তার পাশাপাশি বৈশ্বিক জনসাধারণ এবং ফিলিস্তিনি উভয়ের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও মুসলিম মনোবল ভেঙে দেয়া, যা ইসরায়েলের গাজার প্রতি সম্ভাব্য আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতিয়মান হয়।

“পুনরুদ্ধারের” প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের প্রতি আসলে কী করছে(?) তা থেকে বৈশ্বিক জনসাধারণের দৃষ্টি বিভ্রান্ত করতে তাদের দুঃখজনক পরিস্থিতির উপর জোর দিয়েছে। এতে পালাক্রমে বৈশ্বিক জনসাধারণ ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সহানুভূতি বা এমনকি করুণার দিকে ঝুঁকে পড়বে; যেমনটি আমরা এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিকভাবে দেখছি।

এটি সেই সম্ভাবনাকেও অগ্রসর করে যে, বৈশ্বিক জনসাধারণ ফিলিস্তিনিদের সাথে নিজেকে মিত্র করার দিকে ঝুঁকে পড়বে। আর ভুলতে থাকবে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ। যেমনটি আমরা মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে দেখেছি।

 

ঢাকা ভয়েস/ আর. জামান

জনপ্রিয় সংবাদ

‌আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে বিএনপির সাধুবাদ

ফাঁস হওয়া নথি বাস্তবায়ন চলছে, বিশ্বকে পরিয়ে টিনের চশমা; প্রসঙ্গ: ইসরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধ।

আপডেট সময় ০৩:০৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩

গত অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করার কয়েকদিন পর, ইসরায়েলের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের একটি নথি অনলাইনে ফাঁস হয়ে যায়, যা একটি অশুভ পরিকল্পনা প্রকাশ করে।

ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত গাজায় ১০ হাজার জনের বেশি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৪ হাজার ১০০ শিশু।

ইসরায়েলি সংবাদ সাইট ক্যালকালিস্ট প্রকাশিত ” গাজায় বেসামরিক জনসংখ্যার জন্য একটি রাজনৈতিক নির্দেশনার বিকল্প ” শিরোনামে নথিটিতে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজাকে জাতিগতভাবে উচ্ছেদ করার জন্য একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। যদিও পরিকল্পনাটি ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের সাথে মিলে যাচ্ছে।

পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় অনুসারে, “উত্তর গাজা স্ট্রিপের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বিমান অভিযান পরিচালনা করা হবে ..

দ্বিতীয় পর্যায়ে “একটি ক্রমশ স্থল কৌশল যা সীমান্ত বরাবর উত্তর থেকে এগিয়ে যাবে যতক্ষণ না পুরো গাজা উপত্যকা দখল করা হয় এবং ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারগুলি হামাস যোদ্ধাদের  নির্মূল করা হয়”।

পরিকল্পনার চূড়ান্ত পরিণতি হল, “ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক মিশরে বহিষ্কার করা, বিশেষ করে রাফাহ সীমান্তবর্তী সিনাই উপদ্বীপ। এই কারণে পরিকল্পনাটি নির্দেশ করে যে, রাফাহ অভিমুখে বেসামরিক জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য দক্ষিণমুখী পরিবহন রুটগুলি খোলা রাখা গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনটি পর্যায়ই বিভিন্ন মাত্রায় গাজায় ঘটেছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি বিশ্ব দেখেছে ইসরায়েল গাজার উত্তরে বোমাবর্ষণ করে বর্ণিত বিমান অভিযান শুরু করেছে। তারপর থেকে এটি পুরো অঞ্চলে বোমাবর্ষণ করছে। তাই জাতিসংঘসহ গাজার ভেতরে ও বাইরে অনেকেই সতর্ক করে যাচ্ছেন যে ,গাজার কোথাও নিরাপদ নয়।

যদিও ইসরায়েলি স্থলবাহিনী রোববার গাজার এলাকা থেকে আংশিকভাবে পিছু হটেছে । তারা এখনও এর উত্তরে রয়ে গেছে যখন, ইসরায়েলি বোমা হামলা অবরোধকৃত অঞ্চল জুড়ে ফিলিস্তিনিদের জীবন ধ্বংস করে চলেছে।

বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা গাজায় আটকে থাকা বা নিহত হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েল  পহেলা নভেম্বর থেকে  ধীরে ধীরে অবিচলিতভাবে এটির কিছু অংশকে মিশরে ঠেলে দিতে পেরেছে। বর্তমানে ৫লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি রয়েছে , যারা শুধুমাত্র দক্ষিণ গাজাতেই জাতিসংঘের  আশ্রয়ে রয়েছে।

এটি শেষ পর্যন্ত ‘তাঁবুর শহর’ এ নিয়ে যাবে কি না, যা ফাঁস হওয়া নথিতে ফিলিস্তিনিদের বসবাসের সুপারিশ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার নয়।
যেমন ফাঁস নথিতে বলা হয়েছে, ”উত্তর সিনাইয়ের পুনর্বাসন এলাকা।”

মিশর অবশ্য এই সম্ভাবনার বিরুদ্ধে পিছিয়ে যাচ্ছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবুলি অক্টোবরের শেষের দিকে বলেছিলেন , ”আমরা গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে আমাদের ভূখণ্ডকে যেকোনো দখল থেকে রক্ষা করতে লক্ষ লক্ষ জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।”

এটি প্রশ্ন জাগিয়েছে যে, কীভাবে বিশাল তাঁবুর শহরগুলি সম্ভাব্য  মিশরে প্রতিষ্ঠিত হবে?

নথি অনুসারে, এই এলাকাটি মিশরের মধ্যে কয়েক কিলোমিটারের জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে জনসংখ্যার কার্যক্রম বা বাসস্থানে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।

যদি ইসরায়েলের পরিকল্পনা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়, তবে এর অর্থ এই যে, মিশরকে তার ভূখণ্ডের একটি বড় অংশ উৎসর্গ করতে হবে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিদের বাসস্থানের জন্যই নয় বরং তাদের ইসরায়েল সীমান্তের কাছাকাছি যাওয়া থেকেও বাধা তৈরি করবে।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে মাদবুলি প্রতিরোধ সত্ত্বেও, মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক সংস্থা বুর্জিল হোল্ডিংস, রেসপন্স প্লাস হোল্ডিং এবং ক্লিওপেট্রা হসপিটালস গ্রুপ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনিদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, যারা মিশরে প্রবেশ করতে পারে।

এই সাহায্য দুর্ভাগ্যবশত একটি দ্বি-ধারী তলোয়ার। একদিকে এটি ফিলিস্তিনিদের তাদের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে, অন্যদিকে এটি ইসরায়েলকে উপকৃত করবে।
যেহেতু জাতিগত নির্মূল পরিকল্পনার সাথে মিল রেখে  এ সাহায্য ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে দূরে রাখে, আর সেখানেই ইসরায়েল তাদের চায়।

ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যম এবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, আগামী বেশ কিছুদিন গাজা স্ট্রিপের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে ইসরায়েল। হামাসের মতো কোনো সংগঠন যাতে সেখানে আর তৈরি হতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে চায় তারা।

ইসরায়েল যতদূর সম্ভব তাদের পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং ফাঁস হওয়া নথির প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন চলছে বলে দৃশ্যমান বাস্তবতায় মনে হচ্ছে। আর এটির জন্য রাজনৈতিক সমর্থন পাওয়ারও চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে পশ্চিমা বিশ্ব ফিলিস্তিনি ভাইদের সহায়তা এবং তাদের পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার জন্য অ-ইসরায়েল-পন্থী বিশ্বকে লক্ষ্য করে সুকৌশলে চালাচ্ছে প্রচারণা।

তদুপরি, প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে গাজার বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে নির্দিষ্ট প্রচারণা- ইসরায়েল শীঘ্রই যে অঞ্চলগুলি দখল করবে সেখানে ফিরে যাওয়ার কোনও আশা নেই।

পরোক্ষভাবে বার্তাটি যেন এমন, ‘আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আপনি হামাসের নেতৃত্বের কারণে এই জমি হারাবেন -একমাত্র বিকল্প হল আপনার মুসলিম ভাইদের সাহায্যে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া’।

এই প্রচারাভিযানগুলো, গাজায় ইসরায়েল যে নির্মম সহিংসতা চালিয়েছে, তার পাশাপাশি বৈশ্বিক জনসাধারণ এবং ফিলিস্তিনি উভয়ের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও মুসলিম মনোবল ভেঙে দেয়া, যা ইসরায়েলের গাজার প্রতি সম্ভাব্য আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতিয়মান হয়।

“পুনরুদ্ধারের” প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের প্রতি আসলে কী করছে(?) তা থেকে বৈশ্বিক জনসাধারণের দৃষ্টি বিভ্রান্ত করতে তাদের দুঃখজনক পরিস্থিতির উপর জোর দিয়েছে। এতে পালাক্রমে বৈশ্বিক জনসাধারণ ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সহানুভূতি বা এমনকি করুণার দিকে ঝুঁকে পড়বে; যেমনটি আমরা এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিকভাবে দেখছি।

এটি সেই সম্ভাবনাকেও অগ্রসর করে যে, বৈশ্বিক জনসাধারণ ফিলিস্তিনিদের সাথে নিজেকে মিত্র করার দিকে ঝুঁকে পড়বে। আর ভুলতে থাকবে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ। যেমনটি আমরা মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে দেখেছি।

 

ঢাকা ভয়েস/ আর. জামান