মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নিখোঁজের একদিন পর রেললাইনের ধারে ইকবাল হোসেন (৩০) নামে এক যুবকের ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল আনুমানিক সাড়ে আটটায় কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন রেলগেটের পাশ থেকে খণ্ডিত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল থেকে ইকবাল হোসেনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। নিহত ইকবাল হোসেন রহিমপুর ইউনিয়নের বরচেগ গ্রামের ইলিয়াস মিয়ার পুত্র বলে জানা যায়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকালে উপজেলা পরিষদের কাছে রেললাইনের পাশে স্থানীয়রা একটি খণ্ডিত মরদেহ দেখতে পান। বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ইকবালের পরিবারের সদস্যরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল নিহতের হাত-পা বিচ্ছিন্ন লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠায়।
নিহত ইকবালের পরিবার জানায়, গত শুক্রবার ইকবাল কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভেড়াছড়া গ্রামে তার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যান। শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানিয়েছে, সেখান থেকে পরের দিন শনিবার বিকেলে তিনি নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। প্রথমে তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা গেলেও পরবর্তীতে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ইকবালের সন্ধানের জন্য ছবিসহ অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন। পাশাপাশি, ইকবালের শ্বশুর এবং বাবা কমলগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ইকবালের লাশ পাওয়ার পর উভয় পরিবারের লোকজন ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যা বলে অভিযোগ করছেন। উদ্ধার করা লাশের চেহারা এবং জিডি করা নিখোঁজ ইকবালের ছবির সাথে মিল পাওয়া গেছে।
নিহত ইকবালের স্ত্রী রিমা (২৫) বলেন, ‘আমার স্বামী গত শনিবার স্বাভাবিকভাবেই আমাদের বাড়ি থেকে তার বাড়ির দিকে রওনা হয়েছিলেন। আমাদের বিয়ের বয়স মাত্র ছয় মাস। আমার গর্ভে তিন মাসের সন্তান রয়েছে। স্বামীর সাথে আমার কখনোই কোনো মনোমালিন্য হয়নি। আমরা কেবল স্বামী-স্ত্রী ছিলাম না, একে অপরের খুব ভালো বন্ধুও ছিলাম।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘আমার স্বামীকে ট্রেনের নিচে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, বরং একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমি আমার স্বামীর হত্যার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার চাই।’
নিহত ইকবালের বাবা মো: ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। সঠিক তদন্তের মধ্যে যেন তা বের হয়ে আসে। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর রোববার সকালে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘গতকাল শনিবার নিহত ইকবালের বাবা ও তার শ্বশুর থানায় এসে জিডি করে গেছেন। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি।’
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা রেললাইন থেকে লাশ উদ্ধার করেছি। লাশের হাত-পাসহ পুরো শরীর ছিন্নভিন্ন অবস্থায় রয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যা নাকি আত্মহত্যা সেটি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে।