ঢাকা ০২:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের ‘ভরসা’ বিএনপি

দৃশ্যপটের বাইরে আওয়ামী লীগ। জুলাই গণহত্যার অভিযোগে শিগগিরই ক্ষমতার রাজনীতিতে আসতে পারবে না দলটি। সাত মাসেও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। ইসলামপন্থি দল ও গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব নেমেছে কট্টর বিরোধিতায়। এমন অবস্থায় প্রতিবেশী ভারত বিপাকে পড়েছে। তবে সময় গড়ানোয় বাংলাদেশের পরিবর্তে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা দেশটি বাস্তবতা মেনে নিচ্ছে। আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় ধরে নিয়েই দলটিকে আস্থায় আনার চেষ্টা করছে দিল্লি। আগামীতে বিএনপির কাঁধে ভর করেই স্বস্তি খুঁজতে চাইছে তারা। তথ্য সূত্র সমকাল

কূটনৈতিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অবশ্য গত জানুয়ারিতে ভারতের আর্মি ডে উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনেও দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীও এমন ইঙ্গিত দেন, ‘ঢাকা-দিল্লির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে।’ উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের সবচেয়ে চিন্তার কারণ পাকিস্তান ও জামায়াতে ইসলামী। ভারত বাংলাদেশে দ্রুত একটি নির্বাচন দেখতে চায়। কারণ, নির্বাচন হলে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি। ভারত মনে করছে, বিএনপি এরই মধ্যে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ফলে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ ভারতকে স্বস্তি দেবে।’ গত জানুয়ারিতে ‘বাংলাদেশ অ্যাট জিওপলিটিক্যাল ক্রসরোড’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পশ্চিমা এক রাষ্ট্রদূত সমকালকে বলেন, আগামী দিনের জন্য ভারত ও বিএনপি পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল। যদিও বিএনপির সঙ্গে কখনও স্বাভাবিক সম্পর্ক হয়নি ভারতের। বিএনপির সময়ে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান সামনে এলে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়। তবে সেসব পেছনে রেখে ট্রানজিশন সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে বিএনপিকেই পাশে চাইছে ভারত। বিএনপিও মনে করছে, ভারতের মতো বৃহৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে বৈরিতা রেখে ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হবে। সম্পর্ক ভালো না থাকলে কাজ ফেলে প্রতিবেশী মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকতে হবে। এ জন্য দর কষাকষির মনোভাবে রয়েছে বিএনপি।

দলটির নেতারা মনে করছেন, শিক্ষার্থী, সরকার ও জামায়াতের মতো শক্তিকে মোকাবিলা করতে তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সমর্থন লাগবে। বিশেষ করে ভারতের সমর্থন। গত সেপ্টেম্বরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। পরে বিএনপি মহাসচিব জানান, ভারতের হাইকমিশনার বলেছেন, তাঁর দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চায়। একই সঙ্গে দু’দেশের নিরাপত্তা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। আরও সুস্থ সম্পর্কের দিকে যেতে আগ্রহী তারা। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গেও তারা সম্পর্ক দৃঢ় করতে চায়। এ সম্পর্কে আরও কীভাবে ইতিবাচক জায়গায় নেওয়া যায়, সেভাবে তারা কাজ করতে আগ্রহী।

সূত্রের ভাষ্য, বাংলাদেশের পরিবর্তে ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের পর্দা এখন উন্মোচিত। বাংলাদেশে হাজারো ছাত্র-জনতাকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য সারির নেতারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে দিল্লি। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের ওপর ভারতের প্রভাব কেমন ছিল, তা দেশটির প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির লেখা বই ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস’-এ স্পষ্ট। এতে বলা হয়, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ভারত সফরে যান। তখন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেনাপ্রধানের আশঙ্কা ছিল, শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হলে তাঁকে চাকরিচ্যুত করবে। কিন্তু মইন ইউ আহমেদের চাকরির দায়িত্ব ব্যক্তিগতভাবে নেন প্রণব। তিনি আশ্বস্ত করেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হলেও তাঁর কোনো সমস্যা হবে না।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে। এর পর থেকে গত বছর ৫ আগস্ট পর্যন্ত হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা রাখে ভারত। বাংলাদেশে ‘অনুগত’ সরকার থাকায় আঞ্চলিক রাজনীতিসহ সার্বিক বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল দিল্লি। কিন্তু সব উল্টে দিয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময় বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের উত্থান ঘটে, বারবার দাবি করে এসেছে ভারত। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বিবিসিকে ওই সরকারের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘তারা (জোট সরকার) জিহাদি বহু গ্রুপের উত্থান হতে দিয়েছিল। এসব গ্রুপকে ব্যবহার করা হয়েছিল বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, পাকিস্তান থেকে আসা ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্র উদ্ধার।’

পশ্চিমা এক কূটনীতিক সমকালকে বলেন, ভারত মনে করে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ছিল চরম ভারতবিরোধী। এ কারণেই বিএনপির সঙ্গে ভারতের স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ যেভাবে দিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থেকেছে, তাতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কের প্রয়োজন অনুভব করেনি দেশটি। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বিপাকে পড়েছে ভারত। এখন বিএনপিকে ভরসা করা ছাড়া তাদের সামনে ভিন্ন সুযোগ নেই। তাই বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এখন থেকেই প্রস্তুত করছে দিল্লি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি স্পষ্ট, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না ভারত। দরজায় এমন অস্বাভাবিক সম্পর্ক রেখে দিনের পর দিন চলা কঠিন। ভারত পরিত্রাণের উপায় হিসেবে বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন দেখতে চাইছে। কারণ এখন নির্বাচন হলে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে এবং সে সুযোগই কাজে লাগাতে চায় তারা।

পশ্চিমা কূটনীতিকদের তথ্য অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে, যা দিল্লির কপালে ভাঁজ ফেলছে। আবার তাইওয়ান ইস্যুতে মাঝে কিছুটা দূরত্ব হলেও বিএনপির সঙ্গে চীনের বন্ধুত্ব বেশ পুরোনো। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে চীন সখ্য গড়ে তোলার আগেই জায়গাটি দখলে মরিয়া ভারত। বিএনপি-বেইজিং সম্পর্কে তাইওয়ান ইস্যুই ঘুঁটি করবে দিল্লি। বাংলাদেশে চীনের অবস্থান যেন মাথাব্যথার কারণ না হয়, তা নিশ্চিত করতে চাইছে ভারত।

সূত্র:সমকাল

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কক্সবাজারে বিমান ঘাঁটিতে দুর্বৃত্তদের হামলা

ভারতের ‘ভরসা’ বিএনপি

আপডেট সময় ১১:৩৩:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দৃশ্যপটের বাইরে আওয়ামী লীগ। জুলাই গণহত্যার অভিযোগে শিগগিরই ক্ষমতার রাজনীতিতে আসতে পারবে না দলটি। সাত মাসেও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। ইসলামপন্থি দল ও গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব নেমেছে কট্টর বিরোধিতায়। এমন অবস্থায় প্রতিবেশী ভারত বিপাকে পড়েছে। তবে সময় গড়ানোয় বাংলাদেশের পরিবর্তে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা দেশটি বাস্তবতা মেনে নিচ্ছে। আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় ধরে নিয়েই দলটিকে আস্থায় আনার চেষ্টা করছে দিল্লি। আগামীতে বিএনপির কাঁধে ভর করেই স্বস্তি খুঁজতে চাইছে তারা। তথ্য সূত্র সমকাল

কূটনৈতিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অবশ্য গত জানুয়ারিতে ভারতের আর্মি ডে উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনেও দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীও এমন ইঙ্গিত দেন, ‘ঢাকা-দিল্লির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে।’ উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের সবচেয়ে চিন্তার কারণ পাকিস্তান ও জামায়াতে ইসলামী। ভারত বাংলাদেশে দ্রুত একটি নির্বাচন দেখতে চায়। কারণ, নির্বাচন হলে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি। ভারত মনে করছে, বিএনপি এরই মধ্যে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ফলে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ ভারতকে স্বস্তি দেবে।’ গত জানুয়ারিতে ‘বাংলাদেশ অ্যাট জিওপলিটিক্যাল ক্রসরোড’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পশ্চিমা এক রাষ্ট্রদূত সমকালকে বলেন, আগামী দিনের জন্য ভারত ও বিএনপি পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল। যদিও বিএনপির সঙ্গে কখনও স্বাভাবিক সম্পর্ক হয়নি ভারতের। বিএনপির সময়ে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান সামনে এলে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়। তবে সেসব পেছনে রেখে ট্রানজিশন সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে বিএনপিকেই পাশে চাইছে ভারত। বিএনপিও মনে করছে, ভারতের মতো বৃহৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে বৈরিতা রেখে ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হবে। সম্পর্ক ভালো না থাকলে কাজ ফেলে প্রতিবেশী মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকতে হবে। এ জন্য দর কষাকষির মনোভাবে রয়েছে বিএনপি।

দলটির নেতারা মনে করছেন, শিক্ষার্থী, সরকার ও জামায়াতের মতো শক্তিকে মোকাবিলা করতে তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সমর্থন লাগবে। বিশেষ করে ভারতের সমর্থন। গত সেপ্টেম্বরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। পরে বিএনপি মহাসচিব জানান, ভারতের হাইকমিশনার বলেছেন, তাঁর দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চায়। একই সঙ্গে দু’দেশের নিরাপত্তা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। আরও সুস্থ সম্পর্কের দিকে যেতে আগ্রহী তারা। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গেও তারা সম্পর্ক দৃঢ় করতে চায়। এ সম্পর্কে আরও কীভাবে ইতিবাচক জায়গায় নেওয়া যায়, সেভাবে তারা কাজ করতে আগ্রহী।

সূত্রের ভাষ্য, বাংলাদেশের পরিবর্তে ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের পর্দা এখন উন্মোচিত। বাংলাদেশে হাজারো ছাত্র-জনতাকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য সারির নেতারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে দিল্লি। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের ওপর ভারতের প্রভাব কেমন ছিল, তা দেশটির প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির লেখা বই ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস’-এ স্পষ্ট। এতে বলা হয়, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ভারত সফরে যান। তখন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেনাপ্রধানের আশঙ্কা ছিল, শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হলে তাঁকে চাকরিচ্যুত করবে। কিন্তু মইন ইউ আহমেদের চাকরির দায়িত্ব ব্যক্তিগতভাবে নেন প্রণব। তিনি আশ্বস্ত করেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হলেও তাঁর কোনো সমস্যা হবে না।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে। এর পর থেকে গত বছর ৫ আগস্ট পর্যন্ত হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা রাখে ভারত। বাংলাদেশে ‘অনুগত’ সরকার থাকায় আঞ্চলিক রাজনীতিসহ সার্বিক বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল দিল্লি। কিন্তু সব উল্টে দিয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময় বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের উত্থান ঘটে, বারবার দাবি করে এসেছে ভারত। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বিবিসিকে ওই সরকারের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘তারা (জোট সরকার) জিহাদি বহু গ্রুপের উত্থান হতে দিয়েছিল। এসব গ্রুপকে ব্যবহার করা হয়েছিল বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, পাকিস্তান থেকে আসা ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্র উদ্ধার।’

পশ্চিমা এক কূটনীতিক সমকালকে বলেন, ভারত মনে করে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ছিল চরম ভারতবিরোধী। এ কারণেই বিএনপির সঙ্গে ভারতের স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ যেভাবে দিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থেকেছে, তাতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কের প্রয়োজন অনুভব করেনি দেশটি। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বিপাকে পড়েছে ভারত। এখন বিএনপিকে ভরসা করা ছাড়া তাদের সামনে ভিন্ন সুযোগ নেই। তাই বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এখন থেকেই প্রস্তুত করছে দিল্লি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি স্পষ্ট, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না ভারত। দরজায় এমন অস্বাভাবিক সম্পর্ক রেখে দিনের পর দিন চলা কঠিন। ভারত পরিত্রাণের উপায় হিসেবে বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন দেখতে চাইছে। কারণ এখন নির্বাচন হলে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে এবং সে সুযোগই কাজে লাগাতে চায় তারা।

পশ্চিমা কূটনীতিকদের তথ্য অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে, যা দিল্লির কপালে ভাঁজ ফেলছে। আবার তাইওয়ান ইস্যুতে মাঝে কিছুটা দূরত্ব হলেও বিএনপির সঙ্গে চীনের বন্ধুত্ব বেশ পুরোনো। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে চীন সখ্য গড়ে তোলার আগেই জায়গাটি দখলে মরিয়া ভারত। বিএনপি-বেইজিং সম্পর্কে তাইওয়ান ইস্যুই ঘুঁটি করবে দিল্লি। বাংলাদেশে চীনের অবস্থান যেন মাথাব্যথার কারণ না হয়, তা নিশ্চিত করতে চাইছে ভারত।

সূত্র:সমকাল