অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। এটা নিয়ে তাদের বক্তব্য আছে। আমরা সেটা তাদের কাছ থেকে জানতে চাই। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা যদি ভারতে বসে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালায়, তার দায় ভারতকে নিতে হবে৷ অবশ্যই এই কর্মকাণ্ডের দায় হিসেবে আমরা ভারতের কাছ থেকে জবাবদিহিতা চাইব।”
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ সংকলিত ‘সংবাদপত্রে জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আহম্মদ ফয়েজ নামে লেখালেখি করেন ফয়েজ আহম্মদ।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আন্দোলনে সংবাদমাধ্যমগুলোর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ভূমিকাই ছিল। জুলাইয়ের ১৪ তারিখ পর্যন্ত কোটা আন্দোলনই ছিল। ১৬ তারিখ থেকে সেটা সরকার পতনের আন্দোলনে দিকে ধাবিত হয়। এরপর পত্রিকাগুলো নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে শুরু করে। অনেকে অনলাইন থেকে তাদের রিপোর্ট সরিয়ে নিলেও পত্রিকাগুলো আমরা আর্কাইভ করার ব্যবস্থা করে রাখি।”
তিনি বলেন, “ডিজিএফআই পত্রিকাগুলোকে চালাত। তারা আমাদের বিরুদ্ধে লিখতে বাধ্য করত। সে সময় যেসব গণমাধ্যম সরকারের পক্ষে কাজ করেছে—সেটা বাধ্য হয়ে হোক বা আদর্শিক কারণেই হোক—সে বক্তব্য তারা প্রকাশ করছে না। আমি মনে করি, নৈতিক কারণেই তাদের বক্তব্য প্রকাশ করা উচিত। এতে মানুষের হারানো বিশ্বাস হয়ত কিছুটা ফিরে আসবে। এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক সমালোচনা করেই যাচ্ছে। আমি চাইব, আমরা ছোটখাটো বিষয়ে বিভেদ না করে আমাদের লড়াইকে পূর্ণভাব ব্যাখ্যা করব৷”
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা আরো বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভারতে বসে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। আমরা বলতে চাই, আতঙ্ক ছড়িয়ে লাভ নেই। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ছাত্র-জনতা মাঠে আছে, মাঠে থাকবে।”
অনুষ্ঠানে আদর্শ প্রকাশনার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব রাহমান বলেন, অভ্যুত্থানের সময় অধিকাংশ গণমাধ্যম সরকারের পক্ষে কাজ করেছে। মাঠে একটা ঘটনা হতো, আমরা গণমাধ্যমে ভিন্ন চিত্র দেখতে পেতাম। এতে আমাদের বিভ্রান্ত হতে হতো। মুষ্টিমেয় গণমাধ্যম যতটা সম্ভব সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। সে কাজ সুন্দরভাবে ডকুমেন্টেশন করেছেন আহম্মদ ফয়েজ। বইটি হয়ত শত বছর পরও ডকুমেন্ট হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ৫ আগস্টের আগে অনেক সাংবাদিক, পত্রিকার সম্পাদকরা সরকারের চাটুকারিতা করেছে। ফলে, সে সময় তারা সংবাদপত্রে তথ্য ছাপায়নি। অনেকে কম লিখেছে। কেউ প্রথম পাতায় লেখেনি। আবার কেউ তথ্য গোপন করে সরকারের পক্ষে লিখেছে। কিন্তু, আমরা একদল ছাত্র-জনতার মাধ্যমে রক্ত দিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছি। আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে, কিন্তু আমরা যেন এই রক্তের ইতিহাস থেকে বিচ্যুত না হই।