কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে গত এক সপ্তাহে ৯ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতদের মধ্যে একটি শিশু, দুইজন যুবক, পাঁচজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ ও একজন বৃদ্ধা রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ৯টি লাশের মধ্যে ৮টি হত্যাকাণ্ডের শিকার।
গত সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ২৪ ঘণ্টায় জেলার দুটি উপজেলায় ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পূর্ব ধনুসারা গ্রামে একটি বসতঘরের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে সাহেদা আক্তার (৭৫) নামে এক বৃদ্ধার লাশ পাওয়া যায়। নিহতের স্বামী মাওলানা আব্দুল মমিন জানান, তিনি ভোরে মসজিদে ইমামতি করতে গেলে তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
একই দিন কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার চন্ডিমুড়া পাহাড় থেকে মো. রিফাত হোসেন (৯) নামে শিশুর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। শিশুটি দুই দিন আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। সদর দক্ষিণের মোহনপুর থেকে টিপু সুলতান (২৮) নামে যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার সঙ্গে রূপা আক্তার নামে এক নারীর পরকীয়া ছিল। রূপা পুলিশকে জানান, টিপু তার ঘরে এসে গলায় ফাঁস দেয়। তবে নিহতের পরিবার নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছেন। পুলিশ রূপা আক্তারকে আটক করেছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে।
গত সোমবার (২৮ জানুয়ারি) একই দিনে কুমিল্লার তিন উপজেলায় তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে খাল থেকে অজ্ঞাতনামা পুরুষের ভাসমান লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একই দিন লাকসাম উপজেলার হোটেল ড্রিমল্যান্ড থেকে প্রগতি ইন্সুরেন্সের কর্মী আলতাফ হোসেনের (৩৭) লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয় কীভাবে তিনি সেখানে এলেন বা কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। একইদিন মনোহরগঞ্জ উপজেলার বান্দুয়াইন গ্রামের সড়কের পাশে এক নারীর লাশ পাওয়া যায়। তিনি ওই গ্রামের মৃত আয়ুব আলীর স্ত্রী এবং বাড়িতে একাই থাকতেন। তার মৃত্যু কীভাবে হলো বা তিনি এত রাতে কেন বাইরে ছিলেন, তা স্পষ্ট নয়। তদন্তের জন্য লাশ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) কুমিল্লার পাঁচথুবিতে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের দাবি, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তৌহিদকে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
একের পর এক লাশ উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ রাতে চলাফেরা করতে অনিরাপদ বোধ করছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত ও নির্জন এলাকার বাসিন্দারা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। বাজার, রাস্তা এবং সামাজিক জমায়েতে মানুষ কম উপস্থিত হচ্ছে। কেউ কেউ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতুল ইসলাম জানান, প্রতিটি হত্যার রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা চলছে। বেশ কিছু আসামি ধরা হয়েছে। অপরাধী যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।