ঢাকা ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্ক নিশ্চিত করা সরকারের বড় সাফল্য: প্রেস সচিব Logo সিরাজগঞ্জে ৫০০ পরিবার পেল দোস্ত এইডের খাদ্য সামগ্রী Logo ফের নাফ নদী থেকে ট্রলারসহ ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি Logo ডাকসু নির্বাচনে বাধা এলে সবাইকে ডেকে সবকিছু বলে দেব: ঢাবি উপাচার্য Logo কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলাতে বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত Logo খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে বাসভবনে যাবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী Logo বিধিমালা ভঙ্গের পরও হামীমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন: বাকের Logo জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে: জি কে গউছ Logo মুন্সীগঞ্জে ছাত্রশিবিরের “A+ সংবর্ধনা” অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্দীপনা Logo এখন জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হওয়ার স্বপ্ন দেখছে: নুর

আজ থেকে সারা দেশে বন্ধ ট্রেন চলাচল

রানিং এলাউন্সসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এতে বন্ধ রয়েছে সারাদেশের ট্রেন চলাচল। কমলাপুর স্টেশন থেকে গতকাল রাত পৌনে একটায় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ছেড়ে যাবার পর আর কোন ট্রেন যাত্রা করে নি। এতে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে যাদের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবার কথা ছিল তারা পড়েছেন বিপাকে।

মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন দেওয়া ও আনুতোষিক সুবিধা দেয়ার দাবি পূরণ না হওয়ায় কর্মবিরতিতে গেছে রেলের রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। রানিং স্টাফের মধ্যে রয়েছেন ট্রেন চালক, গার্ড ও টিকিট চেকার পদধারীরা।

সমস্যা সমাধানে গতকাল সোমবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোন সুরাহা হয় নি। যদিও যাত্রী ভোগান্তি বিবেচনা করে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু আন্দোলনরত রেলকর্মীরা বলেছেন, চার বছর ধরে এসব দাবি উপেক্ষা করায় কর্মবিরতি ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ে কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়। যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।

তারা জানান, কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল, সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়।

তারা আরও জানান, ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১০ এপ্রিল রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ এপ্রিল চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেয়। পরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১১ জুন তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক স্পষ্ট করে রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই বছর ১৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আবারও আপত্তি জানায়। ফলে রানিং স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

সর্বশেষ এক চিঠিতে গত ২৩ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জানায়, ‘২০২২ সালের ২১ আগস্ট অর্থ বিভাগের ৯১ নম্বর স্মারকে জারি করা পত্রের (খ) অনুচ্ছেদটি অপরিবর্তিত রাখা হলো এবং (ক) অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপে সংশোধন করা হলো।’
সংশোধনে বলা হয়, রানিং স্টাফ হিসেবে চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভ্রমণ ভাতা বা দৈনিক ভাতার পরিবর্তে রেলওয়ে এস্টাবিলিশমেন্ট কোডের বিধান অনুযায়ী রানিং অ্যালাউন্স প্রাপ্য হবেন। চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা প্রাপ্য হবেন না এবং মাসিক রানিং অ্যালাউন্সের পরিমাণ প্রাপ্য মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ মতামত জানার পর আরও ফুঁসে ওঠেন রানিং স্টাফরা। তারা বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৮ ঘণ্টার বেশি আমরা কাজ করব। আমরা তো সবাই টাকার জন্যই কাজ করি। ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে যদি টাকাই না দেয়, তাহলে আমরা কাজ করব কেন?

সমস্যার সমাধানে কি চান— এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ট্রেন চালানো বন্ধের বিষয় থেকে সরে আসতে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে স্পষ্টীকরণ চিঠি দিতে হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্টীকরণ চিঠি দিলে হবে না। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। এটা ১৬০ বছর ধরে চলে আসছে। ১৬০ বছর ধরে চলে আসা একটা নিয়ম হুট করে বন্ধ করে দেবে, এটা তো রেলের কোনো স্টাফ মেনে নিতে পারে না। আমরা তাদের বারবার সময় দিয়েছি, বারবার আন্দোলন করেছি, বারবার প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু এবার আর কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।

জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্ক নিশ্চিত করা সরকারের বড় সাফল্য: প্রেস সচিব

আজ থেকে সারা দেশে বন্ধ ট্রেন চলাচল

আপডেট সময় ০৯:৪৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫

রানিং এলাউন্সসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এতে বন্ধ রয়েছে সারাদেশের ট্রেন চলাচল। কমলাপুর স্টেশন থেকে গতকাল রাত পৌনে একটায় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ছেড়ে যাবার পর আর কোন ট্রেন যাত্রা করে নি। এতে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে যাদের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবার কথা ছিল তারা পড়েছেন বিপাকে।

মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন দেওয়া ও আনুতোষিক সুবিধা দেয়ার দাবি পূরণ না হওয়ায় কর্মবিরতিতে গেছে রেলের রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। রানিং স্টাফের মধ্যে রয়েছেন ট্রেন চালক, গার্ড ও টিকিট চেকার পদধারীরা।

সমস্যা সমাধানে গতকাল সোমবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোন সুরাহা হয় নি। যদিও যাত্রী ভোগান্তি বিবেচনা করে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু আন্দোলনরত রেলকর্মীরা বলেছেন, চার বছর ধরে এসব দাবি উপেক্ষা করায় কর্মবিরতি ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ে কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়। যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।

তারা জানান, কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল, সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়।

তারা আরও জানান, ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১০ এপ্রিল রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ এপ্রিল চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেয়। পরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১১ জুন তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক স্পষ্ট করে রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই বছর ১৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আবারও আপত্তি জানায়। ফলে রানিং স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

সর্বশেষ এক চিঠিতে গত ২৩ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জানায়, ‘২০২২ সালের ২১ আগস্ট অর্থ বিভাগের ৯১ নম্বর স্মারকে জারি করা পত্রের (খ) অনুচ্ছেদটি অপরিবর্তিত রাখা হলো এবং (ক) অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপে সংশোধন করা হলো।’
সংশোধনে বলা হয়, রানিং স্টাফ হিসেবে চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভ্রমণ ভাতা বা দৈনিক ভাতার পরিবর্তে রেলওয়ে এস্টাবিলিশমেন্ট কোডের বিধান অনুযায়ী রানিং অ্যালাউন্স প্রাপ্য হবেন। চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা প্রাপ্য হবেন না এবং মাসিক রানিং অ্যালাউন্সের পরিমাণ প্রাপ্য মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ মতামত জানার পর আরও ফুঁসে ওঠেন রানিং স্টাফরা। তারা বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৮ ঘণ্টার বেশি আমরা কাজ করব। আমরা তো সবাই টাকার জন্যই কাজ করি। ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে যদি টাকাই না দেয়, তাহলে আমরা কাজ করব কেন?

সমস্যার সমাধানে কি চান— এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ট্রেন চালানো বন্ধের বিষয় থেকে সরে আসতে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে স্পষ্টীকরণ চিঠি দিতে হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্টীকরণ চিঠি দিলে হবে না। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। এটা ১৬০ বছর ধরে চলে আসছে। ১৬০ বছর ধরে চলে আসা একটা নিয়ম হুট করে বন্ধ করে দেবে, এটা তো রেলের কোনো স্টাফ মেনে নিতে পারে না। আমরা তাদের বারবার সময় দিয়েছি, বারবার আন্দোলন করেছি, বারবার প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু এবার আর কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।