ঢাকা ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণে পরিণত হচ্ছে হরিরামপুরের ‘ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি’

সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণে পরিণত হচ্ছে হরিরামপুরের ‘ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি'

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান ‘ ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি ‘ দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণে পরিণত হচ্ছে বাড়িটি। উপজেলার ঐতিহাসিক এই বাড়িটি প্রায় দুইশো বছরের পুরোনো। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ বাড়ছে, এই অবস্থায় চলতে থাকলে দিনে দিনে ঐতিহাসিক বাড়িটির সৌন্দর্য যেন বিলীন হয়ে জাবে।

পোদ্দারবাড়ির চতুর্থ পুরুষ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঝিটকা অঞ্চলের বাল্লা ইউনিয়নে তৎকালিন সময়ের ধনাঢ্য পরিবার খ্যাত পোদ্দার বাড়ির মূল কর্ণাধার ছিলেন মহারাজ পোদ্দার। মহারাজ পোদ্দারের ছিল দুই সন্তান। রাম পোদ্দার ও আনন্দ মোহন পোদ্দার। এই আনন্দ মোহন পোদ্দারের ছিল তিন ছেলে। যোগেশ্বর পোদ্দার, সর্বেশ্বর পোদ্দার ও হরমোহন পোদ্দার। বাবার পৈুৃক সূত্রে প্রাপ্ত ৭ একর জায়গার ওপর উনিশ শতকের গোড়ার দিকে তিন সহোদর মিলেই গড়ে তোলেন দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন স্থাপনা। বর্তমানে এটি ‘ঝিটকা পোদ্দারবাড়ি’ নামে পরিচিতি এবং উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
আনন্দ মোহন পোদ্দার ৭ একর জমির ওপর বাড়িটির দক্ষিণ ও উত্তর পাশে দু’টি বিশাল পুকুর। তবে দক্ষিণ পাশে পুকুরটি গোসলের জন্য তৎকালিন সময়ে দৃষ্টিনন্দন শান বাঁধাই ঘাট নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়াও বাড়িটির পূর্ব পাশে আছে দিগন্ত জোড়া সবুজ শ্যামল ফসলের মাঠ।

বাড়ির আঙ্গিনায় দক্ষিণে পুকুর পাড়ে রয়েছে বিশাল চৌচালা ঘর। ঘরটির চাল টিনের হলেও চারপাশের দেয়াল কাঠের। চারপাশের বারান্দাও কাঠের তৈরি। এই ঘরেই তৎকালিন আমলে বিচার-সালিসের বৈঠক হতো। এর উত্তর পাশে পূর্ব-পশ্চিমে দৃষ্টিনন্দন বিশাল আধা পাকা দু’টি ঘর। ঘরগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে লোহার কাঠ। সামনের অংশে রয়েছে নিপুণ হাতের নয়ন জুরানো কারুকাজ। এর পেছনের অংশে অর্থাৎ উত্তর পাশে আছে দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্বমুখী কারুকার্য খচিত একতলা বিশিষ্ট তিনটি প্রাসাদ। প্রতিটি প্রাসাদে চার থেকে পাঁচটি করে বিশালকায় কক্ষ। এই প্রসাদেই বসবাস করতেন পোদ্দার বাড়ির সদস্যরা। তবে সংস্কারের অভাবে অযুœ অবহেলায় বর্তমানে প্রাসাদগুলো এখন জরাজীর্ণ।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় আনন্দ মোহন পোদ্দারের বংশধরেরা স্বপরিবারে ভারতে চলে গেলেও রাম পোদ্দারের বংশধরেরা এখানেই থেকে যায়। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার আনন্দ মোহন পোদ্দারের বংশধরের ৭ একরের বাড়িটি অধিগ্রহণ করে নেয়। এর ফলে ১৯৬৭ সালে তৎকালিন পাক সরকার বাড়ির দক্ষিণের ঘরটিতে সার্কেল অফিস (রাজস্ব) করে। যা বর্তমানে বাল্লা ইউনিয়নের ভূমি অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যদিও বছর তিনেক আগে পাশেই ভূমি অফিসের জন্য একতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়, যা এখনও উদ্বোধন করা হয়নি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিও বহন করে বাড়িটি। ওই সময় এখানে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প করা হয়। আগস্ট মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ক্যাম্প পরিচালিত হয়।

এ প্রসঙ্গে গ্রামবাসীরা জানান যে, তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমানকে এই বিষয়ে জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পোদ্দারবাড়ির পরিত্যক্ত যে ভবনগুলো আছে সেগুলো সংস্কারসহ পুরো বাড়িটি নিয়েই তারা প্ল্যান করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছে । অনুমোদনসহ বরাদ্দ পেলেই এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে আরও আকর্ষনীয় করে তোলা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণে পরিণত হচ্ছে হরিরামপুরের ‘ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি’

আপডেট সময় ০৭:১৮:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান ‘ ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি ‘ দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণে পরিণত হচ্ছে বাড়িটি। উপজেলার ঐতিহাসিক এই বাড়িটি প্রায় দুইশো বছরের পুরোনো। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ বাড়ছে, এই অবস্থায় চলতে থাকলে দিনে দিনে ঐতিহাসিক বাড়িটির সৌন্দর্য যেন বিলীন হয়ে জাবে।

পোদ্দারবাড়ির চতুর্থ পুরুষ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঝিটকা অঞ্চলের বাল্লা ইউনিয়নে তৎকালিন সময়ের ধনাঢ্য পরিবার খ্যাত পোদ্দার বাড়ির মূল কর্ণাধার ছিলেন মহারাজ পোদ্দার। মহারাজ পোদ্দারের ছিল দুই সন্তান। রাম পোদ্দার ও আনন্দ মোহন পোদ্দার। এই আনন্দ মোহন পোদ্দারের ছিল তিন ছেলে। যোগেশ্বর পোদ্দার, সর্বেশ্বর পোদ্দার ও হরমোহন পোদ্দার। বাবার পৈুৃক সূত্রে প্রাপ্ত ৭ একর জায়গার ওপর উনিশ শতকের গোড়ার দিকে তিন সহোদর মিলেই গড়ে তোলেন দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন স্থাপনা। বর্তমানে এটি ‘ঝিটকা পোদ্দারবাড়ি’ নামে পরিচিতি এবং উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
আনন্দ মোহন পোদ্দার ৭ একর জমির ওপর বাড়িটির দক্ষিণ ও উত্তর পাশে দু’টি বিশাল পুকুর। তবে দক্ষিণ পাশে পুকুরটি গোসলের জন্য তৎকালিন সময়ে দৃষ্টিনন্দন শান বাঁধাই ঘাট নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়াও বাড়িটির পূর্ব পাশে আছে দিগন্ত জোড়া সবুজ শ্যামল ফসলের মাঠ।

বাড়ির আঙ্গিনায় দক্ষিণে পুকুর পাড়ে রয়েছে বিশাল চৌচালা ঘর। ঘরটির চাল টিনের হলেও চারপাশের দেয়াল কাঠের। চারপাশের বারান্দাও কাঠের তৈরি। এই ঘরেই তৎকালিন আমলে বিচার-সালিসের বৈঠক হতো। এর উত্তর পাশে পূর্ব-পশ্চিমে দৃষ্টিনন্দন বিশাল আধা পাকা দু’টি ঘর। ঘরগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে লোহার কাঠ। সামনের অংশে রয়েছে নিপুণ হাতের নয়ন জুরানো কারুকাজ। এর পেছনের অংশে অর্থাৎ উত্তর পাশে আছে দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্বমুখী কারুকার্য খচিত একতলা বিশিষ্ট তিনটি প্রাসাদ। প্রতিটি প্রাসাদে চার থেকে পাঁচটি করে বিশালকায় কক্ষ। এই প্রসাদেই বসবাস করতেন পোদ্দার বাড়ির সদস্যরা। তবে সংস্কারের অভাবে অযুœ অবহেলায় বর্তমানে প্রাসাদগুলো এখন জরাজীর্ণ।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় আনন্দ মোহন পোদ্দারের বংশধরেরা স্বপরিবারে ভারতে চলে গেলেও রাম পোদ্দারের বংশধরেরা এখানেই থেকে যায়। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার আনন্দ মোহন পোদ্দারের বংশধরের ৭ একরের বাড়িটি অধিগ্রহণ করে নেয়। এর ফলে ১৯৬৭ সালে তৎকালিন পাক সরকার বাড়ির দক্ষিণের ঘরটিতে সার্কেল অফিস (রাজস্ব) করে। যা বর্তমানে বাল্লা ইউনিয়নের ভূমি অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যদিও বছর তিনেক আগে পাশেই ভূমি অফিসের জন্য একতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়, যা এখনও উদ্বোধন করা হয়নি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিও বহন করে বাড়িটি। ওই সময় এখানে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প করা হয়। আগস্ট মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ক্যাম্প পরিচালিত হয়।

এ প্রসঙ্গে গ্রামবাসীরা জানান যে, তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমানকে এই বিষয়ে জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পোদ্দারবাড়ির পরিত্যক্ত যে ভবনগুলো আছে সেগুলো সংস্কারসহ পুরো বাড়িটি নিয়েই তারা প্ল্যান করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছে । অনুমোদনসহ বরাদ্দ পেলেই এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে আরও আকর্ষনীয় করে তোলা হবে।