ঢাকা ১১:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপির ‘নিরপেক্ষ সরকার দাবি’ আরেকটা ১/১১ সরকারের ইঙ্গিত

বিএনপির ‘নিরপেক্ষ সরকার দাবি’ আরেকটা ১/১১ সরকারের ইঙ্গিত

বিএনপির ‘নিরপেক্ষ সরকার দাবির পরিকল্পনা’ আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনকে ইঙ্গিত করে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন উপদেষ্টা নাহিদ। বিএনপির নির্বাচন পরিকল্পনা, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়া, জাতীয় ঐক্যসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু বর্ণনা করা হয়েছে তার পোস্টে।

তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। ১/১১ এর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।

ছাত্র ও অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে মাইনাস করার পরিকল্পনা ৫ আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে দাবি করে উপদেষ্টা নাহিদ লিখেছেন, ৫ আগস্ট যখন ছাত্র-জনতা রাজপথে লড়াই করছে, পুলিশের গুলি অব্যাহত রয়েছে, তখন আমাদের আপসকামী অনেক জাতীয় নেতৃবৃন্দ ক্যান্টনমেন্টে জনগণকে বাদ দিয়ে নতুন সরকার করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন (অনেকে ছাত্রদের কথাও বলেছেন সেখানে)।

উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমরা ৩ আগস্ট থেকে বলে আসছি, কোনো প্রকারের সেনাশাসন বা জরুরি অবস্থা মেনে নেব না। আমাদের বারবার ক্যান্টনমেন্টে যেতে বলা হলেও, অস্বীকার করি। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে আলোচনা ও বার্গেনিংয়ের মাধ্যমে ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

আমরা চেয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার হলে ছাত্রদের হয়ত সরকারে আসার প্রয়োজন হত না। জাতীয় সরকার অনেকদিন স্থায়ী হবে, এই বিবেচনায় বিএনপি রাজি হয়নি। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরেই দেশে জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি ছিল। অথচ, বিএনপি জাতীয় সরকারের কথা বলতেছে সামনের নির্বাচনের পরে।

নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, ছাত্ররাই এই সরকারের এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর, যেটা ১/১১ এর সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে। বিএনপি কয়েকদিন আগে মাইনাস টু-এর আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করতে নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ সরকারের প্রস্তাবনা করছে।

এ ধরনের পরিকল্পনা গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনভাবেই এটা মেনে নেবে না। আমি মনে করি, এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র বলেও উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম।

তিনি আরো বলেন, এই সরকার জাতীয় সরকার না হলেও সরকারে আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশীদারত্ব রয়েছে। সব পক্ষই নানান সুবিধা ভোগ করছে। সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট এটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের আইজির নিয়োগ হয়েছিল, যারা মূলত বিএনপির লোক। এরকমভাবে সরকারের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানান স্তরে বিএনপিপন্থি লোকজন রয়েছেন। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে, এই বাস্তবতায়ও মাথায় রাখতে হবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা; সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অথচ এগুলা কোনোটাই ছাত্রদের দলীয় কোনো দাবি ছিল না। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য ছাত্ররা বারবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে।

কিন্তু এর মানে এই না যে, গণতন্ত্রবিরোধী ও অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী কোনো পরিকল্পনা হলে সেখানে আমরা বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেব। পোস্টে তিনি লিখেন, আওয়ামী লীগ বিষয়ে ভারতের প্রধান দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সম্ভব হয়েছে, অথচ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিষয়ে আমরা ঐক্য করতে পারিনি এত হত্যা ও অপরাধের পরেও। হায় এই ‘জাতীয় ঐক্য’ লইয়া আমরা কী রাষ্ট্র বানাবো!

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে দুর্বল করা সহজ কারণ, সহজেই বিভাজিত করা যায়। এ দেশের বড় বড় লোকেরা অল্পমূল্যে বিক্রি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন।’’

বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি না, সমগ্র বিএনপি এই অবস্থান গ্রহণ করে। বরং, বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন চায়। বিএনপির দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী নেতৃত্বকে আহ্বান করব, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে না গিয়ে তাদের সাথে বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতির পথ বেছে নিন।

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য প্রস্তুত কুয়েত

বিএনপির ‘নিরপেক্ষ সরকার দাবি’ আরেকটা ১/১১ সরকারের ইঙ্গিত

আপডেট সময় ০৭:১২:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

বিএনপির ‘নিরপেক্ষ সরকার দাবির পরিকল্পনা’ আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনকে ইঙ্গিত করে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন উপদেষ্টা নাহিদ। বিএনপির নির্বাচন পরিকল্পনা, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়া, জাতীয় ঐক্যসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু বর্ণনা করা হয়েছে তার পোস্টে।

তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। ১/১১ এর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।

ছাত্র ও অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে মাইনাস করার পরিকল্পনা ৫ আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে দাবি করে উপদেষ্টা নাহিদ লিখেছেন, ৫ আগস্ট যখন ছাত্র-জনতা রাজপথে লড়াই করছে, পুলিশের গুলি অব্যাহত রয়েছে, তখন আমাদের আপসকামী অনেক জাতীয় নেতৃবৃন্দ ক্যান্টনমেন্টে জনগণকে বাদ দিয়ে নতুন সরকার করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন (অনেকে ছাত্রদের কথাও বলেছেন সেখানে)।

উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমরা ৩ আগস্ট থেকে বলে আসছি, কোনো প্রকারের সেনাশাসন বা জরুরি অবস্থা মেনে নেব না। আমাদের বারবার ক্যান্টনমেন্টে যেতে বলা হলেও, অস্বীকার করি। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে আলোচনা ও বার্গেনিংয়ের মাধ্যমে ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

আমরা চেয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার হলে ছাত্রদের হয়ত সরকারে আসার প্রয়োজন হত না। জাতীয় সরকার অনেকদিন স্থায়ী হবে, এই বিবেচনায় বিএনপি রাজি হয়নি। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরেই দেশে জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি ছিল। অথচ, বিএনপি জাতীয় সরকারের কথা বলতেছে সামনের নির্বাচনের পরে।

নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, ছাত্ররাই এই সরকারের এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর, যেটা ১/১১ এর সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে। বিএনপি কয়েকদিন আগে মাইনাস টু-এর আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করতে নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ সরকারের প্রস্তাবনা করছে।

এ ধরনের পরিকল্পনা গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনভাবেই এটা মেনে নেবে না। আমি মনে করি, এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র বলেও উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম।

তিনি আরো বলেন, এই সরকার জাতীয় সরকার না হলেও সরকারে আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশীদারত্ব রয়েছে। সব পক্ষই নানান সুবিধা ভোগ করছে। সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট এটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের আইজির নিয়োগ হয়েছিল, যারা মূলত বিএনপির লোক। এরকমভাবে সরকারের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানান স্তরে বিএনপিপন্থি লোকজন রয়েছেন। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে, এই বাস্তবতায়ও মাথায় রাখতে হবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা; সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অথচ এগুলা কোনোটাই ছাত্রদের দলীয় কোনো দাবি ছিল না। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য ছাত্ররা বারবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে।

কিন্তু এর মানে এই না যে, গণতন্ত্রবিরোধী ও অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী কোনো পরিকল্পনা হলে সেখানে আমরা বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেব। পোস্টে তিনি লিখেন, আওয়ামী লীগ বিষয়ে ভারতের প্রধান দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সম্ভব হয়েছে, অথচ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিষয়ে আমরা ঐক্য করতে পারিনি এত হত্যা ও অপরাধের পরেও। হায় এই ‘জাতীয় ঐক্য’ লইয়া আমরা কী রাষ্ট্র বানাবো!

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে দুর্বল করা সহজ কারণ, সহজেই বিভাজিত করা যায়। এ দেশের বড় বড় লোকেরা অল্পমূল্যে বিক্রি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন।’’

বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি না, সমগ্র বিএনপি এই অবস্থান গ্রহণ করে। বরং, বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন চায়। বিএনপির দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী নেতৃত্বকে আহ্বান করব, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে না গিয়ে তাদের সাথে বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতির পথ বেছে নিন।