ঢাকা ০৪:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo যৌথবাহিনীর অভিযানে গুলিসহ সেচ্ছাসেবক দল নেতা আটক Logo নওগাঁর ধামইরহাট থানা থেকে ট্রাংক ভেঙে এইচএসসি ২০২৫ এর প্রশ্নপত্র চুরি Logo মুখ ফসকে’ ইসরায়েলের বিপক্ষে বক্তব্য দিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত Logo ইরাক আগ্রাসনের মতো মিথ্যা অজুহাতে ইসরায়েলের হামলা’ Logo মে মাসে প্রবাসী আয় ৩৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা Logo হজযাত্রীর কোটা না বাড়াতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ ধর্ম উপদেষ্টার Logo ত্রিপক্ষীয় নতুন জোটে বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সম্মতি Logo ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা ‘বিপজ্জনক নজির’:চীন Logo যানজট নিরসনের চট্টগ্রামে হচ্ছে মনোরেল Logo চলমান সংঘাতের মধ্যেই তুরস্কে গেলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিএনপির অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিলেন ছাত্রহত্যা আসামি শ্রমিকলীগ নেতা, খুঁজে পায় না পুলিশ

জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সমন্বয়ক ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন ছাত্র-জনতা আন্দোলনে সরাসরি হামলাকারি ফরিদপুর জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি পুলিশের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলাম নাছির।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিষ্টিটিউটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত কেন্দ্রিয় কমিটির বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান। সভাটি বিকেল ৪টায় শেষ হয়।

৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি এই গোলাম নাছির। সে ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরাসরি তার বাহিনী নিয়ে হামলায় অংশ নেয়। আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রোগামেও ঢাকাতে তার দলবল নিয়ে অংশ নেয়। তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও ফরিদপুর জেলায় ছাত্র হত্যার কমপক্ষে ৫টি মামলা হয়েছে। সেই থেকে পলাতক গোলাম নাছির। শুধু নাছির একা নন, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে দেখা গেছে জেলা শ্রমিকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জুবায়ের জাকিরকে।

পুলিশ খুঁজে না পেলেও, এমন একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে দেখে হতবাক ফরিদপুরের সাধারণ মানুষ ও ছাত্র সমাজ। ভাইরাল ভিডিওতে তারা পুলিশ ও বিএনপির প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করে চলেছেন।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুরের অন্যতম সম্বনয়ক আবরাব নাদিম ইতু বলেছেন, এই সন্ত্রাসী নাছির তার সহযোগীদের নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার উপর গত ৩ ও ৪ আগস্ট অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা চালিয়েছে। সেসময় পুলিশও তাদের সহযোগী ছিল। আমরা এই নাছির ও তার সহযোগীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নাছিরের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় অনুষ্ঠানে অতিথিদের সামনে ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কাস ইউনিয়নের পক্ষে বহিষ্কৃত এই নেতা বক্তব্য রাখছেন। এসময় তার পাশে দাড়িয়ে ছিলেন ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কাস ইউনিয়নের বহিষ্কৃত সভাপতি ও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জুবায়ের জাকির।

বক্তব্যের প্রথমে নাছির মঞ্চে উপস্থিত প্রধান অতিথি, সভাপতি ও ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদককে অ্যাড্রেস করেন। পরে বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি ২২ বছর ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। এই সময় বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন যখন যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে আমরা শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে থেকেছি। বিগত দিনেও আমরা শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে কাজ করেছি আগামীতেও করবো।

ফরিদপুর জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলাম নাছিরের আসল নাম আশরাফুল আলম নাছির। শহরের ওয়্যারলেস পাড়ার বাসিন্দা এই নাছিরের পিতার নাম মৃত মনিরুজ্জামান ওরফে বদরুল। ফরিদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় ২৩ নম্বরে গোলাম নাছিরের নাম। সন্ত্রাস, হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিস্ফোরক বোমা প্রস্তুত ও অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহের অসংখ্য মামলার আসামি নাছির।

প্রসঙ্গত, একসময়ের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো যার পরিবারে সেই নাছির এখন নামে বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক। একের পর এক অপরাধে যুক্ত হয়ে পুলিশের কালো তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হলেও নানা কৌশলে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে নাছির। রাস্তার বখাটে সন্ত্রাস থেকে প্রথমে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং তারপর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সর্বশেষ জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি বনে যান গোলাম নাছির। নাছিরের বোন ফরিদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মাহমুদা বেগম ও বড় ভাই তপন ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগ নেতা।

ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসি মো. আসাদউজ্জামান বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখেছি। ওই গোলাম নাছিরকে আটক করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ রয়েছে সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।

ট্যাগস :

যৌথবাহিনীর অভিযানে গুলিসহ সেচ্ছাসেবক দল নেতা আটক

বিএনপির অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিলেন ছাত্রহত্যা আসামি শ্রমিকলীগ নেতা, খুঁজে পায় না পুলিশ

আপডেট সময় ০৮:৪৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সমন্বয়ক ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন ছাত্র-জনতা আন্দোলনে সরাসরি হামলাকারি ফরিদপুর জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি পুলিশের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলাম নাছির।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিষ্টিটিউটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত কেন্দ্রিয় কমিটির বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান। সভাটি বিকেল ৪টায় শেষ হয়।

৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি এই গোলাম নাছির। সে ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরাসরি তার বাহিনী নিয়ে হামলায় অংশ নেয়। আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রোগামেও ঢাকাতে তার দলবল নিয়ে অংশ নেয়। তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও ফরিদপুর জেলায় ছাত্র হত্যার কমপক্ষে ৫টি মামলা হয়েছে। সেই থেকে পলাতক গোলাম নাছির। শুধু নাছির একা নন, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে দেখা গেছে জেলা শ্রমিকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জুবায়ের জাকিরকে।

পুলিশ খুঁজে না পেলেও, এমন একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে দেখে হতবাক ফরিদপুরের সাধারণ মানুষ ও ছাত্র সমাজ। ভাইরাল ভিডিওতে তারা পুলিশ ও বিএনপির প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করে চলেছেন।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুরের অন্যতম সম্বনয়ক আবরাব নাদিম ইতু বলেছেন, এই সন্ত্রাসী নাছির তার সহযোগীদের নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার উপর গত ৩ ও ৪ আগস্ট অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা চালিয়েছে। সেসময় পুলিশও তাদের সহযোগী ছিল। আমরা এই নাছির ও তার সহযোগীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নাছিরের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় অনুষ্ঠানে অতিথিদের সামনে ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কাস ইউনিয়নের পক্ষে বহিষ্কৃত এই নেতা বক্তব্য রাখছেন। এসময় তার পাশে দাড়িয়ে ছিলেন ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কাস ইউনিয়নের বহিষ্কৃত সভাপতি ও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জুবায়ের জাকির।

বক্তব্যের প্রথমে নাছির মঞ্চে উপস্থিত প্রধান অতিথি, সভাপতি ও ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদককে অ্যাড্রেস করেন। পরে বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি ২২ বছর ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। এই সময় বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন যখন যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে আমরা শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে থেকেছি। বিগত দিনেও আমরা শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে কাজ করেছি আগামীতেও করবো।

ফরিদপুর জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলাম নাছিরের আসল নাম আশরাফুল আলম নাছির। শহরের ওয়্যারলেস পাড়ার বাসিন্দা এই নাছিরের পিতার নাম মৃত মনিরুজ্জামান ওরফে বদরুল। ফরিদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় ২৩ নম্বরে গোলাম নাছিরের নাম। সন্ত্রাস, হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিস্ফোরক বোমা প্রস্তুত ও অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহের অসংখ্য মামলার আসামি নাছির।

প্রসঙ্গত, একসময়ের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো যার পরিবারে সেই নাছির এখন নামে বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক। একের পর এক অপরাধে যুক্ত হয়ে পুলিশের কালো তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হলেও নানা কৌশলে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে নাছির। রাস্তার বখাটে সন্ত্রাস থেকে প্রথমে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং তারপর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সর্বশেষ জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি বনে যান গোলাম নাছির। নাছিরের বোন ফরিদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মাহমুদা বেগম ও বড় ভাই তপন ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগ নেতা।

ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসি মো. আসাদউজ্জামান বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখেছি। ওই গোলাম নাছিরকে আটক করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ রয়েছে সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।