জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গসংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) প্রেসিডেন্ট ও শীর্ষ বিচারক নাওয়াফ সালামকে লেবাননের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন। তাকে নতুন মন্ত্রিসভা ও সরকার গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট আউনের এই ঘোষণার মাধ্যমে লেবাননে প্রায় দুই বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটল। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা নাওয়াফ সালামের এ মনোনয়নকে পশ্চিম এশিয়ার সংকটে জর্জরিত এ দেশটির জন্য চমকপ্রদ পরিবর্তন বলে উল্লেখ করেছেন। এর প্রধান কারণ গত দুই বছর ধরে লেবাননে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন ছিল এবং মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অস্থিরতা সামাল দেওয়ার মতো শক্তি সেই সরকারের ছিল না। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে লেবাননের প্রেসিডেন্টের পদও খালি ছিল।
সৌদি আরবের জোরালো চাপের জেরে গত ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে এমপিদের ভোটের ভিত্তিতে লেবাননের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন আউন। তারপর নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণের জন্য সোমবার ফের ভোট দেন এমপিরা।
লেবাননের পার্লামেন্টের মোট আসনসংখ্যা ১২৮টি। এক প্রতিবেদনে তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, এই এমপিদের মধ্যে ৮৪ জন নাওয়াফ সালামের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
সালাম বর্তমানে লেবাননের বাইরে আছেন, তবে আজ মঙ্গলবারের মধ্যেই তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।
লেবানন মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত দেশ। মুসলিমদের মধ্যে সুন্নিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তবে দেশটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিয়াপন্থি মুসলিমও রয়েছেন। এ কারণে দেশটির সংবিধানে শিয়া-সুন্নি মুসলিম এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রতিনিধিত্ব ও ভারসাম্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সংবিধান অনুসারে, লেবাননের প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন একজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং মন্ত্রিসভায় শিয়া-সুন্নিদের ভারসাম্য অবশ্যই থাকতে হবে।
নাওয়াফ সালাম সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দু’বার প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রার্থী ছিলেন। তিনি ব্যাপকভাবে একজন সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিত। তিনি সুন্নি মুসলিম। আর শুধু সুন্নি মুসলিমরাই লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।
আইসিজের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর গত বছর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা গণহত্যা মামলা এবং অন্যান্য ট্রাইব্যুনালের নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই বিচারক আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন।
কিছু সংবাদমাধ্যম নাওয়াফ সালামের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হওয়ার বিষয়টিকে ‘সুনামির’ সঙ্গে তুলনা করেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, গত রোববার সকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। এর আগ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতিকে ওই পদের জন্য সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
সালামের প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ ও তাদের মিত্র হিসেবে পরিচিত শিয়া রাজনৈতিক দল আমালের জন্য একটি বড় ধাক্কা। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নাজিব মিকাতির প্রতি তাদের সমর্থন ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। হিজবুল্লাহর সংসদীয় ব্লকের নেতা মোহাম্মদ রাদ সাংবাদিকদের বলেন, সালামকে মনোনীত করার পদক্ষেপ দেশে ‘বিভাজনের’ বীজ বপন করেছে। তিনি আশা করেন যে, মন্ত্রিসভা দেশের স্বীকারোক্তিমূলক ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তিকে সম্মান করবে।
প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য সোমবার এমপিদের যে ভোট হয়েছে, সেখানে কোনো শিয়া আইনপ্রণেতা ভোট দেননি। তাই সরকার গঠন হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে তার পথ তেমন মসৃন হবে না বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা।