ঢাকা ১২:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সীমান্তে নিয়ম মানতে হবে, দিল্লিকে কড়া বার্তা ঢাকার

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বেশ তৎপর ভারত। বেড়া নির্মাণ করতে গিয়ে সীমান্তের নিয়ম লঙ্ঘন করছে দেশটি। এ ব্যাপারে দিল্লিকে কঠোর বার্তা দিয়েছে ঢাকা। গতকাল রোববার বিকেলে ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে সীমান্তে দেশটির তৎপরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার কাছে সীমান্তে বিএসএফের কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন কোনো উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে ভারতের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, অপরাধমুক্ত সীমান্ত নিশ্চিত করার ব্যাপারে ভারতের প্রত্যয় নিয়ে কথা বলেছি। চোরাচালান, অপরাধীদের চলাচল, পাচারের চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে দমন বিষয়ে আলোচনা করেছি। এগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলার জন্য সীমান্তে বেড়া নির্মাণ বিষয়ে আমাদের বোঝাপড়া রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এবং বিজিবি যোগাযোগ রাখছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, দু’পক্ষের যে সিদ্ধান্তগুলো রয়েছে, তার বাস্তবায়ন হবে এবং অপরাধ মোকাবিলায় সহযোগিতার দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে।

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালানোর ঘটনায় এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর প্রণয় ভার্মাকে তলব করা হয়েছিল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ১৯৭৫ সালে সই করা সীমান্ত নিয়ে যৌথ গাইডলাইনে সুস্পষ্ট নির্দশিকা রয়েছে, যা মূলত দুই দেশের সীমান্ত আইন।

এতে বলা রয়েছে, উভয় দেশের শূন্য রেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে প্রতিরক্ষা সামর্থ্য-সংবলিত যে কোনো কাজের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ১৫০ গজের মধ্যে যদি কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করতে হয়, তবে এক দেশকে অপর দেশের সম্মতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ সীমান্তে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া তৈরির সময় এ বিষয়টি মেনে চলেনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের ৩ হাজার ২৭১ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করেছে দিল্লি। বাকি রয়েছে ৮৮৫ কিলোমিটার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সীমান্তের গ্রাম, লোকালয় এবং প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় মোট ১৬০টি স্থানে ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়, যা দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারত ৩৫ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া ১৫০ গজের মধ্যে তৈরি করেছে প্রায় ৬৮টি স্থানে। বর্তমানে ৫টির কাজ চলমান। বাকি রয়েছে ৮৭টি। চলমান কাজের মধ্যে নিয়ম না মানায় বিজিবি বাধা দিয়েছে বিএসএফকে। এর মধ্যে তিনটি স্থানে কাজ বন্ধ রেখেছে দেশটি।

তিনি বলেন, অতীতে শুধু কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কথা বললেও কোনো ধরনের সম্মতি ছাড়া ভারত রাস্তা, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে যে নির্ধারিত নকশা অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তা মানা হয়নি। এ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শূন্য লাইনের কাছাকাছি জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করেছে। বেড়া তৈরির পাশাপাশি সেখানে সার্চলাইট, ক্যামেরা, ডিউটি পোস্টসহ নজরদারির স্থাপনা তৈরি করেছে, যার কোনো অনুমোদন নেই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের হাইকমিশনারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ এ ধরনের অননুমোদিত কর্মকাণ্ডে সীমান্তে উত্তেজনা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মনোভাবকে ক্ষুণ্ন করে। বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের আসন্ন আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সম্প্রতি সুনামগঞ্জ সীমান্তে এক বাংলাদেশি নাগরিককে বিএসএফের হত্যার বিষয়টি তুলে ধরে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন সীমান্ত হত্যার পুনরাবৃত্তিতে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের তৎপরতা বন্ধ এবং সব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বিগত সরকারের সময়ে সীমান্তে বেড়া দেওয়া নিয়ে যেসব অসম সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, সেগুলো বাতিলে দিল্লিকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে ভারত কোনোভাবেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে পারবে না। তবে ১৫০ গজের বাইরে হলে আপত্তি নেই। নোম্যান্স ল্যান্ড থেকে ১৫০ গজের ভেতরে যে কোনো উন্নয়নকাজ করতে হলে পার্শ্ববর্তী দেশকে জানাতে হয়। ভারত তা করেনি। সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে চারটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। বিগত সরকার সীমান্তে ভারতকে নানা সুযোগ দিয়েছে। নির্মাণ করতে দিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।

জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, লালমনিরহাট, ফেনী, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া ও নওগাঁর পত্নীতলায় সমঝোতা স্মারক লঙ্ঘন করে এবং বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া ভারত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করেছিল। বিজিবি এবং জনগণের প্রতিবাদের মুখে তিন বিঘা করিডোর এবং নওগাঁ ও লালমনিরহাটের মোট পাঁচটি স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধে তারা বাধ্য হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘সীমান্তে আমাদের প্রচুর শক্তি রয়েছে। বিজিবির সঙ্গে জনগণও কঠোরভাবে প্রতিহত করছে। কোনো বিরূপ ঘটনা যাতে না ঘটে, তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় হাইকমিশনকে জানানো হবে।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম ও বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

সীমান্তে নিয়ম মানতে হবে, দিল্লিকে কড়া বার্তা ঢাকার

সীমান্তে নিয়ম মানতে হবে, দিল্লিকে কড়া বার্তা ঢাকার

আপডেট সময় ০৮:৫৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বেশ তৎপর ভারত। বেড়া নির্মাণ করতে গিয়ে সীমান্তের নিয়ম লঙ্ঘন করছে দেশটি। এ ব্যাপারে দিল্লিকে কঠোর বার্তা দিয়েছে ঢাকা। গতকাল রোববার বিকেলে ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে সীমান্তে দেশটির তৎপরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার কাছে সীমান্তে বিএসএফের কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন কোনো উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে ভারতের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, অপরাধমুক্ত সীমান্ত নিশ্চিত করার ব্যাপারে ভারতের প্রত্যয় নিয়ে কথা বলেছি। চোরাচালান, অপরাধীদের চলাচল, পাচারের চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে দমন বিষয়ে আলোচনা করেছি। এগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলার জন্য সীমান্তে বেড়া নির্মাণ বিষয়ে আমাদের বোঝাপড়া রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এবং বিজিবি যোগাযোগ রাখছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, দু’পক্ষের যে সিদ্ধান্তগুলো রয়েছে, তার বাস্তবায়ন হবে এবং অপরাধ মোকাবিলায় সহযোগিতার দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে।

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালানোর ঘটনায় এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর প্রণয় ভার্মাকে তলব করা হয়েছিল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ১৯৭৫ সালে সই করা সীমান্ত নিয়ে যৌথ গাইডলাইনে সুস্পষ্ট নির্দশিকা রয়েছে, যা মূলত দুই দেশের সীমান্ত আইন।

এতে বলা রয়েছে, উভয় দেশের শূন্য রেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে প্রতিরক্ষা সামর্থ্য-সংবলিত যে কোনো কাজের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ১৫০ গজের মধ্যে যদি কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করতে হয়, তবে এক দেশকে অপর দেশের সম্মতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ সীমান্তে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া তৈরির সময় এ বিষয়টি মেনে চলেনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের ৩ হাজার ২৭১ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করেছে দিল্লি। বাকি রয়েছে ৮৮৫ কিলোমিটার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সীমান্তের গ্রাম, লোকালয় এবং প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় মোট ১৬০টি স্থানে ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়, যা দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারত ৩৫ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া ১৫০ গজের মধ্যে তৈরি করেছে প্রায় ৬৮টি স্থানে। বর্তমানে ৫টির কাজ চলমান। বাকি রয়েছে ৮৭টি। চলমান কাজের মধ্যে নিয়ম না মানায় বিজিবি বাধা দিয়েছে বিএসএফকে। এর মধ্যে তিনটি স্থানে কাজ বন্ধ রেখেছে দেশটি।

তিনি বলেন, অতীতে শুধু কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কথা বললেও কোনো ধরনের সম্মতি ছাড়া ভারত রাস্তা, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে যে নির্ধারিত নকশা অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তা মানা হয়নি। এ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শূন্য লাইনের কাছাকাছি জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করেছে। বেড়া তৈরির পাশাপাশি সেখানে সার্চলাইট, ক্যামেরা, ডিউটি পোস্টসহ নজরদারির স্থাপনা তৈরি করেছে, যার কোনো অনুমোদন নেই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের হাইকমিশনারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ এ ধরনের অননুমোদিত কর্মকাণ্ডে সীমান্তে উত্তেজনা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মনোভাবকে ক্ষুণ্ন করে। বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের আসন্ন আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সম্প্রতি সুনামগঞ্জ সীমান্তে এক বাংলাদেশি নাগরিককে বিএসএফের হত্যার বিষয়টি তুলে ধরে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন সীমান্ত হত্যার পুনরাবৃত্তিতে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের তৎপরতা বন্ধ এবং সব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বিগত সরকারের সময়ে সীমান্তে বেড়া দেওয়া নিয়ে যেসব অসম সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, সেগুলো বাতিলে দিল্লিকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে ভারত কোনোভাবেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে পারবে না। তবে ১৫০ গজের বাইরে হলে আপত্তি নেই। নোম্যান্স ল্যান্ড থেকে ১৫০ গজের ভেতরে যে কোনো উন্নয়নকাজ করতে হলে পার্শ্ববর্তী দেশকে জানাতে হয়। ভারত তা করেনি। সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে চারটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। বিগত সরকার সীমান্তে ভারতকে নানা সুযোগ দিয়েছে। নির্মাণ করতে দিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।

জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, লালমনিরহাট, ফেনী, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া ও নওগাঁর পত্নীতলায় সমঝোতা স্মারক লঙ্ঘন করে এবং বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া ভারত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করেছিল। বিজিবি এবং জনগণের প্রতিবাদের মুখে তিন বিঘা করিডোর এবং নওগাঁ ও লালমনিরহাটের মোট পাঁচটি স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধে তারা বাধ্য হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘সীমান্তে আমাদের প্রচুর শক্তি রয়েছে। বিজিবির সঙ্গে জনগণও কঠোরভাবে প্রতিহত করছে। কোনো বিরূপ ঘটনা যাতে না ঘটে, তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় হাইকমিশনকে জানানো হবে।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম ও বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।